post

পবিত্র কুরআন অবমাননা পশ্চিমা অসভ্যতা

হারুন ইবনে শাহাদাত

১২ জুলাই ২০২৩

মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহ-রাববুল আলামিন প্রেরিত সর্বশেষ হেদায়াতগ্রন্থ আল-কুরআন। আল্লাহর অবাধ্য অনেক বান্দা যুগে যুগে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে-বিতর্ক করেছে। তাদের মধ্যে যারা সঠিক পথ পাওয়ার প্রত্যাশায় গবেষণার মন নিয়ে পবিত্র কুরআন আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়াতগ্রন্থ কিনা এ সত্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন, তারা সত্যের আলোয় আলোকিত হয়েছেন। যেমন : ড. সেদরিক রিব রুট, ড. গ্যারি মিলার, ড. শিবশক্তি স্বরূপজি, ড. মুরিস বুকাইলি প্রমুখ। সবার নাম এবং তাদের আলোকিত হওয়ার ইতিহাস লিখলে বিশাল একটি গ্রন্থে পরিণত হবে। আজকের আলোচ্য বিষয় সম্প্রতি সুইডেনে পবিত্র আল-কুরআন অবমাননার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান। তাই নিবন্ধেরমূল যে বিষয়, সে বিষয়ের ওপর আলোচনার তাগিদেই আলোকিত মানুষদেরকে নিয়ে অন্য কোনোদিন আলোচনার প্রত্যাশায় সম্প্রতি সুইডেনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে পবিত্র কুরআন অবমাননার মাধ্যমে কীভাবে হিংসার বিষবাষ্প ছড়িয়ে মানব ইতিহাস কলঙ্কিত করা হচ্ছে সেই বিষয়টির অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবো।


দুর্বৃত্তরা এবং সহযোগী সুইডেন

দুর্বৃত্ত সালমান মোমিকা পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনার খলনায়ক। সুইডেন সরকার ও আদালত তাদের সহযোগী। বিবিসির এক স্টকহোমের সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে ঈদুল আজহার দিনে (গত ২৮ জুন ২০২৩) ইরাক থেকে আসা অভিবাসী সালমান মোমিকা ও এক ব্যক্তি পবিত্র কুরআনে আগুন দেয়। সুইডেনের সরকারি ব্রডকাস্টার এসটিভি জানায় যে, এ ব্যক্তিটি কুরআন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। কুরআন পোড়ানোর অনুমতি নিতে আদালতে গিয়েছিল। পরে আদালত তাকে অনুমতি দেয়। কুরআন পোড়ানোর ঘটনার পর সুইডেন সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনার পর পরই জানানো হয়েছে যে, এমন ঘটনা অনভিপ্রেত হলেও নিষিদ্ধ নয়। অবশ্য বিশ্বব্যাপী ঘৃণা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠার পর সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সুইডেনের সরকার পুরোপুরি বোঝে যে, সুইডেনে বিক্ষোভের নামে কিছু ব্যক্তির সংঘটিত ইসলামফোবিক কর্মকাণ্ড মুসলমানদের জন্য আক্রমণাত্মক হতে পারে। আমরা এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করি এবং এসব কাজ কোনোভাবেই সুইডিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে না।’

ঘটনা ঘটানোর পর এমন বিবৃতি পশ্চিমা সভ্যতার নামে অসভ্যতা ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। কোনোভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে এমন ঘটনা পড়ে না। কারণ যা ইচ্ছে তা করার নামই যে স্বাধীনতা নয়, এ কথা সর্বজন স্বীকৃত। যা ইচ্ছে তা করা হলো স্বেচ্ছাচারিতা। স্বাধীনতার কথা বলে স্বেচ্ছারিতাকে প্রশ্রয় দিলে বিশ্বসভ্যতা হিংসার বিষাক্ত ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সত্য উপলব্ধি করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মুসলমানদের হৃদয়ে জ্বলছে ঘৃণা ও ক্ষোভের আগুন। সুইডেনে এর আগেও বেশ কয়েকবার পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন উগ্রপন্থী রাজনীতিবিদ রাসমুস পালুদান। শুধু সুইডেন নয় ডেনমার্কে গিয়েও একই ঘৃণিত কাজ করেন তিনি। উল্লেখ্য, পালুদান সুইডেন ও ডেনমার্কের দ্বৈত নাগরিক। এর আগে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করায় তুরস্কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয় সুইডেন ও ডেনমার্কে। সে বিক্ষোভেও পবিত্র কুরআন পোড়ান বিতর্কিত ও উগ্রপন্থী রাজনীতিবিদ পালুদান। বারবার একই ঘটনা ঘটালেও তার বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


পশ্চিমা অসভ্যতা এবং রাশিয়ার ক্ষমতার রাজনীতি

আধুনিকতা, সভ্যতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা বিশ্ব প্রতিনিয়ত ইসলামবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক মাইকেল ব্রেনার তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন, “পশ্চিমারা এখন মৃগী রোগগ্রস্ত। একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে ইসলামকে আঘাত করে মুসলিমদের মানসিক ভারসাম্য ও চিন্তানুভূতির বিকাশকে স্থবির করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা রটিয়ে ইসলামকে একটি ভয়ানক নির্যাতনের বাহন হিসেবে চিত্রায়িত করে বিশ্বের সব সমস্যা, যুদ্ধবিগ্রহ, অন্যায়-অবিচারের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এখানে আসলে মূল খেলোয়াড় হলো রাজনীতি ও ক্ষমতা।”

সম্প্রতি সুইডেনে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অধ্যাপক মাইকেল ব্রেনার মিথ্যে বলেননি। এ ঘটনার নেপথ্যেও লুকিয়ে আছে ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতার রাজনীতি। এর আগে গত জানুয়ারিতে তুরস্কের দূতাবাসের কাছে কুরআনে আগুন দেন অতি ডানপন্থী রাজনীতিক ও ইসলামবিদ্বেষী উসকানিদাতা রাসমুস পালুদান। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, সে আয়োজনটিতে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে অতি ডানপন্থী এক সাংবাদিক, যার সঙ্গে রাশিয়ার সরকার সমর্থিত একটি গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। ড্যানিশ-সুইডিশ দ্বৈত নাগরিক পালুদান এ ধরনের কাজের জন্য বেশ পরিচিত।          

সুইডেনের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পালুদানের এই বিক্ষোভের অনুমোদনের জন্য ৩২০ সুইডিশ ক্রোনা পরিশোধ করেন ক্রেমলিনের মদদপুষ্ট টিভি চ্যানেল আরটির সাবেক প্রতিবেদক চ্যাং ফ্রিক। এ ব্যক্তি এখন অতি ডানপন্থী সুইডেন ডেমোক্র্যাটদের হয়ে নিয়মিত গণমাধ্যমে হাজির হন। ফ্রিক এ বিক্ষোভের অনুমোদন ফি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও কাউকে কুরআন পোড়াতে বলার কথা অস্বীকার করেন। নিজের কাজের সমর্থনে স্থানীয় গণমাধ্যমকে পালুদান বলেন, ‘সুইডিশরা কেউ কেউ তাকে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কুরআন পোড়াতে বলেছিলেন’ বলে তিনি কাজটি করেছেন। দ্য ইনসাইডার ওয়েবসাইটকে এক সাক্ষাৎকারে বিক্ষোভে অর্থ জোগানোর কথা স্বীকার করে সাংবাদিক ফ্রিক বলেন, কিন্তু কুরআন পোড়ানো ‘আমার আইডিয়া ছিল না’। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালের পর রাশিয়া টুডের (আরটি) সঙ্গে তিনি নেই। সে সঙ্গে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি তিনি সমর্থন করেন না। 

সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলের সাবেক নেতা ফ্রিক অতি ডানপন্থী এই ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন। এর মূল কাজই ছিল সুইডেনে অভিবাসনের বিরোধিতা করা। ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে মজাও করেন তিনি। রাশিয়ায় সাম্প্রতিক সফরের সময় সংগ্রহ করা রুবল নোট দেখিয়ে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইনি আমার আসল বস! ইনি পুতিন!’ সুইডেন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যুক্ত একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন ফ্রিক। সুইডেনের তিন দলের জোটের প্রতি এর সমর্থন থাকলেও এটি সরকারের অংশ নয়। অবশ্য এবার বাকস্বাধীনতার নামে কুরআন অবমাননার সুযোগ দিয়ে সুইডিশ সরকার যখন গোটা মুসলিম বিশ্বের নিন্দার তীরে বিদ্ধ হচ্ছে, ঠিক তখন মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পবিত্র কুরআন বুকে জড়িয়ে তিনি বলেন, মুসলমানদের জন্য পবিত্র এই গ্রন্থ অবমাননা করা রাশিয়ায় গুরুতর অপরাধ। রাশিয়ায় পবিত্র কুরআনের অসম্মান ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ইস্যু টেনে গত ৫ জুলাই, এ কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দেরবেন্ত শহরের জুমা মসজিদ পরিদর্শনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। এর মাধ্যমে, ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে পশ্চিমাদের অসম্মানজনক কার্যক্রমের দিকে পুতিন ইঙ্গিত করলেন। বিষয়টির মধ্যে যে রাজনীতির গন্ধ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।


বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

সুইডেনের স্টকহোমে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ব। আরব ও মুসলিম দেশগুলোই শুধু নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পোপ ফ্রান্সিসসহ পশ্চিমারাও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা জানালেও ন্যাটোতে যোগ দিতে সুইডেনের পক্ষে কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্ককে এই বিষয়ে অনুমতি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, ‘ধর্মীয়গ্রন্থ পোড়ানো ঘৃণ্য ও কষ্টদায়ক কাজ। সব আইনগত বৈধ কাজই প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত নয়। আমরা সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানে তুরস্ক ও হাঙ্গেরির দ্রুত ‘হ্যাঁ’ ভোট প্রত্যাশা করছি।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান কড়াভাবে বলেছেন, ‘আমরা পশ্চিমাদের উচিত শিক্ষা দিয়ে বোঝাবো, মুসলিমদের অপমান করাটা চিন্তার স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না।’ এক  টেলিভিশন ভাষণে এরদোগান বলেছেন, ‘যতক্ষণ ইসলামোফোবিয়া ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের জয় না হচ্ছে, ততদিন আমরা যতটা সম্ভব কড়া প্রতিক্রিয়া জানাবো। সুইডেন সন্ত্রাসবাদীদের হাত ধরে চলছে। তারা কখনো তুরস্কবিরোধী, কখনো ইসলামবিরোধী, কখনো একসঙ্গে ইসলাম ও তুরস্কবিরোধী কাজ করে চলেছে।’

সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)’ জরুরি বৈঠক করে। ওআইসি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেন ব্রাহিম ত্বহা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের জরুরি প্রয়োগের বিষয়ে আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিরাম অনুস্মারক পাঠাতে হবে, যা স্পষ্টভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষের কোনো সমর্থনকে নিষিদ্ধ করে।’

কুরআন পোড়ানোর ঘটনাকে উসকানিমূলক, অসুস্থ বিবেচনাপ্রসূত ও অগ্রহণযোগ্য বলেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, ‘ইরানের সরকার ও জনগণ এ ধরনের অপমান সহ্য করে না। এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য সুইডেনের প্রতি আহ্বান জানাই।’ উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সৌদি আরব বলেছে, ‘বারবার এমন ঘৃণ্য কাজ করা হচ্ছে, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ কুরআন অবমাননাকে ‘একটি প্রকাশ্য উসকানি’ বলে মন্তব্য করে এক বিবৃতিতে ইইউ জানিয়েছে, সুইডেনে যেসব ‘আক্রমণাত্মক ও অবমাননাকর’ কাজ করা হয়েছে তাতে এ জোটের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি। এ ইউরোপীয় জোটটি দাবি করেছে, ‘বর্ণবাদ, বিদেশিদের-বিরোধিতা এবং এ সংক্রান্ত অসহিষ্ণুতার’ কোনো স্থান ইউরোপে নেই।

পোপ ফ্রান্সিস সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদপত্র আল-ইত্তিহাদকে বলেছেন, ‘কুরআন পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া মোটেও কাম্য নয় এবং এটি নিন্দনীয়।’ পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে। মুসলিম দেশগুলো কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে এর বিচার দাবি করেছে।


আল কুরআনের আলো কেউ নেভাতে পারবে না

যুগ যুগ ধরে ইসলামের শত্রুরা আল কুরআনের হেদায়তের আলো নেভাতে ষড়যন্ত্র করে আসছে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে এমন হাজার হাজার দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু কোনো দিনই তারা সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হতে পারবে না, ইন শা আল্লাহ। আলোচ্য নিবন্ধে এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো। কুরআনের ভুল খুঁজতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক ড. গ্যারি মিলার। তিনি ছিলেন কানাডিয়ান ধর্মপ্রচারক।  নাস্তিক লেখক সালমান রুশদির “স্যাটানিক ভার্সেস” বইটি পড়ার পর, খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক ড. গ্যারি মিলার চিন্তা করলেন তিনি কুরআনের ভুল খুঁজে বের করে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করবেন। ড. মিলার বলেছেন, “আমি ভেবেছিলাম পবিত্র কুরআনে অনেক ভুল খুঁজে পাবো। কারণ কিতাবটি নাজিল হয়েছিল আরব মরুচারীদের মধ্যে! আমার ধারণা ছিল কিতাবে মরুচারীদের সম্পর্কে সূরা পাবো! আর কিতাবটি যেহেতু ১৪০০ বছর আগের পুরনো তাই অহরহ ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। আর এ ভুলগুলো আমি বিশ্বব্যাপী প্রচার করব। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টা পড়ার পর আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম। বিশেষ করে সূরা নিসার ৮২ নাম্বার আয়াতটি আমাকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত করে। “তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে না? যদি এটি আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষ থেকে হতো, তাহলে তারা এর মধ্যে বহু বর্ণনাগত অসঙ্গতি খুঁজে পেতো।” (সূরা নিসা: ৮২)।

ড. মিলার আরও বলেন, “আমি খুব বিস্মিত হয়েছি যখন দেখেছি পবিত্র কুরআনে মরিয়ম (আ.) সম্পর্কে একটি বড় পরিপূর্ণ সূরা রয়েছে। আর এ সূরায় তাঁর এত ব্যাপক প্রশংসা এবং সম্মান করা হয়েছে যে, যা বাইবেলেও করা হয়নি।” তিনি বলেন, “ইসলামে নারীদের যে সম্মান দেওয়া হয়েছে তা অনেক মুসলিম নারীরা বুঝতে পারে না। তাই তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি নিয়ে ব্যস্ত। আপনার আমার সকলের উচিত কুরআন পড়া এবং এর অর্থ বুঝতে যথাসাথ্য চেষ্টা করা।” আসলে প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ইসলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় পবিত্র কুরআনের মুজিজা অনেক অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী। তাদের অপকর্ম ও ষড়যন্ত্র ড. গ্যারি মিলারের মতো চিন্তাশীল মানুষের আরো বেশি বেশি ইসলামের পতাকা তলে এসে ইসলামের ঝাণ্ডাকে উচ্ছকিত করবে ইন শা আল্লাহ।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সিনিয়র সাংবাদিক 

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির