পৃথিবীর শুরু থেকে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চলমান এবং এই নিয়ম চিরন্তন। সত্য যতদিন থাকবে তার পাশাপাশি মিথ্যাও থাকবে স্বগৌরবে। এই পৃথিবীর আদি মানব হযরত আদম (আ.)কে পাঠানোর পূর্বেই তাঁর সাথে শত্রুতা পোষণকারী দুশমন, মিথ্যার প্রতীক, ইবলিস নামক শয়তানকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জান্নাতে থাকাকালীন সত্যের প্রতীক হিসাবে হযরত আদম (আ.) এবং তাঁর বিপরীতে মিথ্যার প্রতীক শয়তান কাজ করেছে। অদ্যবধি এই প্রক্রিয়া চালু আছে। যেখানেই সত্য কিছু থাকে সেখানেই মিথ্যার বেসাতি।
সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই ১৯৮৫ সালের ১১ মে ঘটে গিয়েছিল এক মর্মান্তিক হত্যাকা-। এই ঘটনাটি সারাবিশ্বে মুসলমানদের মনে এখনো গেঁথে রয়েছে। একদিকে ছিল কুরআন প্রেমিক জনগণ আর একদিকে ছিল কুরআন বিদ্বেষী মিথ্যার প্রলোভন সৃষ্টিকারী অসৎ শাসকগোষ্ঠী।
১৯৮৫ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের ২ জন উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দু নাগরিক পদ্মপল চোপরা এবং শীতল সিং ভারতের হাইকোর্টে কুরআনে উল্লেখিত সুরা বাকারার ১৯১ নং আয়াত এবং সুরা তাওবার ৩১ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা করে। এই ২ আয়াতে কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে বলে কুরআনের কপি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করে। হাইকোর্টের বিচারপতি মিসেস পদ্মা খাস্তগীর ১২ এপিল কোন যাচাই বাছাই ছাড়া মামলা গ্রহণ করে এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠে তাদের অন্তরে। মুসলমানরা তাদের ইসলামি জীবন বিধানকে রক্ষা করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পৃথিবীর বহুদেশে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। এরই অংশ হিসাবে বাংলাদেশেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
১০ মে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ গুলি, রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে কুরআন প্রেমিক জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পরের দিন ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে অবস্থিত ঈদগাহ ময়দানে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কামিল মাদ্রাসার তৎকালিন প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা হুসাইন আহমেদ। কিন্তু ঐ স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ১১ মে সকালে মাওলানা হুসাইন আহমেদকে তৎকালীন এসপি আওলাদ হোসেন তাঁর অফিসে ডেকে বিক্ষোভ না করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এদিকে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে খন্ড খ- মিছিল নিয়ে কুরআন প্রেমিক জনতা ঈদগাহ ময়দানে জমায়েত হতে থাকে। একদিকে প্রশাসনের চাপ বিক্ষোভ না করার জন্য অন্যদিকে মুমিন জনতার স্মতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে যোগদান।
সবশেষে উৎসুুক জনতাকে সামাল দেওয়া এবং ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে নিমতলাস্থ ফকিরপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের তৎকালিন ইমাম ক্বারী ইসারুল হক প্রশাসনের কাছে মোনাজাত করে চলে যাওয়ার অনুমতি চান। কিন্তু তাতেও তারা রাজি না হয়ে খুনি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্ল্যা উপস্থিত মুসলমানদের গালি দিতে থাকে।
দোয়া করতেও যখন প্রশাসন বাধা দিল তখন কুরআন প্রেমিক জনতা সকল বাধা উপেক্ষা করে দোয়া শুরু করে। এই অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট গুলি করার আদেশ দেয়। জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন ১৫ বছরের কিশোর স্কুল পড়–য়া কর্মী আব্দুল মতিন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আরও একজন শহীদ হন। একে একে শহীদ হন ৫ জন ছাত্র শীষ মোহাম্মদ, আব্দুল মতিন, সেলিম, শিহাবুদ্দীন এবং রাশিদুল হক। কুরআনের এ মিছিলে অংশ নিয়ে আরও শহীদ হন কৃষক অলতাফুর রহমান সবুর, রেলশ্রমিক নজরুল ইসলাম এবং রিক্সাচালক মোক্তার হোসেন। আহত হয় ছাত্র কৃষক শ্রমিকসহ নাম না জানা অসংখ্য জনতা। আহত ভাইদের চিকিৎসা করার জন্য থানার সামনে দিয়ে যখন হাসপাতাল নেওয়া হচ্ছিল পাষ- প্রশাসন গাড়ী থামিয়ে আবারও হামলা করে। তাদের সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেখে সেদিন জনতা আরও অবাক হয়েছিল।
