post

মহান স্বাধীনতা ও জাতির প্রত্যাশা

ড. এম এ সবুর

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ এক অনন্য মাস। ১৯৭১ সালের এ মাসেই তৎকালীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও আক্রমণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ-সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। আর এ দেশের মুক্তিকামী মানুষেরা পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধিকার অর্জনের শপথ নিয়েছিলেন। ’৭১-এর মার্চের প্রতিটি দিন ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা-দুর্দশা, সংগ্রাম-সঙ্ঘাতের। এসব কারণে ঐতিহাসিক বিবেচনায় ’৭১-এর মার্চের প্রত্যেকটি দিনই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও ঘটনাবহুল। তাই মার্চ মাস জাতির সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত, বেদনাবিধুর, আনন্দময় এবং গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৭১ এর মার্চে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হলেও এর প্রেক্ষাপট বেশ দীর্ঘ সময়ের। এ দেশের মানুষের মুক্তিসংগ্রাম দীর্ঘদিনের। ১৭৫৭ সালে পলাশীর ষড়যন্ত্রে হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য তারা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে শহীদ তিতুমীর-সূর্যসেনসহ অনেকেই সংগ্রাম-আত্মত্যাগ করেছেন। তাদের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এবং মুক্তির অন্বেষায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শোষণের নাগপাশ থেকে পূর্ববাংলা স্বাধীন হয়ে পূর্বপাকিস্তান নাম ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ মুক্তির আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপরিণামদর্শী রাজনীতি ও শোষণনীতি পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালিদের হতাশ ও বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার আন্দোলন অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। সর্বোপরি ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার মোহে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। অধিকন্তু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। যার ফলে ২৬ মার্চে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ডাক আসে। আর মুক্তির আশায় এ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত জনতা সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে গ্রামের কৃষক, শহুরে শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। শিল্পী-সাহিত্যিক, প্রবাসী-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ত্যাগে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। লক্ষ্য ছিল অনেক বিস্তৃত, সেটা ছিল জনগণের মুক্তি অর্জন। স্বাধীনতা বলতে বোঝায় রাজনৈতিক মুক্তি। আর মুক্তি বলতে বোঝায় সার্বিক মুক্তি, যেমন রাজনৈতিক মুক্তি তেমনি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তিও। মুক্তি ও স্বাধীনতা পারস্পরিক সম্পর্কিত এবং মুক্তিই অগ্রগণ্য। এ জন্য ’৭১-এর ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উচ্চারিত হয়েছিল ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মুক্তি অনেক গভীর এবং ব্যাপক ব্যাপার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক মুক্তি অর্জিত হয়নি। জনগণ সংগ্রাম করেছে, কিন্তু মুক্তি পায়নি। উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমেনি। তাই মুক্তির সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলছে। তবে আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হলে, দেশের মুষ্টিমেয় লোকের উন্নয়নকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিলে বৈষম্য দূর হবে এবং দেশের সার্বিক মুক্তি ত্বরান্বিত হবে। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ইতোমধ্যেই ৪৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ে অনেক জাতি অনেক উন্নতি-সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ মার্চে আমাদেরও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশের প্রয়োজন আছে। এতে দেখা যাবে প্রাপ্তির সাথে অপ্রাপ্তির বেদনাও আছে। স্বাধীনতার এ চার দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক গোলযোগ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, দুর্নীতি-নেতৃত্বের দুর্বলতাসহ বিভিন্ন রকমের সমস্যার কারণে বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত উন্নতি না হলেও উন্নয়নের পথেই চলছে। আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি খাতের উৎপাদন, তৈরী পোশাক রফতানি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। আর এসবের মূলে রয়েছে আমাদের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও সত্তর দশকে দেশটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। ’৭৪-এ দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র আমাদের অনেকেরই দেখা। কিন্তু চার দশক পর বর্তমানের বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয় না, খাদ্যাভাবে মানুষও মারা যায় না। ‘মঙ্গা’ শব্দটিও দেশ থেকে প্রায় নির্বাসিত। অধিকন্তু বাংলাদেশ এখন সত্তর দশকের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অভিযোগ থেকেও মুক্ত। দেশের অর্থনীতির নবযাত্রায় গার্মেন্টস শিল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আমাদের তৈরী পোশাক বিশ্ববাজারে অনন্য। দেশের অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ পোশাকতৈরি শিল্পে নিয়োজিত। যাদের পরিশ্রমে আয় হয় দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় শক্তি প্রবাসী জনশক্তি। আগে জনসংখ্যাকে বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও বর্তমানে জনশক্তি অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল করতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স অনন্য ভূমিকা পালন করছে। আমাদের দেশের প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থের (রেমিট্যান্স) বার্ষিক পরিমাণ ৪০০০০ কোটি টাকারও ওপরে, যা আমাদের জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি এবং রফতানি আয়ের প্রায় অর্ধেক ছাড়িয়ে গেছে। তবে দক্ষ জনশক্তি হলে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়বে। আমাদের জাতীয় জীবনে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও অনেকে বেড়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই যখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১০০ ডলার, বর্তমানে তা পৌঁছেছে ২ হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। আর দেশে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শতকরা হার ৬ মাত্রার ওপওে, যা গত কয়েক বছর ধরে চলছে। অথচ সত্তরের দশকে এ হার ছিল মাত্র ১ শতাংশে। অর্থনৈতিক এ প্রবৃদ্ধি দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের দারিদ্র্য হার ২৫ শতাংশের নিচে নেমেছে- যা চার দশক আগে ছিল ৭০ শতাংশেরও ওপরে। তবে দারিদ্র্যের হার কমলেও ধনবৈষম্য ব্যাপক হারে বাড়ছে। আকাশচুম্বী ভবনের পাশাপাশি বস্তির সংখ্যাও বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার কমাতে সহ¯্রাব্দ উন্নয়নের (এমডিজি) লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ সক্ষম হয়েছে। তবে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা অপূর্ণই থাকছে। অন্য দিকে মজুদকৃত গ্যাসের পরিমাণ ফুরিয়ে আসছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ দেশের অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছে তা আমাদের আশান্বিত করে। দেশের মানুষ সৃজনশীলতা দিয়ে অনুন্নত প্রযুক্তি, কম সুযোগ-সুবিধা এবং অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে সচল করেছে। তবে সর্বস্তরের দুর্নীতি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ শিক্ষায় ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। দেশে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগে পাড়াগাঁয়ে চিঠিপত্র পড়ার লোক খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর, অথচ এখন প্রায় প্রতি বাড়িতে স্নাতক পাস লোক পাওয়া সহজ। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পরীক্ষায় পাসের হার অনেক বেড়েছে। শতভাগ পাসের লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে শিক্ষার মান অনেক নিচে নামানো হয়েছে। এ কারণে শিক্ষা মানবিক-নৈতিক উৎকর্ষের বিকাশ না ঘটিয়ে শুধু পড়ালেখায় ও সনদ অর্জনের মধ্যেই সীমিত থাকছে। তবে শিক্ষার সাথে নৈতিকতা ও মানবতা যোগ হলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে স্বাস্থ্য খাতেও বাংলাদেশ অনেক উন্নতি লাভ করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। পোলিও রোগ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। কলেরাসহ বিভিন্ন মহামারী রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে আর শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার অনেক কমেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে। এ কারণে স্বাধীনতা অর্জনকালের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৬ হার বর্তমানে ১.৩৭ এ নেমে এসেছে। আমাদের তরুণরা ইতোমধ্যে ক্রিকেটে বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। তারা ক্রিকেটবিশ্বের বিভিন্ন রেকর্ড ভাঙছে ও গড়ছে। এমনকি বিশ্বসেরা ক্রিকেট খেলোয়াড় তালিকায় বাংলাদেশী খেলোয়াড়ের নাম শীর্ষে থাকছে। খেলাধুলায় ছেলেদের সাথে মেয়েরাও এগিয়ে চলছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলেও স্বাধীনতার চার দশক পরও গণতন্ত্র অস্ফুটই রয়েছে। সামরিক শাসনের দীর্ঘ পরিক্রমা, স্বৈরতান্ত্রিকতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের পথ বন্ধুর করেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অনাস্থা-প্রতিহিংসায় বাংলাদেশের রাজনীতি অসহিষ্ণু ও কলুষিত হয়েছে। অধিকন্তু সন্ত্রাস-দুর্নীতির কারণে রাজনীতির প্রতি জনগণের বিরূপ ধারণা জন্মেছে। তবে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রিকশাচালক, মাঠের কৃষক কিংবা কারখানার শ্রমিক সবাই এখন রাজনীতিসচেতন হয়েছে। তবে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম-খুন, অপহরণ-ধর্ষণ, বিরুদ্ধমত দমন আমাদের স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করছে। আর আধিপত্যবাদীদের লোলুপ দৃষ্টি আমাদের শঙ্কিত করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে প্রচার ও গণমাধ্যমের যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ করা যায়। স্বাধীনতাকালে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি পত্রিকা ছিল। এ সময় মাত্র একটি টিভি চ্যানেল ও একটি বেতার ছিল। তৎকালে শহরের মানুষ ছাড়া গ্রামের মানুষ পত্রিকা দেখতো না বললেই চলে। বর্তমানে শতাধিক দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের সব খবর মানুষের হাতের নাগালে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও তো আছেই। জনগণের কাছে ‘সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ’ পৌঁছানোর তীব্র প্রতিযোগিতা চলে প্রচারমাধ্যমগুলোতে। এসব কারণে দেশের মানুষ অনেক সজাগ-সচেতন হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক কম হলেও তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ বেশ অগ্রসর হয়েছে। এ দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। সরকারি উদ্যোগে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে সড়ক ও পরিবহন যোগাযোগেও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। পাড়াগাঁয়ের অধিকাংশ রাস্তা পাকা হয়েছে। যমুনা সেতু, লালন শাহ সেতু, মেঘনা সেতু, ভৈরব সেতুসহ ছোট-বড় অসংখ্য সেতু দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থাকে উন্নত করেছে। রাজধানীতে অনেক উড়াল সেতু নির্মিত হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজও এগিয়েছে। আর দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর অগ্রগতিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণসহ সমগ্র জাতি আশান্বিত হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে সংস্কৃতির বেশ পরিবর্তন ঘটেছে। এতে দেশীয় সংস্কৃতির ওপর ভিনদেশী ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তার করেছে। যাতে আমাদের দেশের মানুষের নৈতিক-চরিত্রের অবক্ষয় ঘটছে এবং পারিবারিক ও সামাজিক প্রথায় ঘুণ ধরেছে। এর কুপ্রভাবে একদিকে শিশুরা মাতৃক্রোড়েও অনিরাপদ থাকছে, অন্য দিকে বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য বৃদ্ধাশ্রম বাড়ছে। অধিকন্তু মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে অন্তরের কদর্যও বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় অর্ধশত বছর পর দেখা যায়, বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেও মানুষের মুক্তি মেলেনি। দেশ এগিয়ে চললেও এখনও কাক্সিক্ষতপর্যায়ে পৌঁছেনি এবং দেশের অর্থবহ স্বাধীনতাও অর্জিত হয়নি। তবে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে সরকারকে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এ ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় সমস্যা-সমাধানের পথ নির্ণয় করা যাবে। অধিকন্তু সংঘাত-সংঘর্ষ পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনকল্যাণে নিয়োজিত হতে হবে। মহান স্বাধীনতার মাসে জাতি এসব প্রত্যাশা-ই করে। লেখক : আহবায়ক, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব নন-গভর্নমেন্ট টিচার্স (ড্যাঙ্গট)

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির