ঈদে, মায়ের আকুতি
হেলাল আনওয়ার
১৬ মে ২০১৭
সন্ধ্যা বাতিগুলো মিট মিট করে জ্বলে ওঠে
অবিন্যস্ত গৃহ নিস্তব্ধ নিথর
গৃহের ভেতর থেকে থেমে থেমে কেবলই ভেসে আসে
ভেসে আসে শোকাহত মায়ের বুক ভাঙা কান্নার সুর।
সে যেন পাগলিনী নির্বাক পাথরের মতো
তার চোখ দুটো মরুভূমির উত্তপ্ত ঝড়
সে ঝড়ে ক্রমাগত লণ্ডভণ্ড হয় তার সাজানো জীবন।
হারিয়ে যায় হাসি ভরা মুখের উজ্জ্বলতা
নিভে যায় প্রদীপের প্রদীপ্ত আলো
এভাবেই পার হয় তার সঞ্চিত শোকের বিষাক্ত জীবন।
বেদনার্ত জীবন তার ক্রমশ পুড়ে পুড়ে খাক হয়ে যায়
দু’চোখে তার উদ্বিগ্নতা আর অথৈ উৎকণ্ঠা-
কারা যেন ছিনিয়ে নিয়েছে তার আয়েশি বয়স
এখন সে সর্বস্বান্ত মৃতপ্রায় কপোতাক্ষের মতো।
পশ্চিম দিগন্তে সন্ধ্যা আবিরের ফাঁক দিয়ে
ঐতো হেসে ওঠে স্বপ্ন ভেজা এক ফালি চাঁদ
স্বপ্নবিলাসী বিহঙ্গরা ফিরে যায় হতাশা নিয়ে
আর সেই পাগলিনী মা?
সেতো ক্রমাগত বারুদ স্তূপে
জ্বলে পুড়ে ছাই হয় প্রতিদিন
চোখে তার আতঙ্ক আর ভয়ঙ্কর রাতের কাহিনী
মায়ের অশ্রুভেজা চোখ দুঃস্বপ্নের কালরেখা
কেবলই দুরাশা, বিষণœ বারুদের বিষাক্ত দাবদাহ
কিভাবে অজ¯্র শোকের মাঝে নিমজ্জিত মা
প্রাণ ভরে হাসতে পারে?
চাঁদতো জানে না- আমার মায়ের আকুতি
জানে না, স্বামী আর সন্তান হারানো বেদনায়
অনিমেষ ওষ্ঠাগত তার কোমল বুক
সাগরে ভাসা কূলহীন শেওলার মতো
কেবল তার নিরুত্তাপ চাহনি।
তার অশান্ত আত্মার এই আকুতিগুলো
উৎক্ষিপ্ত লাভার মতো ছড়িয়ে পড়ে
বিশ্ব মানচিত্রের অলিতে গলিতে।
তাহলে কেমন করে ঈদানন্দে ভাসতে পারে আমার মা!
কিভাবে হাসবে বলো নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে
কিভাবে পরিতৃপ্ত হবে শিরনি, ফিরনি আর পায়েস খেয়ে!
যে মা হারিয়ে ফেলেছে নির্মল হাসির সূত্রগুলো
যে মা স্বামী-সন্তান হারানোর বেদনায় মুহ্যমান
যে মা শোকের ভারে নুয়ে পড়ে প্রতিটি প্রহর
সে কি শাওয়ালের চাঁদের সাথে পুলক শিহরণে ভাসতে পারে?
আজ বিশ্ব মানচিত্রের দেহ যেন
রাবার আর বুলেট দিয়ে ক্রমশ মুছে ফেলতে ভীষণ ব্যস্ত
আর শোকাহত মার কান্নায় নির্লজ্জ শয়তানগুলো
কেমন বেহায়ার মতো হাসতে থাকে।
হে চাঁদ, তুমিতো শুনছো আমার মায়ের আকুতিগুলো
তবে জানিয়ে দাও-
আমার মায়ের বেদনার কথা
আর যেনো কোনো জননী পাগলিনীর মতো
সন্তান হারানোর বেদনায় পার না করে
তার যাপিত জীবন
আপনার মন্তব্য লিখুন