পরের দিন ১৩ মে হরতাল আহবান করা হয়। লিফলেট তৈরি করে পুরো এলাকায় বিলি করা হয়। পুরো জেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করা হয় সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে। ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বেশ কিছু কর্মসূচী পালন করে। ১৪ মে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট এবং ১৫ মে প্রতিবাদ দিবসের কর্মসূচী পালন করে। বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটা আলোড়ন তৈরি হয়। জনমত তৈরি হয় কুরআনের পক্ষে। ফলশ্রুতিতে ১৩ মে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বি. সি. বাসক বামনের আদালতে স্থানান্তরিত হয়। তিনি উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেন। রচিত হয় এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, প্রতিষ্ঠিত হয় কুরআনের মর্যাদা। বিজয় অর্জন করে কুরআন প্রেমিক জনতা।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত পবিত্র জীবন বিধান। জীবন দিয়ে হলেও মুসলমানরা এটা রক্ষা করবে এটা সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল। আর কুরআন সংরক্ষনের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিয়েছেন। তিনি বলেন- “নিশ্চয়ই কুরআন আমিই নাযিল করেছি আর এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আমারই” (সুরা হিজর-০৯)। আর যাঁরা এ কুরআনের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হলেন তাঁরা আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক সম্মানিত। কুরআনের ঘোষণা- “যারা আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে তাদেরকে তোমরা মৃত বলোনা বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারনা” (সুরা বাকারা- ১৫৪)।
অন্য আর এক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেন-“যারা আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে তাদেরকে তোমরা মৃত বলনা বরং তারা জীবিত, তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারো না” (সুরা বাকারা : ১৫৪ )। সেজন্য যারা শহীদ হন তাঁরা আল্লাহর মেহমান। তাঁরা জান্নাতের পাখি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সুতরাং তাঁদের কোন চিন্তা নেই।
যুগে যুগে বাতিল শক্তি কুরআন প্রেমিকদের প্রতি হামলা করে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তারা তা পারেনি। তাদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা। তাঁর ওয়াদা- “এ কাফেররা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, অথচ আল্লাহর ফয়সালা হল তিনি তাঁর নূরকে প্রজ্জ্বলিত করবেনই” (সুরা সফ : ৮)। একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং কুরআনিক ভূখ- উপহার দেওয়ার জন্য কিছু মানুষকে জীবন দিতে হবে। কিছু মানুষ আহত হবেন, পঙ্গু হবেন এগুলোই কুরআনের সুন্নাত। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রত্যেক নবী রাসুলকে পরীক্ষা করেছেন, বাছাই করে নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমান এনেছি এই কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে ? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। (সুরা আনকাবুত : ২-৩)
একইভাবে সুরা বাকারার ২১৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-“ তোমরা কি মনে করেছো, এমনিতেই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের আগে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যা কিছু নেমে এসেছিল এখনও তোমাদের ওপর সেসব নেমে আসেনি। তাদের ওপর নেমে এসেছিল কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মুসিবত, তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি সমকালীন রসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? তখন তাদেরকে এই বলে সান্তনা দেয়া হয়েছিল, অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। ”
আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে অনেকভাবে পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিয়ে তিনি তাঁর বান্দাকে বাছাই করে পুরস্কৃত করতে চান। বদর যুদ্ধে সাহাবীগণ শহীদ হওয়ার পরে অনেকে তাদের পরিবারকে হতাশার বাণী শুনাচ্ছিল। তখনই তিনি বলেন- “আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর কওে তাদেরকে সুসংবাদ দাও” (সুরা বাকারা : ১৫৫)।
ইসলামি তথা কুরআনিক আন্দোলনের কর্মীরা পথ চলে অকুতোভয়। এরা কোন রক্ত চক্ষুকে ভয় পায় না। কোন বাতিল শক্তির কাছে মাথা নত করে না। কোন কারণে যুদ্ধে পরাজিত হলে এটাকে পরীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করে। আর এর মধ্যে আছে সফলতা। ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হলে আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করে সান্তনা দেন। তিনি বলেন- “মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না। তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। এখন যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে তাহলে এর আগে এমনি ধরনের আঘাত লেগেছে তোমাদের বিরোধী পক্ষের গায়েও। এটাতো কালের উত্থান-পতন, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি। এ সময় এবং অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তাদেরকে বাছাই করে নিতে চান, যারা যথার্থ (সত্য ও ন্যায়ের) সাক্ষী হবে। কেননা জালেমদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না ” (সুরা ইমরান ১৩৯-১৪০)।
১৯৮৫ সালের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই ঘটনা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কুরআন প্রিয় জনতাকে জাগ্রত করেছে। ফেরত দিয়েছে তাদের হারানো ঐতিহ্য এবং স্পন্দন। কুরআনের জন্য কিভাবে জীবন দিতে হয় সেটা সেদিন তৌহিদি জনতা দেখিয়ে দিয়েছে। যেই মাটিতে কুরআনের জন্য রক্ত ঝরেছে সেই মাটি ইসলামের জন্য বেশী উর্বর হয়েছে। সেই এলাকার জনগণ কুরআন প্রেমিক হয়েছে। সুতরাং বাতিল শক্তি হামলা করে কখনও মুসলামানদের মন ভেঙে দিতে পারে না।
কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা তো আমাদের জান ও মাল বিক্রি করে দিয়েছি আল্লাহর নিকট। সুতরাং আমদের জীবন পরিচালিত হবে তার মর্জি মতে তথা কুরআনের বিধান অনুযায়ী। সুুরা তাওবার ১১১ নং আয়াতে সেই চুক্তিই সম্পন্ন হয়েছে- “প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সেজন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য। ”
নবী রাসুলদের (সা.) শিক্ষা এবং সাহাবীদের ইতিহাস কখনও বাতিল শক্তির নিকট মাথা নোয়াবার নয়। মুমিনগণ সবসময় মাথা উঁচু করে রাখে, প্রয়োজনে শহীদ হয়। কারণ আল্লাহ তায়ালার নিকট শাহাদাতের মর্যাদা অপররিসীম। রাসুল (সা.) হাদিসে বর্ণনা করেন- “শাহাদাতের মৃত্যুতে এত মজা যে, একজন শহীদ মৃত্যুবরণ করার পরে আবারো দুনিয়াতে আসতে চায় এবং শহীদ হতে চায়।”
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এত বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেই সমাবেশে গুলি চালানোর আদেশদাতা খুনি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্ল্যার কোন বিচার হয়নি। এমনকি তাকে প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি একদিন তার বিচার হবেই। এ দুনিয়াতে বেঁচে গেলেও কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যেদিন তিনি ছাড়া কোন বিচারক থাকবেনা।
প্রতি বছর ১১ মে আসলে আমাদের হৃদয় মাঝে নাড়া দিয়ে যায় এক অনন্য অনুভূতি। জাগিয়ে দিয়ে যায় সেই চেতনা যাতে করে নতুন উদ্যমে ইকামাতে দ্বীনের কাজ করার আগ্রহ পাওয়া যায়। প্রতি বছর এই দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পালিত হয়। তবে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার সেই সুযোগটুকুও দিচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই নিমতলাস্থ ঈদগাহ ময়দান, পৌর পার্কের সেই শিহরণ তৈরি করা সমাবেশ সত্যিই আমাদের আলোড়িত করে।
অতীব ভারাক্রান্ত মন নিয়ে স্মরণ করতে হয় ২০১৫ সালের ১১ মে কুরআন দিবসের সেই রাত। যেদিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সাবেক আমীর, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, সাবেক সফল মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে মিথ্যা মামলার ওপর ভিত্তি করে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করা হয়। সেদিন থেকে কুরআন দিবস আরও বেশী মহিমান্বিত হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন বইয়ে মাওলানা নিজামী (র:) শাহাদাত আলান্নাস সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি নিজের জীবনেই তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ।
একজন মুসলমান হিসাবে নিজের জীবনকে কুরআনের শিক্ষানুযায়ী সাজাতে হবে। নিজেকে একজন জান্নাতি মানুষ হিসাবে গড়তে পারলেই সমাজ ও দেশ গড়া সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “ বল, আল্লাহর রঙ ধারণ করো! আর কার রঙ তার চেয়ে ভালো? আমরা তো তাঁরই ইবাদাতকারী।” (সুরা বাকারা : ১৩৮)। আর এই আল্লাহর রঙ ধারণ করতে হবে কুরআন থেকে । তাঁর ভাষায়- রসূল (সা.) যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” (সুরা হাশর : ৭) কুরআন ও হাদিসের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, একদিন সত্য বিজয়ী হবে এবং মিথ্যা পরাজিত হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল্লাহর এই জমিনে কুরআনের সমাজ একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আর ঘোষণা করে দাও, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই কথা।” (সুরা বনী ইসরাইল : ৮১)।
১১ মে কুরআন দিবস তখনই সফল ও স্বার্থক হবে যখন সেই কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। সমাজে থাকবেনা কোন রাহাজানি, হানাহানি, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম। দুর্নীতি দূরাচার, দুঃশাসন মুক্ত একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ এবং দেশ গড়াই এ দিবসের প্রতিজ্ঞা। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন দিবসে শহীদদের জান্নাতের উচ্চতম মর্যাদা দান করুন। আহত পঙ্গু ভাইদের সুস্থতা ও বারাকাহ দান করুন। আর আমাদের সবাইকে কুরআন প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার তৌফিক দিন। আমীন। লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন