post

সুশীতল ছায়াতলে দুই দশক!

আব্দুল আউয়াল

০৭ জুলাই ২০২৩

সময়টা ২১ ফেব্রুয়ারি ’০৩। মাত্র এক মাস আগে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছি। বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাদরাসা। তাই সঙ্গত কারণে মাদরাসার হোস্টেলে থাকি। যেহেতু আমি আমার বাবার একমাত্র ছেলে সেহেতু তিনি কোনোমতেই আমাকে মাদরাসার হোস্টেলে রাখতে রাজি ছিলেন না। হোস্টেল থেকে মাদরাসার দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। আব্বু উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন এটা ভেবে যে, আমি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই কি-না? একা খাওয়া-দাওয়া করতে ও ঘুমোতে পারছি কি না? এরকম নানান চিন্তায় তিনি ২-১ দিন পরপর হোস্টেলে আসেন। এ দৃশ্য দেখে বড় ভাইয়েরা খুবই মজা করতেন আব্বুর সাথে আর টিপ্পনী কেটে বলতেন ‘চাচা খুব যদি পরান পুড়ে তাহলে বরফ দিয়ে ঠাণ্ডা করে নিয়েন।’ ঘটনাক্রমে পাশের গ্রামের ইউনুস ভাই এসে পরিচিত হন আমাদের সাথে। ইউনুস ভাইয়ের বাবা হলো ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং আব্বুর পরিচিত-জন। আবার ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হলেন নাসের কাকু। তারপর আব্বু আমাকেসহ ইউনুস ভাই ও ওনার ক্লাস মেটদের এক জায়গায় ডেকে বলেন- ওকে তোমাদের কাছে রেখে গেলাম, দেখে রেখ। কাকতালীয়ভাবে ওনারা আমার আন্টিদের ক্লাসমেইট! সেই হিসেবে ওনাদের খুব শ্রদ্ধাও করি। তাঁরাও আমাকে খুব স্নেহ করেন।

মাত্র ৩-৪ দিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি শিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সেদিন আবার মাদরাসাও খোলা। মাদরাসার প্রিন্সিপাল হুজুর ক্লাস করা বাদ দিয়ে এ প্রোগ্রামে ছাত্রদের অংশগ্রহণের অনুমতি দেননি! কিন্তু বড় ভাইয়েরা হুজুরের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অংশ নিয়ে মাগরিবের পর ফিরেছেন। প্রিন্সিপাল হুজুর প্রচণ্ড রেগে আছেন। এশার নামাজের পর হাজিরা হলো। যারা আসরের সময়ে হাজিরা দেয়নি তাদের দাঁড়াতে বললেন। প্রায় অর্ধ শতাধিক বড় ভাই দাঁড়িয়ে গেছেন। হুজুর বকা দিতে লাগলেন। এ সময় ১০ম শ্রেণির ইমরান ভাই (মাদরাসা উপশাখার সভাপতি) বললেন- ‘আপনি আমাদের খানা বন্ধ করেছেন মেনে নিয়েছি কিন্তু আপনি যে বাজে কথাগুলো বলছেন এটা অনুচিত, কারণ আপনি হয়তো জানেন সমাজের সবচেয়ে ভালো ছেলেরাই শিবির করে।’ বলে রাখি ইমরান ভাই ছাত্র হিসেবেও ছিলেন জিনিয়াস। শ্রেণিতে রোল দুই। প্রিন্সিপাল হুজুর তাঁর প্রতি-উত্তর শুনে হোস্টেল থেকে তাঁর নাম কেটে দিলেন এবং আগামী দিন জোহরের মধ্যে হোস্টেল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সভা শেষ করলেন। এ কথাগুলো অন্য ছাত্রদের ন্যায় আমার মনেও দাগ কেটেছে। প্রায় ৩০ মিনিট পর ভাইস প্রিন্সিপাল হুজুর ইমরান ভাইকে ডেকে হুজুরের সাথে মিলিয়ে দিলেন এবং দু’জনকে কোলাকুলি করালেন। ইমরান ভাইয়ের এই ছোট্ট উক্তির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সবাই একত্রে আলোচনা করতে লাগলাম। দেখা গেল মাদরাসার যে ভাইয়েরা শিবির করেন সত্যিই তারা অনেক মেধাবী, চরিত্রবান, নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন এবং মাদরাসার এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসেও অগ্রগামী। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরাও শিবির করবো। শুধু আমরা নই, উপস্থিত প্রায় সবাই। এটা আসহাবুল উখদুদের ঘটনার মতো অনেকটা। এর কিছুদিন পর মাদরাসার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রভাতফেরি দিয়ে শুরু হবে আর ২৩ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে শেষ হবে। এ উপলক্ষে প্রতি শ্রেণি থেকে স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হচ্ছে। আমিও আবেদন করলাম কিন্তু আমাদের শ্রেণির হাফেজদের প্রাধান্য দিয়ে আমাকে ছোট্ট বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি অনেক রিকুয়েস্ট করে নাম অন্তর্ভুক্ত করলাম। বাবু ভাই মাথায় হাত দিয়ে বললেন- হ্যাঁ তুমি থাকছো আর তোমার দায়িত্ব হলো পানি পান করানো। ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে প্রভাতফেরির র‍্যালির দায়িত্ব পালন করা দেখে মশিউর রহমান ভাই অ্যাপ্রিশিয়েট করলেন। মশিউর রহমান ভাই থানা প্রকাশনা সম্পাদক। আমিও ভাইকে সুযোগ নিয়ে বললাম, ভাই আমি শিবিরের সদস্য হবো। ভাই অনেকক্ষণ হেসে বললেন মিয়া আমিও তো এখনো সদস্য হইনি! আমি অনেকটা অবাক হলাম আর বললাম আপনি মিথ্যা বলছেন। না হলে আপনার বুকের লোগো কোথায় পেলেন? তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন শিবির করতে চাও? আমি বললাম, মাদরাসার মেধাবীরা সবাই শিবির করে তো, তাই। ভাই বললেন তোমার রোল কত? আমি বললাম ৬৩ (ভর্তি রোল)। ভাই বললেন ঠিক আছে তুমি প্রমাণ করো যে তুমি মেধাবী তাহলে পরে ভেবে দেখবো। আমার মাথায় এখন শুধু চিন্তা হচ্ছে কীভাবে প্রমাণ দেওয়া যায়, প্রথম সাময়িক পরীক্ষা তো আরও ২ মাস পর!

২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল! মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে গ গ্রুপের মেধা যাচাই প্রতিযোগিতায় যারা অংশ নিতে ইচ্ছুক তাদের মাঠের উত্তর পাশে বিজন কুমার মন্ডল স্যারের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ। আমার তো নাম লেখানো হয়নি আগে থেকে। এখন কী উপায়? দৌড়ে চলে গেলাম মশিউর রহমান ভাইয়ের কাছে- বললাম সুযোগ পেয়েছি ভাই, আপনি আমাকে একটু সহযোগিতা করুন প্লিজ! ভাই বললেন কীভাবে? বললাম আমি বিস্কুট দৌড় আর বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছি এখনো একটা সুযোগ আছে। একজন ছাত্র ৩টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে। আমাকে মেধা যাচাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিন বিজন স্যারকে বলে। মশিউর রহমান ভাই স্যারকে বলে সুযোগ করে দিলেন। এদিকে আমি তো সুযোগ পেয়ে বেজায় খুশি। ভাই বলতে লাগলেন- আমার মান রেখো আব্দুল আউয়াল। আমি বললাম এখানে পুরস্কার পাইলে তো আমি মেধাবী হিসেবে প্রমাণিত হবো, নাকি? ভাই বললেন হ্যাঁ। এবার আমি আরও আনন্দ পাচ্ছি আবার ভয়ও হচ্ছে পুরস্কার না পেলে তো সমর্থক হতে দেরি হয়ে যাবে। দুআ-দরূদ যা জানি পড়তে লাগলাম। প্রতিযোগিতা শুরু হলো। সময় মাত্র ৫ মিনিট! ঊরুর উপর রেখে লিখতে হচ্ছে, মন দুরু দুরু করছে! শরীর ঘামছে! কখন না জানি সময় শেষের বাঁশি বেজে যায়!

তাওহিদ স্যার বললেন, আব্দুল আউয়াল আগে শেষ করে জোরে দৌড়াও না হলে ঐ বড় ছেলেরা আগে চলে যাবে। স্যারের কথা শুনে একটু আগে শেষ করে জমা দিলাম। দুইদিন পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেদিনই ফলাফল ঘোষণা হবে। দ্বিতীয় দিন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। আমার বিষয়: বক্তৃতা। বিকেলে হওয়ার কথা, কিন্তু শুরু হলো ইশার পর। প্রতিযোগিতার মাঝামাঝি আসলেন সমাপনী অনুষ্ঠানের অতিথি হযরত মাওলানা গাজী আবু বকর সিদ্দিক। কারণ তিনি আগামীকাল থাকতে পারবেন না। আমার সিরিয়াল আবার শেষ দিকে। খুব ভয় হচ্ছে মঞ্চে উপস্থিত স্বনামধন্য সিরাত আলোচক! কী বলতে কী বলি। এ দিকে আমার শ্রেণি থেকে আমরা মাত্র দুইজন এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। আমাদের হাফেজ রহমতুল্লাহ ভাই বক্তব্য শেষ করতে পারলেন না। বন্ধুরা সবাই এবার আমাকে উৎসাহ জোগাতে লাগলো। আমার নাম ঘোষণা হলে তারা চিৎকার করতে লাগলো। বক্তব্য দিতে গিয়ে রীতিমতো কাঁপছি! উপস্থাপক বাবু ভাই এবং গাজী সাহেব দুই দিক থেকে ধরে রাখলেন। বাবু ভাই মাইক্রোফোন আমার মুখের কাছে ধরে রাখলেন। আমার বক্তৃতার মুখস্থ অংশ শেষ। এবার কী করি! তখন নিজের মতো করে বলা শুরু করছি সালাম, বরকত, রফিক, শফিকের মতো আমাদেরও দেশের জন্য শহীদ হতে হবে। গাজী সাহেব বললেন মাশা-আল্লাহ, বলতে থাকো। আমি আছি ভয় নাই। ভালো হচ্ছে। এদিকে সময় সঙ্কেত বেজে উঠলো। তখন শেষ করলাম ভাইস প্রিন্সিপাল হুজুরের প্রিয় গানের কলি দিয়ে- ইতিহাস থেকে মোরা জানলাম জানলাম জানলাম / মুক্তির পথ হলো ইসলাম।

বক্তব্য শেষ করার পর হুজুর পরিচয় করে দিলেন, ও হচ্ছে নাসের চেয়ারম্যানের ভাতিজা। মেহমান পকেট থেকে প্লাস্টিকের ১০ টাকার কয়েকটি নতুন নোট উপহার দিলেন। যা পুরস্কারের মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। গাজী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, শিবির করো? আমি বললাম, ভাইয়ারা ভর্তি নিচ্ছেন না! উল্লেখ্য শহীদ মাওলানা গাজী আবু বকর সিদ্দিক ছিলেন বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মংলা) আসনের এমপি পদপ্রার্থী। গাজী সাহেব বলে দিলেন ওকে দ্রুত যুক্ত করে নাও। পরের দিন (২৩ ফেব্রুয়ারি) পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান এরপর মাদরাসা ৭ দিন ছুটি। আমি যথারীতি ব্যাগ গুছিয়ে গেলাম অনুষ্ঠানে। যাতে দ্রুতই বাড়ি যাওয়া যায়। দুপুরের পরে মেধা যাচাই প্রতিযোগিতার পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা হলো। আলহামদুলিল্লাহ দ্বিতীয় নামটি ছিলো আমার। পুরস্কারপ্রাপ্তির আনন্দের চেয়ে শিবিরের সমর্থক হতে পারবো এ আনন্দই বেশি পাচ্ছিলাম। কিন্তু মাদরাসা ছুটি হচ্ছে আর আমি ব্যাগ গুছিয়ে এসেছি, তাই ভাইয়ারা বললেন বাড়ি থেকে ঘুরে আসো তারপর। বাড়ি গিয়ে ২টা পুরস্কার পাওয়ার গল্প বলার সময় যখন ‘শিবির’ নামটি উচ্চারণ করেছি, এই তো আর যাই কোথায়! মুহূর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে গেল। এক মিনিট আগেও আব্বু সবাইকে ডেকে বলছিলেন দেখো আমার আব্বু পুরস্কার পেয়েছে। তোমরা সবাই আব্বুর জন্য খাস করে দুআ করো, আরও কত কথা! কিন্তু এখন আব্বুর কড়া নির্দেশ, অনেক হয়েছে আর না। ফের যদি শুনেছি তুমি ওদের সাথে মিশেছ, তাহলে মাদরাসায় আর পড়া লাগবে না। সোজা বাড়ি চলে আসবা। ওসব করতে তোমাকে মাদরাসায় পাঠাইনি। এছাড়া শিবির সম্পর্কে বাজারে প্রচলিত সকল মিথ্যা অপবাদ দিতে লাগলেন। এরপর ১ মার্চ মাদরাসায় ফিরে গেলেও ভাইদের সাথে দূরত্ব রেখে চলছি। একদিন পর সোনাতুনিয়া মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল, সেখানে অতিথি গাজী সাহেব। আমরা হোস্টেল থেকে কয়েকজন গেছি মাহফিল শুনতে। মাহফিলে রঙ্গিলা রাসুল বই লেখার প্রতিবাদে আহমদ আর মুহাম্মদ এর ঘটনা। রাসূলের সা. সাথে ছোট্ট মাআজ আর মুয়াজ এর যুদ্ধে যাবার ঘটনা বলে সবাইকে কাঁদালেন। রাত বারোটা বেজে গেল! তাই আমরা ফিরে এলাম হোস্টেলে। ফ্রেশ হয়ে মাত্র ঘুমোতে গেছি, এমন সময় বোম্ব ব্লাস্ট হলো আমার রুম থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে। পরপর কয়েকটি আওয়াজ! এরপর মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার শব্দ। রাত তলজন অনেক, এ জন্য আমরা কেউই আর বের হইনি। সকালে শুনতে পেলাম গাজী সাহেব ও তাঁর সঙ্গী সুলতান মল্লিক শহীদ হয়েছেন। ৪ মার্চ জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছে। প্রতিটি জানাজায় মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। ফয়লাহাট স্কুল মাঠে নেতৃবৃন্দের জানাজা পূর্ব আলোচনা আমাকে আরও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এর কিছুদিন পরে আমার নিজের কাছেও খারাপ লাগছে, এখনও আমি শিবির করা শুরু করিনি! গাজী সাহেব শহীদ হয়ে গেলেন।

আমি শিবিরের সমর্থক না হয়েও বই পড়া শুরু করছি পাঠাগার থেকে বই নিয়ে। ঈমানের হাকিকত, নামাজ রোজার হাকিকত, এসো আলোর পথে, মুক্তির পয়গাম ইত্যাদি। সাইমুম সিরিজের কয়েক খণ্ড, কারাগারে রাতদিন বইগুলো শেষ করে বই পড়ার প্রতি আমার অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি হলো। কয়েক মাস পর একটি সাধারণ সভায় আমাকে হাজির করা হলো। আমাকে জানানো হয়নি এটা শিবিরের প্রোগ্রাম। আমি শুধু জানতাম সব শ্রেণির টপ থ্রি স্টুডেন্ট সেখানে থাকবে। এদিকে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আমার রোল হলো তিন। সে হিসেবে আমিও ডেলিগেট। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির প্রশ্নোত্তর পর্ব আমাদের মনের সুপ্ত সন্দেহ দূর করতে লাগলো। পরিশেষে শহীদ আব্দুল মালেক ভাইসহ শিবিরের কয়েকজন শহীদ ভাইয়ের জীবনাচরণ নিয়ে আলোচনা করলেন যা আমাদের আরও আবেগাপ্লুত করেছিলো। এ পর্যায়ে ঘোষক ঘোষণা করলেন আপনাদের কাছে সমর্থক ফরম যাচ্ছে যার ইচ্ছা পূরণ করবেন। আর কেউ পূরণ না করলেও সমস্যা নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে ফরম চলে এলো! কিন্তু একদিকে ভালো লাগা অন্যদিকে আব্বুর বাধা। তারপর মেহমানকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করলাম ‘আব্বুর বাধা থাকলেও শিবির করা ঠিক হবে?’ মেহমান উত্তর দিলেন হ্যাঁ। তিনি আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে উত্তর দিলেন আর শেষে নসিহত করলেন তোমার কর্মকাণ্ড দিয়ে তোমার বাবাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তিনি যেন বুঝতে পারেন শিবির করে আমার ছেলে আরো দায়িত্ববান হয়েছে। এরপর ফরম পূরণ করে একাংশ জমা দিয়ে অপর অংশ নিয়ে এসে আলমারির মধ্যে সযত্নে রেখে দিলাম। আর পরিবারে সবসময় সতর্কতার সাথে থাকতাম যাতে আমার কোনো ভুলের কারণে শিবির সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য না করে। ঘর পরিষ্কার রাখা, আব্বুর সাথে ঘরে যাওয়া, মায়ের কাজে সহযোগিতা, বাজারে যাওয়া, নিজের কাপড় নিজেই কাচা। এগুলো দেখে আব্বু-আম্মু রীতিমতো অবাক হচ্ছেন। একদিন বাজার থেকে এসে আব্বুর কাছে ভাউচারসহ ৫২ টাকা ফেরত দিয়েছি। আসার পর দাদি বললেন তুমি এ টাকা দিয়ে খাবার কিনলে না কেন? আমি বললাম শিবির আমাকে শিখিয়েছে আব্বুর কাছ থেকে না বলে টাকা নেওয়া পাপ। সকাল বেলায় উচ্চস্বরে তাফসির পড়ি আর প্রতিবেশী চাচি-দাদিরা এসে বলে দাদু আমাদের একটু বুঝিয়ে বলো। তারা বলে এরকম করে কুরআন তো আমরা পড়ি না। আমি বললাম, শিবির তো আমাকে প্রতিদিন এভাবে বুঝে বুঝে কুরআন হাদিস পড়তে শিখিয়েছে। তখন তারা বলে- তাহলে তো শিবির অনেক ভালো সংগঠন। বাধা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করলো এবং এক পর্যায়ে সহযোগিতাও পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এ সুশীতল ছায়াতলে দুই দশক অতিবাহিত হলো। আল্লাহ যেন আমরণ আমাকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন। 

লেখক : প্ল্যানিং সম্পাদক

আপনার মন্তব্য লিখুন

Hm Nizam uddin

- 4 months ago

অনেক ভালো লাগলো আল্লাহ আমাদের ইসলামী আন্দোলন এর জন্য কবুল করুন। আমীন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির