post

ঈমানী পরীক্ষার অনুপম দৃষ্টান্ত

০৩ অক্টোবর ২০১২

২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কালোদিবস। দিনটি জাতির জীবনে এক রক্তভেজা ইতিহাসের জন্ম দিয়ে গেল। এই ইতিহাস এতই বেদনার যে তা কখনো ভুলবার নয়, মুছবারও নয়; বরং চির অমলিন এক স্মৃতিজাগানিয়া হৃৎকম্পন! বিশ্বের ইতিহাসে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। হিটলার, মুসোলিনী ও স্টালিনরা হত্যা করেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। এসব নৃশংস হত্যার পরিসংখ্যান হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন ময়দানের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে নিঃসন্দেহে হিটলাররা লজ্জিত হতো। কারণ তারা মানুষ হত্যার পর লাশের উপর উঠে “নৃত্যোল্লাস” করার মতো পাশবিকতা প্রদর্শন করেননি। অথচ ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশে কী ঘটেছিল তা দেশীয় মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষ যেমন প্রত্যক্ষ করেছিল তেমনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কল্যাণে সমগ্র বিশ্বও তা অবলোকন করেছিল। সেদিন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর মানুষ। আর নিদারুণভাবে কলঙ্কিত হয়েছিল মানবতা। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মত পার্থক্যকে কেন্দ্র করে এমন পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যার দৃশ্য এর আগে কখনো কোথাও দেখা যায়নি। ২৮ অক্টোবর জাহেলিয়াতের হিংস্র থাবার ফাঁদে যাঁদের জীবন খসে গিয়েছে তাঁরা আর কোনো দিন ফিরে আসবেন না সত্য, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী ৬টি লাশের বিনিময়ে মহান রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের জমিনে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের পরাজয় ঘটিয়ে দীনের বিজয় দান করেছেন। এদেশের মানুষ নতুন করে চিনতে পেরেছে সত্য মিথ্যার দল কোন্টি। বহু মানুষের বিবেকের দরজা খুলে গিয়েছে, অনেকের চেতনায় লেগেছে আঘাত। সারা বিশ্বে লগি-বৈঠার উন্মত্ত আক্রমণের আলোচনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই নিহতদের পরিবারসহ সারা দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হবে এবং নরপশুরা যথাযথ শাস্তি পাবে। আর তার ফলে হয়তো মানবতার ইতিহাস থেকে কালো একটি অধ্যায় মুছে ফেলা সম্ভব হবে। কিন্তু এর বিপরীতে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতায় আরোহণের পরপরই নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা মামলাগুলো একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আরও নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়ে বরং ভিকটিম দলের নেতাকর্মীদের নামে করা মিথ্যা ও সাজানো মামলা সচল রাখা হয়েছে। কী নিষ্ঠুর পরিহাস! ২৮ অক্টোবরসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্যদিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সময়ের অনিবার্য দাবি। অন্যথায় সরকারকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। কারণ, আওয়ামী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুধুমাত্র প্রতিপক্ষকেই ঘায়েল করছে না বরং বিগত ৩৩ মাসে তাদের হাতে তাদের নেতাকর্মীই নিহত হয়েছে অসংখ্য। আজকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের অপরাজনীতির কারণে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য এবং কলুষিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষক লাঞ্ছনা, ভর্তি-বাণিজ্য, সিট-বাণিজ্য, টেন্ডার ও চাঁদাবাজি আজ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর সরকারও এ সকল সমস্যা এবং জনদুর্ভোগগুলো সমাধানের পরিবর্তে এক ধরনের গ্রেট গেইমে নিয়োজিত। যার অংশ হিসেবে যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, হয়রানি, গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার শেরে বাংলা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষকের রাসূল (সা) সম্পর্কে কটূক্তির প্রশ্রয়দান, যা দেশের আপামর জনসাধারণের চিন্তা-চেতনা, ঈমান-আকিদা ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। বেআইনিভাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা অজুহাতে এবং বিনা অভিযোগে গ্রেফতার করে সরকার যদি এটিকে ইসলামী আন্দোলন নির্মূলের টেস্ট কেস হিসেবে নিয়ে থাকেন তবে এটিও জেনে রাখা উচিত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীবাহিনী এই ষড়যন্ত্রকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে। সরকারের জানা উচিত দেশের মানুষের চিন্তার বিপরীতে গিয়ে কোন স্বৈরশাসকই বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি, আজকের তিউনিশিয়ার জয়নুল আবেদীন বেন আলী, মিশরের হোসনি মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফীর চরম পরিণতি তারই প্রমাণ বহন করে। দুনিয়ার কোনো শাসক যতটুকুই ঔদ্ধত্য প্রকাশ করুক কিন্তু আল্লাহর সীমাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা বা শক্তি রাখেন না। সুতরাং আজকে রাজনৈতিক বিবেচনায় যাই করা হোক না কেন একদিন অবশ্যই তাদের জনতার আদালতে এবং আল্লাহর আদালতে হাজির হতেই হবে। জুলুম নির্যাতন করে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে এ আন্দোলের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দেয়া ইতঃপূর্বে যেমন কোনো জালেম অথবা ইসলামবিরোধী শক্তির দ্বারা সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না, বরং জুলুম, নির্যাতন এবং ঈমানী পরীক্ষার এই শাশ্বত কঠিন পথ ধরে অবধারিত সোনালি সূর্য একদিন উদিত হবেই ইনশাআল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির