post

একাদশ জাতীয় নির্বাচন এবং তার ময়নাতদন্ত

সরদার আবদুর রহমান

১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

শেষ পর্ব
ভোটের পূর্বাপর অভিযোগের জবাব মেলেনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের নানা অভিযোগ অব্যাহত থাকলেও এসবের কোনো সুরাহা করতে কোনো উদ্যোগই নেয়নি নির্বাচন কমিশন। বরং সবকিছু ‘আদালতে অভিযোগ করতে পারে’ বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল, মনোনয়ন-বাণিজ্য, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাদান, বিরোধীজোটের পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বা মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোটের আগের রাতে মহাজোট প্রার্থীদের প্রতীকে ভোট দিয়ে বাক্স ভরে রাখা, কোনো কোনো কেন্দ্রে বেলা ১১টার মধ্যেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ না করা, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা প্রভৃতি অভিযোগ ছিল উল্লেখযোগ্য। কেন্দ্রভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশের পর অনেক অভিযোগের যৌক্তিকতা পান বিশ্লেষকরা। 

উল্লেখ করা যেতে পারে, ধানের শীষকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী মনে করা হলেও ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮টিতে ধানের শীষ প্রতীকের কোনো প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতায় টিকে থাকতে পারেননি। একই সঙ্গে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী ১৬৩ জন প্রার্থীকেই জামানত হারাতে হয়; যাদের মধ্যে ছিলেন অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী। 

ফলাফলে এই অসঙ্গতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো আমলই দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইসি নিজে কিছু করেনি, রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো ফলাফল প্রকাশ করেছে। কোনো অসঙ্গতি থাকলে যে কেউ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করতে পারেন। 

চেপে রাখা যায়নি ‘অস্বাভাবিক’ চিত্র

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলে দেখা যায়, এতে অজস্র ‘অস্বাভাবিকতা’ ও ‘অসঙ্গতি’ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা কার্যত ধ্বংস করে ফেলে। কোনোভাবেই যেন চেপে রাখা যায়নি নির্বাচনের এসব ‘অস্বাভাবিক’ চিত্র। তথাপি এই ‘পোকায় খাওয়া’ আয়োজনের প্রতি সরকার ও ইসি ছাড়া আর কারো স্বীকৃতি মেলেনি। 

মোটাদাগে অস্বাভাবিকতাসমূহ : এই ফলাফলে মোটাদাগে অসংখ্য অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করা হয়। এতে দেখা যায়:

- প্রায় ৯০০টি কেন্দ্রে ধানের শীষে কোনো ভোটই পড়েনি। এর বিপরীতে নৌকায় পড়েছে তিন থেকে চার অঙ্কের (ডিজিট) ভোট। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, কোনো কেন্দ্রে বিশেষ প্রতীকের ব্যালটে কোনো ভোট না পড়ায় তাদের কিছুই করার নেই। 

- সহ¯্রাধিক কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৯০ ভাগ থেকে শতভাগ পর্যন্ত। এমনকি প্রবাসী আর মৃত ব্যক্তিও সিল মেরেছেন ব্যালট পেপারে। অন্তত ২২৭টি কেন্দ্রে ১০০% ভাগ ভোট পড়ে। 

- এছাড়াও ৯০% থেকে ৯৯.৯৯% পর্যন্ত ভোট পড়েছে অন্তত সাড়ে ৭ হাজারের বেশি কেন্দ্রে। কিন্তু এই গুরুতর বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যার পরিবর্তে গেজেট প্রকাশের কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায় ইসি।  

- প্রধান দুই প্রতীকের মধ্যে ভোটের ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবধানেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ আসনেই দেখা যায় নৌকার ভোট প্রাপ্তি যেখানে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে ধানের শীষ ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার অতিক্রম করতে পারেনি। 

- বিশেষত দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে ধানের শীষের বরাবর আধিপত্য বজায় থাকতে দেখা যায় সেখানে নৌকার মহাউল্লম্ফন ঘটতে দেখা যায়। বিশেষত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নৌকা মার্কার ভোট একেবারে উপচে পড়ার মতো অবস্থা। কিন্তু বিপরীতে ধানের শীষ প্রায় ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার দশায় পতিত হয়। 

- নৌকার ভোট যেখানে লক্ষাধিক থেকে প্রায় ৪ লাখ ছুঁই ছুঁই করে, সেখানে ধানের শীষের ভোট এমনকি সাকুল্যে ৫৭, ১২৯, ২৮৬ ও ৩০৫ পর্যন্ত অঙ্কে নেমে গেছে। আর তা ১ হাজার থেকে ২৪ হাজারের বেশি অতিক্রম করেনি। 

- ধানের শীষের ‘নিজস্ব’ আসন বলে দীর্ঘকাল ধরে চিহ্নিত অনেক আসনেই ভোটের বিপন্ন দশা দেখা গেছে। কোনো কোনো আসনে ভোট প্রাপ্তিতে ধানের শীষকে কার্যত ‘নাই’ করে দেওয়া হয়েছে। 

- ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, অতীতের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যেসব আসনে বিএনপি ক্রমাগত জয়লাভ করেছে কিংবা পরাজিত হলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভোট পেয়েছে, সেসব আসনে এবার ভোটের বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে এসব আসন ধানের শীষের হাতছাড়া হয়ে গেছে। 

- ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও ভোট পড়া ও নৌকার ভোট প্রাপ্তিতে এবার অতীতের সকল রেকর্ডও ভঙ্গ করে। অন্যদিকে পুরো জোট ও ফ্রন্ট একত্রে লড়াই করেও ভোট প্রাপ্তিতে ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্থানে নেমে যায়। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও নৌকা যা ভোট পায় তার চেয়েও বেশি ভোট প্রাপ্তি দেখানো হয় সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশন প্রণীত ফলাফলের তালিকাও নানাপ্রকার অসঙ্গতিও অসম্পূর্ণতায় ভরপুর। 

- কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের তালিকায় আসনভিত্তিক যোগফল দেওয়া হয়নি। শুধু কেন্দ্রের ক্রমিক নম্বর দেওয়া হয়েছে। সেই আসনের মোট ভোটার, মোট বৈধ ভোট, প্রার্থী ও প্রতীকের মোট প্রাপ্ত ভোট, শতকরা হার প্রভৃতির কোনো কলামেই যোগফল দেওয়া হয়নি। ফলে আসনভিত্তিতে একনজরে ভোটের চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। 


প্রবল সমালোচনা

এই নির্বাচন নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তৃপ্ত থাকলেও দেশ-বিদেশের বিশ্লেষকরা এর প্রবল সমালোচনা করে চলেছেন। এযাবৎ তারা বলে আসছেন, ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচনটি হয়েছে, তা আমাদের ইতিহাসে বিরল ও ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে। এ রকম নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ আর দ্বিতীয়বার প্রত্যক্ষ করেনি। অনেকের মতে, ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামরিক শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতাকেও হার মানিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নির্বাচনকে প্রহসন বলে অভিহিত করেছে। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) অতি উৎসাহী সরকারি কর্মকর্তারা রাতে ব্যালটে সিল মেরে নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করেছে বলে অভিযোগ এনেছে। 

টিআইবির প্রতিবেদন : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৫০টি আসনে জরিপ করে নির্বাচনকে ‘অভূতপূর্ব’ ও ‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করে। টিআইবি ৪৭টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম চিহ্নিত করে- যার মধ্যে আছে, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল দেওয়া এবং প্রতিপক্ষের এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ না দেয়া। অনেক ভোটারের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারা, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মারা, জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা, ভোট শুরুর আগে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, ভোট শেষের আগে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, গণমাধ্যমের জন্য ‘অভ‚তপূর্ব’ কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি। ভোটগ্রহণের আগের পরিবেশও বিরোধী দলের জন্য ছিল বিপজ্জনক। গায়েবি মামলায় বিরোধী দলের অনেক নেতা-কর্মী পালিয়ে বেড়িয়েছেন। প্রার্থীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ আসনে বিরোধী দলের প্রার্থীকে প্রচার কাজ করতে দেয়া হয়নি।

সুজন বললো ‘অনিয়মের খনি’ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক-‘সুজন’ বলেছে, এ নির্বাচন অনিয়মের খনি, একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। গত ৯ জুলাই ২০১৯ এক সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ফলাফল প্রকাশে নির্বাচন কমিশন জালিয়াতি করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখন পুরোপুরি যদি ভেঙে যায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচনের অনিয়মে ঘটনার তদন্ত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি এই ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচন আয়োজন না করারও সুপারিশ করা হয়। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচনের অসঙ্গতির বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে বলেন, এই তথ্যগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে ‘অনিয়মের খনি’ বলতে পারি। আমরা মনে করি, চরম অনিয়ম হয়েছে। এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে, তিনি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে এই অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করে যারা এর জন্য দায়ী, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের একটি রায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম হলে সেটি তদন্ত করে কমিশন চাইলে সে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক এক প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলা হয়, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি ছিল অভাবনীয় একপেশে। তা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বলেও বিবেচিত হয় না। নানা অনিয়ম, আগে থেকেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা এবং বিরোধী দলের এজেন্ট ও ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘটনারও অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন দেশের ২০১৮ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনের আগে প্রচার চলাকালে বিরোধীরা ব্যাপক হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচারে গ্রেফতার ও সহিংসতার শিকার হন। এতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্য জমায়েত হওয়া, স্বাধীনভাবে প্রচার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও সঠিক সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ভিসা পাননি। নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ : নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডবিøউ) বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৯-এ একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, সংসদ নির্বাচনের আগে মতপ্রকাশে বাধা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ। এ সময় জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জোরপূর্বক নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষার্থীরা। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনের আগে দেশটির কর্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দলগুলোর জ্যৈষ্ঠ সদস্যদের আটক কিংবা গ্রেফতার করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচক নাগরিক সমাজের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মৃত কিংবা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। 

ফেমার সমালোচনা : নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাস পর প্রকাশিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার চিত্র উঠে এসেছে। ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমপক্ষে ১৯৭টি কেন্দ্রে ১০০% ভোট পড়েছে। আর অন্তত ১ হাজার ৮৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৫% থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ।

ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, বিষয়টি উদ্বেগের। বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোথাও ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়লেই সেখানে কমিশনের আলাদা নজর দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। যেটা হয় না পৃথিবীতে কোথাও, সেটা চলতে পারে না। ফেমার প্রেসিডেন্ট বলেন, ইলেকশন ঠিকমতো হওয়াটা কিন্তু গণতন্ত্রের একটা বড় স্তম্ভ। সেই স্তম্ভ যদি নড়বড়ে হয়ে যায় তাহলে গণতন্ত্রের বাকি স্তম্ভগুলোও কিন্তু নড়বড়ে হতে থাকবে।” (সমাপ্ত)

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গ্রন্থপ্রণেতা

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির