post

আমাদের অন্তর যেন মরে না যায়

আলী আহমাদ মাবরুর

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সহিহ আল তিরমিজি এবং সুনানে আন নাসাঈতে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল সা. আল্লাহর কাছে এমন একটি অন্তর থেকে আশ্রয় চেয়েছেন যে অন্তর আল্লাহর সামনে বিনয়ী হতে জানে না। এমন অন্তর তিনি কখনোই কামনা করেননি যা আল্লাহর সামনে ভয়ে ও বিনয়ে কান্না করে না। আল্লাহর সাথে তুলনাযোগ্য আর কিছুই নেই, এই চরম সত্যটি যে অন্তর উপলব্ধি করতে পারে না- তা থেকেও নবিজি সা. পানাহ চেয়েছেন। দুয়াটি হলো- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন কলবিন লা ইয়াখশা ওয়া দুয়াইন লা ইয়ুসমা ওয়া মিন নাফসিন লা তাশবা ওয়া মিন ইলমিন লা ইয়ানফা আউজুবিকা মিন হাউলাইল আরবা।’ অর্থ : “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি এমন মন হওয়া থেকে যা আপনার ভয়ে ভীত হয় না, এমন দুয়া থেকে যা শোনা হয় না (প্রত্যাখ্যান করা হয়), এমন আত্মা হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন জ্ঞান হতে যা কাজে আসে না। আপনার নিকট আমি এ চার জিনিস থেকে আশ্রয় চাই”। (তিরমিজি-৩৪৮২, নাসাঈ-৫৪৭০)

এই দুয়ায় ‘ইয়াখশা’ যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ হলো আল্লাহকে ভয় করা এবং এ ভয় থেকেই আল্লাহর সামনে বিনয়ী হওয়া। আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন, “যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা যেন তাদের মত না হয়ে যায়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। তারা অনেকটা সময় পেয়েছে। অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।” (সুরা হাদিদ : ১৬)

অন্তর হলো সকল নেক আমলের ভিত্তি। আমরা কে কতটা ভালো কাজ করতে পারবো তা নির্ভর করে আমাদের অন্তরের শুদ্ধতার ওপর। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে তা আমাদের পাপ কাজ করতে বাঁধা দেয়। রাসূল সা. এ কারণে বলেছেন, “শরীরের ভেতর গোশতের একটি টুকরো আছে। যদি তা বিশুদ্ধ হয়, পবিত্র হয় তাহলে সবকিছুই সুন্দর ও পরিশোধিত হয়। কিন্তু যদি এটি দূষিত হয়ে যায় তাহলে গোটা শরীরটাই দূষিত হয়ে যায়, পঁচে যায়। আর গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিই হলো ক্বলব বা অন্তর।” (আহমাদ-১৮৪১২)

একটি অন্তর কখন ও কীভাবে আল্লাহর সামনে বিনয়ী হতে ভুলে যায়- তা হজরত উমর রা. খুবই চমৎকারভাবে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি বেশি কথা বলে, সে নিজেকে খোলাসা করে ফেলে। ফলে তার পাপগুলোও সামনে এসে যায়। আর যে ব্যক্তি তার পাপ উম্মুক্ত করে দেয় সে তার অন্তর্নিহিত শালীনতা ও মার্জিত মনোভাব হারিয়ে ফেলে। আর যে ব্যক্তি শালীনতা হারিয়ে ফেলে, তার তাকওয়াও আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যায়। আর যখনই একজন মানুষের তাকওয়া নিঃশেষ হয়ে যায়, তখনই তার অন্তর মরে যায়। মৃত অন্তর আর বিনয়ী হতে পারে না।” অন্যদিকে হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, “মৃত অন্তরে আবারও প্রাণশক্তি ফিরে আসে যখন মানুষ আমলে সলিহ বা সৎ কাজ করতে শুরু করে।” 

একজন প্রখ্যাত সালাফ বলেছেন, “মানুষের ওপর যতগুলো বিপদ বা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন বিপদ হলো অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া। ইহুদি, মুনাফিক ও মুশরিকরা সত্যনিষ্ঠ ইসলামকে চেনার পরও মেনে নিতে পারেনি কারণ তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গিয়েছিল। রাসূল সা. বলেছেন,‘কেবল হতভাগ্য ব্যক্তির হৃদয় থেকেই দয়া তুলে নেওয়া হয়। ’ (তিরমিজি-১৯২৩)

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা রা. বলেন, এক বেদুইন ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে বললেন, আপনি কি শিশুদের চুমু দেন? আমি তো কখনো শিশুদের চুমু দিই না। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া ছিনিয়ে নিয়ে অন্তরকে কঠিন করে দেন, তাহলে আমার কীই-বা করার আছে? (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪২১)।

আল্লাহই অন্তরের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক এবং তিনি যেকোনো দিকেই অন্তরকে ধাবিত করতে পারেন। এ কারণে নবিজি সা. সবসময় একটি দুয়া করতেন। সেই দুয়াটি করার আগে আরেকটু প্রাসঙ্গিক আলোচনাও করা জরুরি। আমরা অন্যের তুলনায় নিজেদের দোষ ত্রুটি নিয়ে কম আলোচনা করি, কারণ নিজেদের নিয়ে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস আমাদের কাজ করে। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড, অভিজ্ঞতা, বোঝাপড়াকে আমরা সেভাবেই মানোত্তীর্ন মনে করি। কিন্তু প্রতিটি মানুষের পতন হতে পারে। আধ্যাত্মিক পতন, চিন্তাগত পতন, আদর্শিক পতন। এই বিষয়টি নিয়ে কেন যেন আমরা সতর্ক হইনা। সম্ভবত, অন্য অনেক কিছুর মতো হিদায়াতটাকেও আমরা চিরস্থায়ী ধরে নিয়েছি বলেই এমনটা হয়। যদিও মানব ইতিহাসের সবচেয়ে অস্থির একটি সময়ে আমরা বসবাস করছি।

অথচ খোদ রাসূল সা. নিজেও তার অন্তরের স্থিরতার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতেন। মাঝে মাঝে নয় বরং নিয়মিতই করতেন। শাহর ইবনু হাওশাব (রহ) থেকে বর্ণিত। উম্মুল ‍মুমিনিন উম্মু সালামাহ্রা.-কে আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ সা. আপনার কাছে অবস্থানকালে অধিকাংশ সময় কোন দুয়াটি পাঠ করতেন? 

তিনি বললেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দুয়া পাঠ করতেন: “ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আ’লা দি-ই-নিকা। অর্থাৎ ‘‘হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর স্থির রাখুন’’। 

উম্মু সালামাহ্রা. একবার এর কারণও জানতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি অধিকাংশ সময় “ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আ’লা দি-ই-নিকা। এই দুয়াটি কেন পাঠ করেন? 

রাসূল সা. উত্তরে বলেছিলেন “হে উম্মু সালামাহ্! পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যার মন আল্লাহ তায়ালার দুই আঙ্গুলেরমাঝখানে অবস্থিত নয়। যাকে ইচ্ছা তিনি দীনের ওপর স্থির রাখেন এবং যাকে ইচ্ছা দ্বীন থেকে বিপথগামী করে দেন। 

এই হাদিসের শেষাংশে মু’আজ রা. কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন-

“রাব্বানা লা’তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব। (সুরা আল ইমরান : ০৮) 

অর্থ : হে আমাদের রব! আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করার পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে আবারও বাঁকা করে দিয়েন না। (তিরমিজি-৩৫২২)

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনুল কাইউম (রহ) বলেন, “তোমাদের অন্তর বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা তিনটি স্থানে তোমরা নিয়মিত পরীক্ষা করবে। এই স্থানগুলো হলো, যখন তোমরা কোনো জনসমাগমে বসে কুরআনের তিলাওয়াত শুনো, যখন তোমরা একাকী থাকো এবং যখন তোমরা সামষ্টিকভাবে জিকিরে মশগুল থাকো।” (ফাওয়াইদুল ফাওয়াইদ: পৃষ্ঠা ৪৭৯)

অনেক সময়ই আমরা ভালো ভালো কথা শুনি, অনেক ইতিবাচক আহবান শুনি কিন্তু তাতে আমাদের অন্তর প্রভাবিত হয় না- কারণ এরই মধ্যে আমাদের অন্তরের দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে এবং অন্তরও কঠিন হয়ে গেছে। ইয়াহিয়া ইবনে মুআজ রহ. অন্তরকে কঠিন হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য ৫টি উপায় বাতলে দিয়েছেন। এগুলো হলো-

নিয়মিত কুরআনের তিলাওয়াত করা

সবসময় পেট খাবারে পূর্ণ করে না রাখা

শেষ রাতে ইবাদত করা

রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে দুয়া করা, কান্না করা

নেককার ও ধার্মিক লোকদের সান্নিধ্যে সময় কাটানো।

অন্তর কঠিন হয়ে গেলে আমরা জ্ঞান থেকেও আর কল্যাণ লাভ করতে পারি না। মোহাম্মাদ ইবনে সিরিন রহ বলেন, “যদি আল্লাহ কারো কল্যাণ করতে চান তাহলে তিনি তার অন্তরকে এমনভাবে তৈরি করে দেন যাতে ঐ ব্যক্তি ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে।” হজরত আলী রা. বলেন, “অন্তরটি যদি জীবিত ও জাগ্রত থাকে তাহলে হিদায়াত পাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।” এই কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পাপ তখনই সম্পাদিত হয় কিংবা মানুষ তখনই বিচ্যুত হয় যখন তার মন আর সক্রিয় থাকে না। অন্তর মরে যাওয়ায় যেমন পাপ করার রাস্তা উম্মোচিত হয় তেমনি বারবার পাপের পুনরাবৃত্তি হলেও অন্তর আর সক্রিয় থাকে না। কেননা, পাপ মানুষকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলে।

আন নাওয়াস বিন সামান রা. থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সা. কে পাপ ও পূণ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “সকল নেক আমলের নির্যাস প্রকাশিত হয় উত্তম চরিত্রের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে, পাপাচার হলো সেই কাজগুলো যা করলে মনে অস্বস্তি অনুভূত হয়; পাপ হলো এমন সব কাজ যেগুলো মানুষের সামনে উম্মোচিত হোক তোমরা তা চাও না।” (মুসলিম-২৫৫৩)

রাসূল সা. এমন একটি আত্মা থেকেও পরিত্রাণ চেয়েছেন যা কখনো পরিতৃপ্ত হয় না- যা সবসময়ই আরো আরো চায়। এই কারণে আমাদের এমন একটি অন্তর লালন করা উচিত যা অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়। ইমাম আল শাফেয়ী রহ. বলেন, “যদি আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞ ও তৃপ্ত বান্দা হতে পারি তাহলে আমাদের অবস্থা হবে বিরাট এক স¤্রাটের মতো।” অন্যদিকে, ইবনে কাসীর রহ. বলেন, “আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার সহজ উপায় হলো, আল্লাহ তায়ালা আমাদের যা কিছু দিয়েছেন তা কৃতজ্ঞতার সাথে বিবেচনা করা।” এই বিষয়টি অনুধাবন করা যে, আমরা যা ভোগ করি, কোনোটাই আমাদের সক্ষমতা ও যোগ্যতার কারণেই শুধু অর্জিত হয়নি। বরং আল্লাহ তায়ালাই দয়া করে এগুলো আমাদের দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. এর একটি হাদিসও প্রণিধাণযোগ্য।

আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ কোনো আদম-সন্তানের কাছে যদি দুই উপত্যকা ভর্তি স্বর্ণ থাকে তবুও সে তৃতীয় একটি স্বর্ণভর্তি উপত্যকা অর্জনের ইচ্ছা করবে। মাটি ছাড়া আর কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না। যে লোক তাওবাহ করে আল্লাহ্‌ তায়ালা তার তাওবাহ কবুল করে নেন।” (তিরমিজি-২৩৩৭)

আমাদের নাফস আমাদেরকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে আবার আমরা নিজেরাও নফসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারি। আমরা যখন নাফসের প্ররোচণা ও ফাঁদে পড়ে যাই, তখন নাফস আমাদের নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করে। ইমাম গাজালি রহ. বলেন, “নাফসকে নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং নাফসের ফাঁদে না পড়ার সর্বোত্তম উপায় হলো, বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতির প্রয়োজনে হালাল করা হয়েছে এমন বিষয়াবলী থেকে নিজেদের দূরে রাখা। এমনটা করতে পারলে আমরা নাফসকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখবো এবং হারাম থেকে নিজেদের নিবৃত রাখাও বেশ সহজ হয়ে যাবে।” আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূল সা. বলেছেন, উম্মাহ’র ওপর প্রথম যে বিপর্যয় দেখা দেবে তাহলো উম্মতের সদস্যরা খাবার দিয়ে নিজেদের পেট ভর্তি করতে শুরু করবে। মূল হাদিসটি এমন- উরওয়া বিন জুবায়ের রা. থেকে বর্ণিত। আমি আমার খালা আয়েশা রা. কে বলতে শুনেছি, রাসূল সা. এর ওফাতের ওপর উম্মতের ওপর প্রথম যে বিপর্যয়টি নেমে আসবে, তাহলো লোকজন পেট ভর্তি করে খেতে শুরু করবে। আর মানুষের পাকস্থলী যখন খাবারে পরিপূর্ণ হয়ে যায় তখন মানুষের শরীরে চর্বি জমা হয়, তাদের অন্তর দুর্বল হয়ে যায় এবং নাফস শক্তিশালী হয়ে যায়। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব-৩/১৬৭) 

আমাদের পেট যখন পরিপূর্ণ থাকে, আমাদের মনও তখন নাফসের পরবর্তী চাহিদা পূরণে ব্যস্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, আমরা যখন ক্ষুধার্ত থাকি তখনও আমরা আমাদের খাবারের জোগাতেই তৎপর থাকি। উমর রা. বলেন, “দরিদ্রতার সম্পর্ক হলো নিরন্তর কামনা ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণের সাথে।” আমরা যখন শুধু পেতেই চাই তখন নিজেদরকে অনেকটাই দরিদ্র ও অসহায় মনে হয়। রাসূল সা. বলেন, “একজন মানুষ যদি দুটো উত্তম বৈশিষ্ট্য লালন করতে পারে তাহলে আল্লাহ তার নামটি কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দার তালিকায় শামিল করে দেন। প্রথম বৈশিষ্ট্যটি হলো, সবসময় এমন মানুষদের দিকে তাকিয়ে থাকা ও লক্ষ্য করা যারা ধার্মিকতায় ও নেক আমলে তুলনামূলক এগিয়ে আছে। প্রয়োজনে তাদের মতো হওয়া বা হতে চাওয়া। আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো ঐ মানুষগুলোর দিকে তাকানো যারা দুনিয়াবি সম্পদের বিবেচনায় তার চেয়ে আরো পিছিয়ে আছে। এই মানুষগুলোই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতেও ধৈর্য ধারণ করতে পারে। মূল হাদিসটি এমন-  আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছিঃ যার মধ্যে দু’টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আল্লাহ্‌ তায়ালা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের মধ্যে তার নাম লিখে রাখেন। আর যার মধ্যে এ দু’টি বৈশিষ্ট্য নেই, আল্লাহ্‌ তায়ালা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের দলে তার নাম লিখেন না। যে ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়াবলী ও আমলের ক্ষেত্রে তার তুলনায় অগ্রসর লোকের দিকে দেখে এবং তার অনুসরণ করে; আর পার্থিব ব্যাপারে তার চাইতে অনগ্রসর লোকের দিকে দেখে; এবং আল্লাহ্‌ তায়ালা তাকে ঐ অনগ্রসর লোকদের তুলনায় যতটুকু মর্যাদা ও নিয়ামত দান করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহ্‌ তায়ালার প্রশংসা করে, আল্লাহ্‌ তায়ালা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের তালিকায় তার নাম লিখে রাখেন। আর যে ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে তার চাইতে পিছিয়ে থাকা লোকের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তাকে অনুসরণ করে আর পার্থিব ব্যাপারে তার তুলনায়অগ্রসর লোকের দিকে দেখে এবং তার কাছে পার্থিব সামগ্রী না থাকার কারণে আফসোস করে, আল্লাহ্‌ তায়ালা তার নাম কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন।” (তিরমিজি-২৫১২)

অন্তর যদি নিষ্ক্রিয় থাকে বা নির্জিব থাকে তাহলে একজন মানুষের অন্তর কখনোই আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করতে পারবে না। এ কারণে, ঈমানকে ধারণ ও মজবুত করার স্বার্থে আমাদের সকলেরই অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস নেয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকেই অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার এবং একটি সজীব ও প্রাণবন্ত অন্তর লালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক, অনুবাদক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির