আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- لكل قوم هاد অর্থাৎ- প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি নেই যার জন্য আল্লাহ তায়ালা সতর্ককারী প্রেরণ করেননি। পৃথিবী সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে শুরু হয়েছে এই ধারাবাহিকতা। অব্যাহত থেকেছে শেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সা.-এর আগমন অবধি। মজার ব্যাপার হলো- পৃথিবীর প্রথম মানব পৃথিবীর প্রথম নবী। মহান আল্লাহ তার বান্দার প্রতি অতীব দয়াবান ও অনুগ্রহপরায়ণ বলেই বান্দার প্রতি তার এ অসীম অনুগ্রহ।
আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক অকৃত্রিম এবং অনাদিকালের। এ সম্পর্ক নিখাদ। এতে নেই কোনো কলুষতা। অভিভাবক এবং অধীনস্থের এ সম্পর্ক। তবে এতে কোনো ক্লেদ বা ক্লেশ নেই। বরং এ সম্পর্ক দাতা ও গ্রহীতার। আল্লাহ কেবল দিয়েই থাকেন। বান্দার শত অপরাধ, অন্যায় সত্ত্বেও তিনি কেবলই বান্দাকে দিয়ে থাকেন। বান্দার অবাধ্যতায় তিনি মহানদাতা। বান্দার না শোকরির পরেও তিনি করুণানিধান। বান্দার বিক্ষুব্ধতায়ও তিনি অতীব কোমল। কারণ তিনি বান্দাকে ভালোবাসেন অতিমাত্রায়।
এ জন্যই যখনই বান্দা পথ হারিয়ে ফেলে, বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়, অন্ধকারের পানে দৌড়ায় তখনই আল্লাহ বান্দাকে অন্ধকার হতে মুক্তি দিতে, আলোকের সন্ধানদাতারূপে তার কাছে প্রেরণ করেন নবীদের। পথহারা বান্দাকে পথের দিশা দিতে প্রেরণ করেন করেন রাসূলদের। মহান আল্লাহ বলেন- الر كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ অর্থাৎ- আলিফ লাম রা। এটি এমন কিতাব যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে পরাক্রমশালী প্রশংসিতের পথে বের করে আনতে পারো। ১৪: ০১-০২; বান্দার যাবতীয় বিভ্রান্তি দূর করতে নবীদেরকে তিনি বিশেষ মিশনসহ প্রেরণ করেন। আল্লাহ বলেন- رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ অর্থাৎ- হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনি তাদের মাঝে প্রেরণ করুন তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ শুনিয়ে দিবে। তাদেরকে কিতাব শিক্ষা দিবে। হিকমাত শিক্ষা দিবে। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী ও প্রাজ্ঞ। ০২: ১২৯;
পৃথিবী সৃষ্টির পর হতে নবী মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত যত নবী দুনিয়াতে এসেছেন তাদের সকলের মূলনীতি ছিল এক ও অভিন্ন। তাদের দাওয়াতের মূল সুর ছিল তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের সম্প্রচার। দ্বিত্ববাদ, ত্রিত্ববাদ কিংবা বহুশ্বেরবাদ থেকে মানব মস্তিষ্ককে পূর্ণরূপে মুক্ত করা। মানব মস্তিষ্কে কেবলই একেশ্বরবাদ নয় তাওহিদুল্লাহ বা আল্লাহর একত্ববাদ বলতে যা বুঝায় তার পূর্ণ অধিষ্ঠানকে পুনঃস্থাপিত করা। নবীদের মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নানা স্থানে আল্লাহর ঘোষণাসমূহ এমনই। যেমন আল্লাহ বলেন- لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَاقَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ অর্থাৎ- আর আমরা নুহকে পাঠিয়েছিলাম তার কাওমের কাছে। সে তাদেরকে আহ্বান করেছিল- হে আমার জাতি তোমরা এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারো ইবাদত করো না। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহর আজাবের আশঙ্কা করি। ০৭: ৫৯;
এমনি আরো অসংখ্য আয়াত উপস্থাপন করা যাবে যা আল্লাহর তাওহিদের নির্দেশক কিংবা ইঙ্গিতার্র্থক। এর গোড়ার কথা হলো মানব জীবনের সফলতার চাবিকাঠি হলো আল্লাহর তাওহিদ তথা একত্ববাদ সম্পর্কে ধারণাকে স্বচ্ছ করা এবং তৎহিসেবে আমল অব্যাহত রাখা। আল্লাহর তাওহিদ বিষয়ে এতটুকু অপূর্ণ কিংবা অস্বচ্ছ ধারণা জীবনের সকল আমলকে বরবাদ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আলোচনার কুরুতেই আমরা উল্লেখ করেছি প্রত্যেক জাতির জন্যই থাকে পথনির্দেশক। অবশ্য পথপ্রদর্শকের এ ধারাবাহিকতা রাসূল মুহাম্মাদ সা.-এর প্রেরণের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। তাহলো দ্বীনের যাবতীয় প্রসঙ্গ, অনুষঙ্গ এবং নির্দেশনা সার্বিকভাবে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছে। দ্বীনের আর কোনো অপূর্ণতাই অবশিষ্ট নেই। আল-কুরআন আল-কারিমে পরিষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে- الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থাৎ- অদ্য পূর্ণতা দিলাম তোমাদের দ্বীনকে, আর আমার অনুগ্রহরাজি পূর্ণ করে দিলাম তোমাদের মাঝে, ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করার মাঝেই আমার যাবতীয় তুষ্টি। ০৫: ০৩;
নবী মুহাম্মাদ সা.-এর পূর্বের কোনো নবীর দ্বীনকেই এভাবে পূর্ণতার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ইতঃপূর্বেকার কোনো নবীকেই এভাবে সার্বজনীন ঘোষণা করা হয়নি। ফলে তাদের পরে আরো নবী আসবার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু সার্বিকভাবে নবুওতের পূর্ণতা, দ্বীনের পরিপূর্ণতা, বিধি-বিধানের সম্পূর্ণতা, জীবন যাপন প্রণালীর সার্বিক পূর্ণাঙ্গতা বিশদ আকারে জনগণের সামনে সমুপস্থিত থাকবার কারণেই আর কোনো নবী আসবার কিংবা কিতাব অবতীর্ণ করবার সবিশেষ প্রয়োজনীতা ফুরিয়ে গেছে। কারণ পূর্ববর্তী কিতাবের বিকৃতি, হেরফের বর্ণনা, বিভ্রান্তি বা বিষোদগার ইত্যাদি পরিশুদ্ধকরণের জন্য মহানবীর আনীত আল-কুরআন আল-কারিমের দিক নির্দেশায় যথেষ্ট হবে।
আলোচ্য নিবন্ধে আমরা দ্বীনের মূল সূত্র আল্লাহর একত্ববাদ নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তিসমূহ উদঘাটন, তার অপনোদনকল্পে নবী মোহাম্মদের নির্দেশনার আলোকপাতের মাধ্যমে একটি আলোকিত সমাধানের প্রয়াস পাব। বিশ্বের প্রচলিত প্রধান ধর্মসমূহে তাওহিদবাদের অস্তিত্ব অত্যন্ত প্রকট এবং প্রকাশ্য। কিন্তু একই তাওহিদের তো একাধিক রূপ হতে পারে না। তাই এ সংক্রান্ত কিঞ্চিৎ ধ্যান-অনুধ্যানেই বিভ্রান্তির শেকড় সম্পর্কে উপলব্ধি করা যায়। তাওহিদ নিয়ে বিভ্রান্তির প্রথম সোপান হলো-
প্রথমত আল্লাহর তাওহিদ বিষয়ে বিভ্রান্তির সূত্রপাত হয় আল্লাহর অস্তিত্বের অবয়ব কল্পনা, উপমার আশ্রয় এবং সাদৃশ্য চিন্তার মধ্য দিয়ে।
দ্বিতীয়ত আল্লাহর তাওহিদ বিষয়ে বিভ্রান্তি সম্প্রসারিত হয় মহান আল্লাহর জাত তথা সত্তা থেকে সিফাত তথা গুণাবলিকে স্বতন্ত্র করা এবং সিফাতসমূহকে খণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে।
তৃতীয়ত আল্লাহর তাওহিদ বিষয়ে বিভ্রান্তির উত্তুঙ্গে আরোহণ করে আল্লাহর কর্মবৈচিত্র্য কর্ম বৈভিন্নের ফলশ্রুতিতে বান্দার সংশয়াবিষ্ট হবার মধ্য দিয়ে।
আমরা যদি বিষয়গুলোর কিয়দ ব্যাখ্যায় অগ্রসর হই তাহলে দেখতে পাই- তাওহিদকে বিভ্রান্তির প্রলেপে মুড়িয়ে দিতে এবং তাওহিদ চেতনাকে খুঁত আক্রান্ত করার প্রয়াস শুরু হয় এখান হতেই। বিশ্বাসকেই আহত কিংবা প্রহৃত করে মস্তিষ্ককে শুদ্ধ করে নেয় এক নব বিভ্রান্ত চেতনা। মস্তিষ্ক তখন আল্লাহর উপমা খুঁজে ফেরে। ক্লান্ত হয়। উপমা অঙ্কনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চেতনায় গঠিত হয় আল্লাহর অবকাঠামো। নির্মিত হয় প্রতিমা। ফলে তাওহিদুল্লাহর চেতনায় আল্লাহর অস্তিত্বের অবলুপ্তি ঘটে। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই- আমাদের চেনা-জানা ধর্মগুলো আল্লাহর নানান আকার, উপমা ও সাদৃশ্য কল্পনা করেছে। ইতিহাস ও আল-কুরআনের বর্ণনায় দেখা যায়- ইয়াহুদিরা আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে পিতা-পুত্র সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাদের ধর্ম বিবেচনায় ফিরিস্তারাও আল্লাহর সন্তান। অর্থাৎ তারা আল্লাহকে পুরুষ অস্তিত্বে মিশিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ বলেন- وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ অর্থাৎ- আর ইয়াহুদিরা বলে- উযাইর হলো আল্লাহর পুত্র। একইভাবে খ্রিষ্টানরা বলে- ইসা মাসিহ হলো আল্লাহর পুত্র। এগুলো কেবলই তাদের মনগড়া কথা। ০৯: ৩০;
বনি ইসরাইলদের অনেকে মনে করেন আল্লাহ হলেন স্বামী, জেরুসালেম তার স্ত্রী। আবার নাসারা ধর্মেও পিতা-পুত্রের উপমা লক্ষণীয়। আল্লাহ বলেন- وَقَالَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى نَحْنُ أَبْنَاءُ اللَّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ অর্থাৎ- ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টানরা বলে- আমরাই আল্লাহর পুত্র এবং আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র। ০৫: ১০;
মক্কার সাধারণ জনজীবনে দেখা যায়- তারা আল্লাহকে পিতা, ফিরিস্তাদেরকে তার কন্যা সাব্যস্ত করত। এসবই তাদের অলীক উপমা কল্পনার ফলশ্রুতি ছাড়া নয়।
এ সকল বিশ্বাসে আল্লাহকে পুরুষ কল্পনা করা হয়েছে। তবে আর্য সমাজে আল্লাহকে নারী চিন্তায় চিত্রিত করা হয়েছে। সেখানে বান্দারা হয়েছে তার পুত্র। এভাবে পৃথিবীর তাবৎ ধর্ম চিন্তায় আল্লাহকে নানারূপ চিত্রে চিত্রিত করা হয়েছে। কখনও নারী, কখনও পুরুষ আবার কখনও স্বামী বা স্ত্রী, কখনওবা পিতা। কিন্তু আল্লাহ কি এ রকম আকার বিশিষ্ট হতে পারেন?
আসলে আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি যাবতীয় আকার, আকৃতি হতে চিরমুক্ত ও পূত-পবিত্র। তার আকার সম্পর্কে আল্লাহর নিজের বক্তব্য- لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ অর্থাৎ- তার মতো কোনো কিছুই নেই। ৪২: ১১;
এই একটি আয়াতেই আল্লাহর যাবতীয় ছায়া এবং কায়ার কল্পিত যাবতীয় চিত্রকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। ইতঃপূর্বেকার শিরকের সকল স্তম্ভ একদম শেষ করে দেওয়া হয়েছে। বুঝানো হয়েছে আল্লাহ কারো স্বামী বা স্ত্রী নয়। তিনি কারো সন্তান বা পিতা নন। এমনকি তিনি জন্মদাতা বা জন্মজাতও নন। মহান আল্লাহর গুরুগম্ভীর স্পষ্ট ঘোষণা-
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (১) اللَّهُ الصَّمَدُ (২) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (৩) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ
অর্থাৎ- আপনি বলুন, আল্লাহ একক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন না। আবার তিনি কারো জন্মজাতও নন। তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। ১১২: ০১-০৪;
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এ অমোঘ ঘোষণায় তার অস্তিত্বের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে জন্মগ্রহণকারী, জন্মদাতা, জন্মজাত প্রভৃতি অভিধা হতে তিনি মুক্ত। তাহলে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়- মনিব আর বান্দার প্রেমময় সম্পর্কের কী হবে?
এ প্রশ্নের উত্তর অতীব প্রাঞ্জল। এখানে পিতা-পুত্র সম্পর্ক থাকবে না। তবে পিতা-পুত্রের অদৃশ্য ভালোবাসা জাগরূক থাকবে। শুধু তাই নয় পিতা-পুত্রের যে ভালোবাসা, মনিব আর বান্দার ভালোবাসা হবে তার চেয়েও গাঢ়। সেইজন্য পুত্র তার পিতাকে কতটা ভালোবাসে আল্লাহকে তার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। অনুরূপ পিতা যেমন পুত্রকে ভালোবাসে- আল্লাহ তার বান্দাকে তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসেন। অনেক অনুগ্রহ করেন। কারণ পিতা-পুত্রের মধ্যেও ক্ষুব্ধতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু সামগ্রিক অর্থে আল্লাহ কখনই বান্দার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তার সামগ্রিক নেয়ামত বন্ধ করে দেন না।
আরবের কাফিররা হজের মওসুম শেষে মিনায় একত্রিত হয়ে পিতৃপুরুষের গুণকীর্তনে মেতে উঠত। মহানবী মুসলিমদের বললেন- তোমরা মিনায় মিলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত হও, যেমনি করে তোমরা ইতঃপূর্বে তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ করতে। তবে তোমাদের আল্লাহর স্মরণ হতে হবে বাপ-দাদার চেয়েও বেশি। আল্লাহ বলেন- فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا অর্থাৎ- আর তোমরা যখন হজের কার্যাদি সম্পন্ন করবে তখন আল্লাহর স্মরণে প্রবৃত্ত হও। যেভাবে তোমরা ইতঃপূর্বে তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ করতে। বরং তার চেয়েও অত্যধিক স্মরণে প্রবৃত্ত হও। ০২: ২০০;
এই আয়াতে পিতার প্রতি পুত্রের ভালোবাসার উপর আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ পিতা-পুত্রের শারীরিক সম্পর্কের চেয়ে তাদের ভালোবাসাই এখানে মুখ্য হয়েছে।
সবশেষে চিন্তার ফলাফল দাঁড়ায় এমন- তাওহিদুল্লাহ বা আল্লাহর তাওহিদ চেতনায় শরীরী বিষয়ে বিদ্যমানতা তার তাওহিদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বিভ্রান্ত করে। বরং আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক হবে অশরীরী এবং আধ্যাত্মিক। যা দেখা যাবে না। তবে উপলব্ধি করা যাবে প্রতিক্ষণে। ঈমানদারদের ভালোবাসা তো সে কথারই সাক্ষ্য বহন করে وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ অর্থাৎ- আর যারা ঈমানদার তারা আল্লাহকে ভালোবাসে অতিমাত্রায়। ০২: ১৬৫;
মহানবীর নির্দেশনাও আমাদের এই চিন্তার প্রতিই ধাবিত করে। আল্লাহর উপমা চিন্তা, সাদৃশ্য বিবেচনা, আকার কল্পনা এক সময় মানুষকে মূর্তি ও প্রতিমার প্রতি উৎসাহিত ও আগ্রহী করে তুলবে। যাকে ইসলাম কোনোভাবেই বরদাশত করে না। মহানবী সা. হাদিসে ইরশাদ করেছেন- তোমরা মূর্তি পূজা করিও না।
দ্বিতীয়ত- জনমনে তাওহিদ বিভ্রান্তি সম্প্রসারণের বড় কারণ এটি যে, জনগণ আল্লাহর জাত ও সিফাতকে খণ্ডিত করে ফেলেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে তাদের চিন্তাজগতে ধোঁয়াশা। ফলে এক খোদা হতে চিন্তা চলে গেছে বহু খোদাতে। এই বহু খোদার সংখ্যা এক সময় শত, হাজার, লক্ষ, ছাড়িয়ে কোটির ঘর স্পর্শ করেছে। এই চিন্তা নানারূপী দেবতা, মূর্তি ও প্রতিমার ছয়লাব বইয়ে দিয়েছে প্রচলিত সমাজব্যবস্থায়। অথচ আল্লাহ কোনো বহু সত্তার নাম হতে পারে না। কারণ এতে সৃষ্টি হবে সমূহ বিপত্তি। আল্লাহ বলেন- لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا অর্থাৎ- যদি এতদুভয়ে থাকত বহু ইলাহর উপস্থিতি তবে তারা হতো বিপর্যয়ের মুখোমুখি। ২১:২২;
উদাহরণত খ্রিষ্টধর্মে আল্লাহর তিন প্রধান গুণ হলো- জীবন, জ্ঞান ও সঙ্কল্প। এই তিন গুণের প্রতিভূ হলো- জীবন হলো পিতা, জ্ঞান হলো রূহুল কুদুস এবং সঙ্কল্প হলো পুত্র। ফলে তারা তাওহিদ থেকে ছিটকে গিয়ে ত্রিত্ববাদে নিক্ষিপ্ত হলো।
আবার সনাতনীরা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, প্রতিষ্ঠাতা এবং মৃত্যুদাতা তিন সত্তায় ভাগ করে। এর পরিণাম হয়েছে ভয়াবহ। এর ফলে তাদের মাঝে ব্রাহ্মণ এবং শিবলিঙ্গবাদী গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। লজ্জার কথা হলো- লিঙ্গবাদী গোষ্ঠী এক পর্যায়ে নারী-পুরুষের প্রজনন অঙ্গকে সৃষ্টিকর্তার প্রকাশ ভাবতে শুরু করেছে। এখন লিঙ্গকেই তারা পূজা করতে আরম্ভ করেছে। তাওহিদ-এ এর থেকে বড় বিভ্রান্তি আর কী হতে পারে?
মিসর, গ্রিক বা রোমানদের ধর্ম চিন্তায় এরূপ নানান বিকৃতির দেখা মিলেছে। সে আলোচনায় প্রবৃত্ত না হয়েই আমরা মহানবীর দিক নির্দেশনায় দৃকপাত করলে দেখতে পাই, তিনি বলেন- وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَى فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ অর্থাৎ- আসমান জমিনের উত্তম গুণাবলি কেবলই তার জন্য।
অনুরূপভাবে আল কুরআনে এসেছে- إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ অর্থাৎ- নিশ্চয়ই তাদের বাইয়াত গ্রহণকালে তাদের হাতের উপরে ছিল আল্লাহর হাত। ৪৮: ১০; এই আয়াতের কারণে আমরা আল্লাহর হাতকে অবয়ব দেই না। কিন্তু অনেকেই তো তাদের প্রতিমার আট বা দশটি হাত বানায়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। শারীরিক আকারে আল্লাহ বেমানান। এতে তার মর্যাদার হানি হয়। কারণ তিনি হলেন- اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ অর্থাৎ- আল্লাহ হলেন আকাশ ও জমিনের দ্যোতি। ২৪: ৩৫;
বরং আল্লাহ সবার বন্ধু, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা। তিনি বলেন- فَاللَّهُ هُوَ الْوَلِيُّ وَهُوَ يُحْيِ الْمَوْتَى وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ অর্থাৎ- আর আল্লাহ হলেন বন্ধু, তিনিই মৃতকে জীবন দেন। তিনি সকল কিছুর উপর শক্তিমান। ৪২: ০৯
তার মহিমান্বিত পরিচয়ে মহান গুণাবলির উল্লেখ রয়েছে অসংখ্য আয়াতে। যেমন আয়াতুল কুরসিতে তিনি বলেন-
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
একইভাবে সূরা হাশরে উল্লিখিত হয়েছে-
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ- هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ- هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ-
তৃতীয়ত বান্দার যে মুখ্য চিন্তা তাওহিদকে বিভ্রান্তির নিগড়ে চূড়ান্তরূপে আটকে ফেলে সেটা মহান আল্লাহর কর্মবৈচিত্র্য ও কার্য বৈভিন্ন্যকে খণ্ডিত করা এবং সকল কর্মের স্রষ্টাকে স্বতন্ত্র সত্তা বিবেচনা করা। ফলে তারা জীবন ও মৃত্যুর স্রষ্টাকে করে আলাদা। ফলে কেউ হয় জ্ঞানের খোদা, কেউ হয় সম্পদের। ইত্যাকার সব নির্বুদ্ধিতায় এক খোদাকে করে খণ্ডবিখণ্ড। অথচ এ সকল কাজ একমাত্র আল্লাহর।
বিস্মিত হতে হয় যখন দেখি- তারা ভালো ও মন্দের জন্য আলাদা আলাদা খোদার ভাবনা লালন করে। অথচ ভালো বা মন্দ বিষয়ের মৌলিক চেতনার নিকটতম তারা হতে পারে না। ফলে তারা তাওহিদ চিন্তায় হয় বিভ্রান্ত। কারণ ভালো বা মন্দ মৌলিক অর্থে স্বতন্ত্র দুটি বস্তু হতে পারে না। কর্মের ভালো বা মন্দ নির্ণীত হয় মানুষের যথার্থ ও অযথার্থ প্রতিফলন প্রচেষ্টায়।
আমরা বিষয়টিকে যদি বিবেচনা করি এভাবে- আগুন একটি মৌলিক সৃষ্টি। ব্যবহার গুণে তা পর্যবসিত হয় ভালো বা মন্দে। যেমন আগুনকে যদি কাজে লাগানো হয় শীতার্তকে উষ্ণতা দিতে, সমাজ অবান্ধব কোনো দ্রব্যকে জ্বালিয়ে দিতে, ক্ষুণ্নিবৃত্তি নিবৃত্তার্থে, রন্ধনের জন্য কাজে লাগাতে ইত্যাদি ক্ষেত্রে আগুনের ব্যবহার হয় তবে তা হয় বান্দার জন্য উপকারী, উপাদেয় এবং ভালো। আর যদি আগুনকে ব্যবহার করি অন্যায়ভাবে কারো বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে, প্রতিহিংসাবশত শত্রুর শরীর ঝলসে দিতে, অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভস্মীভূত করতে তখন আগুন হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর, বান্দার জন্য ক্ষতিকর এবং মন্দ। এখানে আগুন কোনোভাবেই দোষ বা গুণের মালিক নয়। দোষ-গুণ নির্ণীত হয় মানুষের কর্মপ্রচেষ্টায়। একইভাবে আমরা ছুরির ব্যবহার, অন্ধকারকে কাজে লাগানো ইত্যাদি বিষয়য়কেও উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি।
এসবের ফলাফল দাঁড়ায়- বিশ্ব জগতের বস্তুনিচয়ের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তার প্রতিটি সৃষ্টিতেই রয়েছে স্বতন্ত্র শক্তি। তিনি কেবল মানুষকেই দিয়েছেন হৃদয়, মস্তিষ্ক, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা। যে প্রজ্ঞার কারণেই সে আল্লাহর সুনিপুণ সৃষ্টিজগতের বিনীত স্বীকৃতি দেয় কায়োমনে। ভক্তি গদগদ হয়ে বলে- فتبارك الله أحسن الخالقين অর্থাৎ- শ্রেষ্ঠতম স্রষ্টা আল্লাহ মহা-মহীয়ান। ২৩: ২৪;
তাই নির্ভেজাল তাওহিদ চিন্তায় বহুকর্মের স্রষ্টা বহুজন হতে পারে না। এ চিন্তায়ই কেবল মুক্তি সম্ভব। এ চিন্তায় বিভ্রান্তি প্রবেশ করলে অন্ধকারের অতল গহ্বরে যেতে বাধ্য তার সকল বোধ ও বিবেচনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ অর্থাৎ- এই পার্থিব জীবন ছাড়া আর কোনো জীবন নেই। আমরা মৃত্যুবরণ করি আবার জীবিত হই। কালের বিবর্তন ছাড়া আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করতে পারে না। ৪৫: ২৪
সিদ্ধান্তের প্রান্ত সীমায় এসে এভাবে চিন্তা করতে পারি- পৃথিবী আমাকে পথ দেখায় না কিংবা পথভ্রষ্ট করে না। অথবা পৃথিবীই আমাকে পথ দেখায় এবং পথভ্রষ্ট করে। এর অর্থ হলো আমরা আমাদের বিবেক, বুদ্ধি, প্রজ্ঞার যথার্থ ব্যবহারের কারণেই পথ পাই বা পথ হারাই। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতিটি কর্মেরই রয়েছে পরস্পর বিপরীতমুখী দুটি ফল। মহানবী সা. আমাদেরকে জানিয়ে দেন একইভাবে তার প্রতিটি নির্দেশনারও রয়েছে দুটি প্রত্যক্ষ ফল। সে জন্যই একজন আল-কুরআন পাঠ করে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়। আবার আরেকজন আল্লাহ বিষয়ে সংশয়াবিষ্ট হয়। অথচ তারা পড়েছে আল্লাহর ঐ একই বাণী। কিন্তু তার আয়াত পাঠকারী অন্তর ও চিন্তাশীল মস্তিষ্ক দুটি। সুতরাং ফলাফল দুই রকম। সার নির্যাস কথা হলো- কর্মদ্বিত্বতা স্রষ্টাদ্বিত্বতার প্রমাণক নয়। হতে পারে না। বরং বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির প্রকাশ ঘটে একমাত্র শক্তি হতেই। কী চমৎকার মহানবীর নির্দেশনা! আল্লাহর বাণী উদ্ধৃত করে তিনি বলেন- إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا অর্থাৎ- আমি তাকে দেখিয়েছি পথ। এখন সে হয় কৃতজ্ঞপরায়ণ হবে অথবা হবে অস্বীকারকারী। ৭৬: ০৩;
আমরা আমাদের আলোচনায় তাওহিদ বিভ্রান্তির মৌলিক তিনটি বিষয়ের যৎসামান্য আলোকপাত করেছি। তাওহিদ বিভ্রান্তির আরো অসংখ্য দিক ও বিষয় রয়েছে বা থাকতে পারে। সেটিই স্বাভাবিক। আমরা এ মৌলিকত্বের বাইরে কোনো আলোচনাকে প্রলম্বিত করিনি কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায়। এই তিনটি মৌলিক বিষয়কে যদি আমরা আমাদের মস্তিষ্কে ইনস্টল দিতে পারি তবে আমাদের মাঝে তাওহিদ বিভ্রান্তির আশঙ্কা নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। তবেই সম্পন্ন হবে নির্ভেজাল তাওহিদের আদলে গড়া মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ঐশ্বর্যমণ্ডিত ঐক্যের সমাজ বিনির্মাণ। আর তাতে আরব-আজম ভেদাভেদ বিদূরিত হবে। প্রাচ্য-প্রতীচ্য বিরোধ দূর হবে। সাদা-কালোর আধিপত্য দ্বন্দ্ব ধুলোয় মিশে যাবে। ধনী-গরিব কিংবা দুর্বল-শক্তিমানদের মাঝে প্রভুত্ব চিন্তার বিনাশ ঘটবে। মানবসমাজে স্বর্গীয় সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। যেই সাম্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন মহানবী সা. কাবার আঙ্গিনায় মক্কা বিজয়ের শুভদিনে। সেই ঘোষণায় সাদাপন্থী তার নিজ কবিলা কুরাইশদের দীর্ঘদিনের লালিত আভিজাত্যের মূলোৎপাটন করে বলেন- يا معشر قريش إن الله قد أذهب عنكم نخوة الجاهلية وتعظمها بالأباء الناس من أدم وأدم من تراب অর্থাৎ- হে কুরাইশ সম্প্রদায়, আল্লাহ মূর্খতা যুগের অহঙ্কার, গোত্রীয় গর্ব নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। কারণ সকল মানুষ আদম থেকে আর আদম মৃত্তিকা থেকে।
একই সুরে বিদায় হজ্জের শাশ্বত ভাষণে তিনি বলেছিলেন- ليس للعربي فضل على العجمي ولا للعجمي فضل على العربي كلكم أبناء أدم وأدم من تراب অর্থাৎ- অনারবের উপর আরবের এবং আরবের উপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তোমরা সবাই আদমের সন্তান। আর আদমের সৃষ্টি মাটি থেকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই মানবজাতিকে তার তাওহিদকে বুঝবার, অনুধাবন করবার এবং ধারণ করবার যথা সক্ষমতা দান করুন। শিরকমুক্ত নিখাদ তাওহিদের সমাজ ঘুচিয়ে দিক আগামীর সকল বন্ধ্যত্ব। আগামীর বিশ্ব হোক নির্ভেজাল তাওহিদের আলোয় আলোকিত।
তাওহিদের আলোক স্ফুরণ ছড়িয়ে যাক বিশ্ব মানবতার দ্বারে দ্বারে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।
লেখক : প্রফেসর, আরবি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়
আপনার মন্তব্য লিখুন