post

২০২৪ সাল কোন পথে বাংলাদেশের অর্থনীতি

মাসুমুর রহমান খলিলী

১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

২০ থেকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়ার জন্য কয়েক ডজন রিকশার ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা, ভোর রাতে ঝিরঝিরে বৃষ্টির শীতে শতাধিক নিরন্ন হতদরিদ্রের কয়েকটি টাকা সাহায্যের জন্য মসজিদের সামনে অপেক্ষা করতে থাকা, কিছুটা কম দামে আটা-চাল-ডাল-তেলের জন্য ট্রাকের অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো আর কাজের জন্য শহরের শ্রম বিক্রির কেন্দ্রগুলোতে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে কাজ না পেয়ে হতাশ চোখে দিন মজুরদের চেয়ে থাকা- এসব ২০২৩ সালের শেষার্ধের খণ্ড চিত্রগুলোর একেকটি অংশ। এই চিত্র যে শুধু ঢাকা বা বড়ো শহরগুলোর নয় তা বোঝা যায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মানুষের ক্রমবর্ধমান স্রােত এবং বস্তি ও ফুটপাথে আশ্রয়হীনদের ভীড় বৃদ্ধি দেখে। সরকারিভাবে প্রকাশ হওয়া জীবনযাত্রার মূল্যবৃদ্ধির চিত্রেও দেখা যায় শহরের চেয়ে গ্রামে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি বাড়ছে। গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে করোনার পর শিক্ষার্থী কমে যাবার যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল সেটি অব্যাহত রয়েছে তিন বছর পার হয়ে যাবার পরও। এতে গ্রামে যে কাজ কমে গেছে তা বলা যায় সন্দেহাতীতভাবে।

ব্যক্তি পর্যায়ের এ চিত্র থেকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চিত্র মোটেই আলাদা কিছু নয়। সরকারি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনীতির যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয় তাতে গত দেড় দশক ধরে সব কিছুকে আকর্ষণীয় করে প্রদর্শনের প্রবণতা দেখা যায়। অর্থনীতির বিকাশ হার থেকে শুরু করে বেকার বা আধা বেকার মানুষের হার পর্যন্ত সবক্ষেত্রেই এই বিকৃতির দেখা মেলে। মানব সম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে এই সত্যের পরও যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে তার সাথে মাঠের বাস্তবতার কম মিল পাওয়া যায়।

উদ্বেগজনক বিষয় হলো অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটছে। দেশে বড়ো বড়ো অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে কিন্তু ডলারের অভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করতে না পারার কারণে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে সবকিছুর দাম। সরকারি হিসাবে মানুষের জীবন যাপনের খরচ বাড়ছে ১০ শতাংশ। কিন্তু চাল-ডাল-তেল-চিনি-সাবান, বাস ভাড়া কোনো কিছুর দাম বৃদ্ধির চিত্রের সাথে এর মিল নেই।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা যায়, দেশ এখন এমন এক দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান ক্ষেত্র রেমিটেন্স ও রফতানি আয় ক্রমেই কমে যাচ্ছে অথবা প্রবৃদ্ধিতে দেখা দিচ্ছে এক ধরনের স্থবিরতা। এতে সৃষ্ট ডলার সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে টাকার দাম হ্রাস ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরে আমদানি নির্ভর পণ্যসমূহের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে শুরু করেছে। সার কীটনাশকের মতো প্রাথমিক উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হওয়ায় কৃষি উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। আর সাধারণ মানুষের কেনার ক্ষমতা কমে যাবার কারণে বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে এক ধরনের মন্দা চক্রের মধ্যে আটকে পড়েছে বাজার ও অর্থনীতি। করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাইরের চাপ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এমনিতে বেড়ে চলছিল। তার ওপর রাজনৈতিক ক্ষমতা আশ্রিত দুর্নীতি, অপশাসন ও অর্থপাচার অবস্থার আরো অবনতি ঘটিয়েছে।

অর্থনীতির নীতি নির্ধারণে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর বলেছেন, তিনি নিজের ৩৬ বছরের পেশাগত জীবনে অর্থনীতির এমন দুরাবস্থা দেখেননি। আসলেই অর্থনীতিতে কী চলছে? ২০২৪ সাল বাংলাদেশের জন্য ঠিক কী বার্তা নিয়ে আসছে অর্থনীতির চিত্র? এসব দেখার চেষ্টা এই লেখায়।

সংকুচিত হচ্ছে অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সংকুচিত হতে শুরু করেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও তা অব্যাহত থাকার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুসারে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের স্থুল দেশজ উৎপাদন তথা অর্থনীতির আকার ছিল বিনিময় হারের হিসাবে ৪১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। পরের বছর এটি সাড়ে ১০ শতাংশ বেড়ে ৪৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বৃদ্ধির পরিবর্তে দেড় শতাংশের মতো কমে ৪৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অথচ এই সময়ে টাকার স্থির মূল্যে জিডিপি ৬.০৩ শতাংশ বৃদ্ধি দেখানো হয়। এই সময়টিতে জাতীয় অর্থনৈতিক হিসাবে টাকার মূল্যমান যে হারে কমেছে বলে দেখানো হয়েছে সে হারের চেয়েও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি কমার ফলে ডলারে জাতীয় অর্থনীতির আকার এভাবে কমে গেছে। এই সময়ে মাথাপিছু জিডিপিও কমে গেছে। চলতি অর্থবছরেও তা অনিবার্যভাবে আরো কমে যাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার কারণে। আর আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনীতির আকার ডলারে মূল্যায়ন করা হয় বলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই ছোটো হয়েছে বলেই দেখা যাবে।

অর্থনীতির আকার যখন ছোটো হয়ে যায় তখন বোঝা-ই যায় দেশের অবস্থা ভালো নয়। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি দিয়ে একটি দেশের অর্থনীতির আকার দেখা হয়। জিডিপির পাশাপাশি সম্পদ বা আয়ের সুষম বণ্টন থাকলে সে দেশের মানুষ ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের আয়ের বণ্টন পরিস্থিতি ঠিক কোনো পর্যায়ে রয়েছে তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সরকারিভাবে পাওয়া যায় না। তবে প্রতিবছর বাজেট দেওয়ার সময় জিডিপির হিসাবও প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো বছরই অর্থনীতির আকার এবারের মতো ছোটো হয়নি। ডলারের হিসাবে শুধু অর্থনীতিই ছোটো হয়নি একই সাথে সরকার যে বাজেট এই অর্থবছরে বাস্তবায়ন করেছে তাও সংকুচিত হয়ে গেছে। ডলারের হিসাবে এই সংকোচন রাজস্ব আয় ব্যয় ও উন্নয়ন খরচ সবক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়। আর বাজেটে সরকারের ব্যয় কমা মানে হলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়া। এর প্রভাব পড়ে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর।

বাজেট বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না

সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বড়ো দুর্বলতা হলো সরকার কোনোভাবেই বাজেটের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। সমাপ্ত অর্থবছরের প্রকৃত বাস্তবায়ন চিত্র কয়েক দিন আগে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে।

এতে পরিচালন ব্যয় ও উন্নয়ন ব্যয় এই দুটি বিস্তৃত বিভাগের অধীনে সরকারি ব্যয় দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায় জুন ২০২৩-এ সমাপ্ত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যে পরিচালনা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার মাত্র ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনের তুলনায় যেখানে ২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে বরাদ্দ মাত্র ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল শেষ পর্যন্ত সেই বরাদ্দেরও প্রায় ১৩ শতাংশ অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। এর অর্থ হলো প্রকৃত হিসাবে ২০২৩ অর্থ বছরে পরিচালনা ব্যয়কে অর্থের সংস্থান না থাকার কারণে সংকোচিত করতে হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের এ ধরনের অপারগ অবস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর দেখা যায়নি। খাতভিত্তিক ব্যয় প্রবণতায় দেখা যায় বরাদ্দে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি বা এর কিছুটা বেশি যেসব খাতে ছিল তার মধ্যে রয়েছে, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, সুদ প্রদান, আবাসন, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা, পরিবহন ও যোগাযোগ। অন্য দিকে সাধারণ জনসেবা, শিল্প, পাট, বস্ত্র, বাণিজ্য, শ্রম ও বৈদেশিক এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের চেয়ে ব্যয় ছিল অনেক কম।

সরকারের রাজস্ব বাজেটের চেয়েও দুর্বল অবস্থা উন্নয়ন বাজেটের। মূল বরাদ্দের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে ব্যয় পরিকল্পনা সংকুচিত করে আনার পরও সাড়ে ১৫ শতাংশে বেশি অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে উন্নয়ন বাজেটে। অর্থবছর শেষ হবার পর জুন ২০২৩ পর্যন্ত প্রকৃত ব্যয় দাঁড়ায় সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১২ শতাংশ ব্যয় করা যায়নি। এবার সেটি বেড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই ব্যয়ের বড়ো অংশ চলে গেছে সামাজিক অবকাঠামো (৪০.৬ শতাংশ) ও ভৌত অবকাঠামো (৪০.৩ শতাংশ) খাতে। এই দুটি খাতের ব্যয় নির্বাচনের আগে দুটি কারণে বাড়ানো হয়। প্রথমত, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জনতুষ্টি বৃদ্ধি পায়। আর দ্বিতীয় কারণ হলো এ ধরনের প্রকল্প থেকে টাকা আত্মসাতের সুযোগ বেশি থাকে। এই অর্থ নির্বাচনী কাজে লাগানো সম্ভব হয়। অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ, পরিবহন এবং যোগাযোগ, বিনোদন, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিষয়াদি এবং শিল্প, পাট, বস্ত্র, বাণিজ্য, শ্রম ও বৈদেশিক খাতে বরাদ্দের তুলনায় অধিক অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে এসব খাতে মোট বরাদ্দ ২০ শতাংশেরও কম।

বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতার বড়ো কারণ হলো রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে করতে না পারা। ২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে অনেক কমানোর পরও জুন ২০২৩-এ সমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। এসময়ে রাজস্বের বড়ো অংশ এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর থেকে (৮৭.৪ শতাংশ)। যা আগের অর্থবছরের আদায়ের তুলনায় মাত্র ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। টাকার স্থির মূল্যমান ও ডলারের হিসাবে বিগত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে আগের অর্থবছরে জিডিপি রাজস্বের অনুপাত যেখানে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছিল, তা এবার ৮ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি অর্থনীতিতে চরম এক স্থবিরতার আলামত। সাধারণভাবে সরকার যদি নিজস্ব সম্পদের ওপর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বেশি নির্ভরশীল হতে পারে, তাহলে বিদেশিদের কাছে কঠিন শর্তে উন্নয়ন সহায়তা নিতে হয় না। এতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্যে চাপও কমে যায়।

অর্থমন্ত্রলায়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শেষ পর্যন্ত অর্থ ব্যয় হয়েছিল ৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে বাজেটে অর্থ খরচ হয়েছে ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে টাকার চলতি মূল্যে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিগত অর্থ বছরের স্থির মূল্য নিরূপণে টাকার মূল্য সংকোচন ধরেছে পৌনে ৬ শতাংশ। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এসময়ে ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। স্থির মূল্যে বাজেট বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকলেও অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশ বিবেচনায় চলতি মূল্যে পৌনে ১২ শতাংশ বাজেট ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া উচিৎ ছিল। বাস্তবে বেড়েছে ৯ শতাংশ। আর ডলারের হিসাবে অবস্থা আরো খারাপ বলেই ২০২৩ অর্থবছরে আগের অর্থ বছরের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার থেকে কমে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। গত কয়েক দশকে ডলারে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় এভাবে কমেনি।

অন্যদিকে বাজেটের নিজস্ব সম্পদ আহরণ কমে যাওয়ায় পরনির্ভরতা বেড়েছে। ফলে সুদের দায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আগের অর্থবছরে যেখানে বাজেট বাস্তবায়নে এক লক্ষ ৮০ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল এবার সেখানে ঋণ নিতে হয়েছে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মোট বাজেট ব্যয়ের ৩৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ সরকার প্রতি একশত টাকা খরচ করছে ৩৫ টাকা ধার করে, যার মধ্যে ১৪ টাকা বিদেশ থেকে ধার করতে হয় আর ২১ টাকা নিজেদের জনগণের কাছ থেকে ধার করতে হয়। এই ধারের দায় শোধ করতে গিয়ে আবার বাজেটের ২০২৩ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা মোট বাজেট ব্যয়ের ১৫ শতাংশের মতো। এই সুদের অঙ্ক মেগা প্রকল্পগুলো সুদ পরিশোধ শুরু হলে আগামীতে অনেক বেড়ে যাবে। তখন দেখা যাবে বাজেটের প্রতি ১০০ টাকা ব্যয়ের মধ্যে ২৫ টাকা বা তার চেয়েও বেশি সুদ দেবার জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে।

দেশি বিদেশি ঋণে জর্জরিত দেশ

দেশি বিদেশি ঋণ নিয়ে বড়ো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়ন আর বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে দুর্নীতির জন্য ভয়াবহ মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ১৪ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ৩২২ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শুরুতে ২০০৯ সালের জুন মাসে বিদেশি ঋণ ছিল ২৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বা ৩২২ শতাংশ বিদেশি ঋণ বাড়ার পেছনে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য বিদেশী ঋণের ওপর দেশটির ক্রমবর্ধমান নির্ভরতাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ সাধারণত বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং প্রধান বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে।

বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক ঋণ রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ বছরে ভারতের বিদেশী ঋণ প্রায় ৮৩ শতাংশ, পাকিস্তানের ১০১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ১১৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ২১৩ দশমিক ছয় শতাংশ।

আমদানির তুলনায় রপ্তানি আয় বেশি হবার রেকর্ডের পরও কেন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এভাবে কমছে তার জবাব মিলে বৈদেশিক দায় দেনার চিত্রে। মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ৯৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে এই বিদেশি দায় ১০০ বিলিযন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ৩ বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক দায় বৃদ্ধি পায় ৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকারি বেসরকারি স্বল্প মেয়াদি ঋণ রয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের মতো। যা পরিশোধের চাপ থাকে অনেক বেশি। স্বল্প মেয়াদি দায়-এর মধ্যে মেয়াদ পূর্ণ হওয়া আমদানির মূল্য পরিশোধ পিছিয়ে দেওয়ার অঙ্কও রয়েছে। সময় মতো পরিশোধ না করার কারণে এজন্য বাড়তি সুদ গুনতে হয়।

এদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে, অথচ কমেছে বিদেশি সহায়তা ছাড়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ- ইআরডির তথ্যানুসারে, গত জুলাই-আগস্ট মাসে বিদেশি ঋণ এসেছে ৭৪ কোটি ডলার। গত বছর একই সময়ে ঋণ এসেছিল ৮৬ কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এসময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার।

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের অবস্থাও একই রকম। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ সরকারের প্রথম পূর্ণ অর্থবছরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এটি ২০২৩ অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৭২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৮৫ কোটি টাকায়। আর বাংলাদেশের নিট পরিসম্পদ একই সময়ের ব্যবধানে ঋণাত্মক ৩৭ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা থেকে ৮৯৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক তিন লক্ষ ৩৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকায়।

সরকার অব্যাহতভাবে প্রচার করছে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এ উন্নয়নে যে অর্থনৈতিক ফল পাওয়া যাচ্ছে তা দেশি-বিদেশি ঋণের উল্লম্ফন এবং রাষ্ট্রের পরিসম্পদের ঘাটতির সাথে মেলালে প্রকৃত উন্নয়নের চেয়েও র্দ্নুীতির উন্নয়নই বেশি দেখা যাবে। 

বৈদেশিক খাতে ভঙ্গুরতা

বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি মোটা দাগের বৈশিষ্ট্য হলো এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে বিশেষভাবে সমন্বিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করতে হয়। ডলারের সংকটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি ২১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২০ শতাংশের মতো কম। আমদানির এভাবে রাশ টেনে ধরার মূল কারণ হলো ডলারের আয় বা প্রাপ্তি কমে যাওয়া। 

চলতি অর্থ বছরের ৫ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আসে মাত্র ৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের প্রায় একই পর্যায়ে রয়েছে। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয় ২২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১ শতাংশের মতো বেশি। এভাবে ডলার প্রাপ্তির দুই প্রধান উৎসের দুরাবস্থায় ডলার সংকট এসময়ে এতটা তীব্র হয় যে ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে নিত্যপণ্যের এলসি খুলতে পারেনি। এর ফলে সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে কোনো এক প্রান্তিকে সবচেয়ে কম আমদানির রেকর্ড হয় চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে। এসময়ে আমদানির রাশ টেনে ধরার মূল কারণ হলো বৈদেশিক বিনিময় হারে সৃষ্ট চাপ ও রিজার্ভের পতন ঠেকানো। এসব পদক্ষেপের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে বৈদেশিক মূদ্রার লেনদেনের চলতি হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঘাটতির পরিবর্তে সোয়া ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি উদ্বৃত্ত হয়েছে। কিন্তু চলতি হিসাবে এই উদ্বৃত্তের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

গত বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর নিট হিসাবে সেই রিজার্ভ নেমে এসেছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের কোটায়। যা সেপ্টেম্বরের জন্য আইএমএফ নির্ধারিত ২৫.৩ বিলিয়ন নিট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম। কোনো কোনো সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে সরকার বিদেশি দায় মেটাতে পারে এমন ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকায় আইএমএফ রিজার্ভ বজায় রাখার শর্ত সংশোধন না করলে  হয়তো বা সংস্থার পরের কিস্তির ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে।

সাধারণভাবে একটি দেশ লেনদেনের চলতি হিসাব থেকে তার বৈদেশিক অর্থপ্রদান করে। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে গেলে আর্থিক হিসাব থেকে সে অর্থপ্রদান করে। আর যদি এই হিসাবও ঋণাত্মক হয়ে যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্থ প্রদানের শেষ বিকল্প হয়ে ওঠে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের চলতি হিসাবের প্রধান উপাদান হলো পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানি আয় ও বর্তমান স্থানান্তর। অন্যদিকে, আর্থিক হিসাব হলো একটি দেশের অর্থপ্রদানের ভারসাম্যের একটি উপাদান যা আর্থিক সম্পদ সম্পর্কিত অনাবাসীদের দাবি বা দায় কভার করে। আর্থিক হিসাবের উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে, সরাসরি বিনিয়োগ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ও রিজার্ভ সম্পদ।

বৈশ্বিক বাজারে ক্রমবর্ধমান তহবিল ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। এ ছাড়া, জাতীয় নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগের গতি কমে যায়। সার্বিক লেনদেনের ভারসাম্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

রপ্তানি খাতে শঙ্কা

রপ্তানি খাতে নানা ধরনের শঙ্কাজনক খবর আসছে। ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একতরফা নির্বাচনের জন্য বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেবার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি সাংবাদিকদের বলেছেন, তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আদেশ কমার সাথে সাথে কিছু বিদেশি ক্রেতা এই শর্তে পোশাকের ক্রয় আদেশ দিচ্ছেন যে যদি বাংলাদেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলে তারা সে রফতানি আদেশ বাতিল করবেন। এমনকি পোশাক জাহাজীকরণ করার পরও যদি এই নিষেধাজ্ঞা আসে তাহলেও পোশাকের দাম তারা পরিশোধ করতে পারবেন না। 

এরপর থেকে ব্যাংকগুলো পোশাক রফতানির ব্যাক টু ব্যাক এলসি গ্রহণে বিব্রত বোধ করতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বাজারে এর মধ্যে রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। আমেরিকান বাজারে এই বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ পোশাক রফতানি কমে গেছে। পোশাকের বাজারে শ্রম মানের ইস্যুকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে এ খাতের আয় শঙ্কাজনকভাবে কমে যাবে। আর এর সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যোগ দিলে পরিস্থিতি বাংলাদেশের রফতানি খাতের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছর শুরু হবার পর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। কিন্তু নভেম্বরে এসে এক মাসেই রফতানিতে ৬ শতাংশের বেশি ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। অথচ আগের বছর একই মাসে রফতানিতে ২৬ শতাংশ ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এর ফলে নভেম্বর শেষে চলতি অর্থ বছরের ৫ মাসের রফতানি প্রবৃদ্ধি মাত্র এক শতাংশে নেমে আসে এবং ৫ মাসের রফতানি আয় দাঁড়ায় ২২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এসময়ে রফতানির অর্থ প্রত্যাবাসনের হিসাব ধরা হলে চিত্রটি আরো বেশি হতাশাজনক হবে। যে পণ্য রফতানি করা হয় এখন গড়ে তার ২১ শতাংশ অর্থ দেশে আসছে না। অর্থাৎ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো রফতানির যে হিসাব দিচ্ছে তার সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসা রফতানি আয়ের ২১ শতাংশের বেশি ব্যবধান থেকে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতে, তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানির সম্ভাবনা অনেকখানি অনিশ্চিত। অধিকাংশ  রিপোর্টেই এ ব্যাপারে হতাশাবাদী চিত্র রয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির মূল্য নির্ধারণ করার জন্য দুটি প্রধান উপাদান রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো, উন্নত অর্থনীতির কর্মক্ষমতা এবং অন্যটি হলো চীনা পোশাকের রফতানি কীভাবে বিকশিত হয় সেটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা পোশাকের ব্যাপারে আমেরিকান সরকার নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আসছিল। এর সুবিধা পেয়েছিল বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর পোশাক খাত। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে সানফ্রান্সিসকোতে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনের পর মার্কিন বাজারে চীনা পণ্যের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার ব্যাপারে সমঝোতার কথা জানা যাচ্ছে। এটি বাস্তবে রূপ নিলে বাংলাদেশের পোশাক খাতে যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কোনো নিষেধাজ্ঞা না দিলেও রফতানি কমার বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকবে। আর একই সাথে রেমিটেন্স কম আসতে থাকলে আমদানিকে আরো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠবে।

ডলারে অস্থিরতার বিপদ

ডলারের দামের অস্থিরতা অর্থনীতির সার্বিক অস্থিরতার ইঙ্গিতবহ বলে মনে করা হচ্ছে। গত দেড় বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশের মতো। এর সুফল রপ্তানিকারকেরা পাবার কথা থাকলেও রফতানি চিত্রে সেটি দেখা যাচ্ছে না। এই সময়ে প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্স-এ কোনো প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রফতানি খাতের আয়েও যদি বিরূপ অবস্থা সৃষ্টি হয় তাহলে বিনিময় হার ও রিজার্ভ দুটিই চাপে পড়বে। এই চাপ মোকাবিলা করতে হলে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যার কারণে আমদানিকৃত সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকবে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

২০২২ সালের আর্থিক বছর জুড়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির মধ্যে বিভ্রান্তি এবং ভিন্ন ভিন্ন আচরণ ছিল। স্ট্যান্ডার্ড ম্যাক্রো-ইকোনমিক অ্যাকশনের পরিবর্তে, বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০ বছর আগের পদ্ধতিতে ফিরে এসে আমদানি কমাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানির ব্যয় বাড়াতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করার পরিবর্তে বিভিন্ন বিশেষ শর্ত প্রবর্তন করার ধারণাটি আমদানিকে আরও ব্যয়বহুল করে।

তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রার ২০ শতাংশের বেশি অবমূল্যায়ন করেছে। এতে অবশ্য আমদানি ব্যয় অনেক বেড়েছে। এই দামের প্রভাব সম্ভবত আমদানি হ্রাসে প্রশাসনিক পদক্ষেপের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একই সাথে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ কমিয়েছে। ফলাফল হলো এলসি খোলা হ্রাস এবং উৎপাদনের সংগঠনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি। জ্বালানির প্রাপ্যতার ওপর বিধিনিষেধ উৎপাদন হ্রাসে অবদান রাখে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বিভ্রান্তি ও জ্বালানি সরবরাহে বিধিনিষেধ রপ্তানির জন্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অ্যামচেমের সাবেক সভাপতি ফরেস্ট এম কুকসন মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ডলারের মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। পাঁচ বছরে দ্বিগুণ। এর মধ্যে প্রথমে ৫ থেকে ৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পাবে এবং পরে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। প্রকৃত অর্থে প্রায় ১০ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে মোট দেশীয় পণ্যের বৃদ্ধির উন্নতি হবে এবং অর্থপ্রদানের ভারসাম্য প্রায় ১১০-১১৫ টাকা/ডলারের বিনিময় হারে বজায় রাখতে হবে। বাস্তবে এখনই খোলাবাজারে ১৩০ টাকার ওপরে ডলার লেনদেন হচ্ছে আর টাকার প্রকৃত বিনিময় হার বিবেচনায় আনা হলে ডলারে দাম বেড়ে দেড়শত টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে যে দেশগুলো বাহ্যিক অর্থের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, সেগুলোর ওপর মেগা প্রকল্পগুলো ঋণের বোঝা বাড়ানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড়ো প্রকল্পের বিদেশি ঋণ পরিশোধ ভবিষ্যতে নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড়ো ও মেগা প্রকল্পগুলো সময়মতো ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা না গেলে বিদেশি দায়-দেনা পরিশোধে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এছাড়া গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্ধিত বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময়ও এগিয়ে আসছে। ২০২৪ সাল থেকে এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। ২০২৬ সাল নাগাদ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। তাই ২০২৪  থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে বড়ো ধাক্কা আসতে পারে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পরিকল্পনা দরকার।

বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হচ্ছে বৈদেশিক ঋণে। দেনার দাবিদার হিসেবে প্রথম সারিতে রয়েছে রাশিয়া। এরপর জাপান, চীনসহ অন্যান্য দেশ। ২০২৬ সালে সরকারি বড়ো প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন ও জাপানকেই বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া এসব প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দায়-দেনার পরিস্থিতি জটিল হওয়া এবং বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারগুলোও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিককালে শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে যে আর্থিক বিপর্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে সেসব দেশও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথেই হেঁটেছে। সেজন্য বাংলাদেশেও এই আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগসহ দেশের ২০টি বড়ো প্রকল্পে প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৫ কোটি বা ৭০ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে, যার প্রায় ৬২ শতাংশ বিদেশি ঋণ।

বৈদেশিক ঋণের গ্রেস পিরিয়ড এর দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, তারপর জাপান ও রাশিয়া। তাই ঋণ পরিশোধের চাপটা আগে চীন থেকেই আসবে। আশঙ্কার কথা, বৈদেশিক দায়-দেনা আস্তে আস্তে বাড়ছে। ২০১৮ সালের পর দায়-দেনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আর মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড়ো অংশ ৩৬.৬ শতাংশ যাবে রাশিয়ার কাছে, এরপর জাপানে যাবে ৩৫ শতাংশ এবং চীনের কাছে প্রায় ২১ শতাংশ। পরিমাণের হিসেবে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের সময়সূচি অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে চীনকে। এই বিরাট ধাক্কা সামলাতে কর আহরণ বাড়াতে হবে।

ঝুঁকিসীমার নিচে থাকলেও বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা, ইউরোপকেন্দ্রিক ঋণ জটিলতা ও পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নমনীয় ঋণের উৎসও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। ইআরডি’র তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবৎ বাংলাদেশ যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করেছে। এমনকি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কিস্তি পুনঃতফসিলীকরণের জন্য বাংলাদেশের কখনও আবেদন করার প্রয়োজন হয়নি। তবুও কঠিন শর্তের ঋণের ঝুঁকি প্রশমনে ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিসের সঙ্গে সংগতি রেখে ঋণের নমনীয়তা পরীক্ষা ও অনুমোদনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি

বাংলাদেশে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি বা মূল্যষ্ফীতির হিসাব করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। তবে এই হিসাবে জীবন যাত্রার যে ব্যয় বৃদ্ধি দেখানো হয় তার সাথে বাস্তব অবস্থা মিলে না। এ জন্য অর্থনীতিবিদরা এ হিসাবে আস্থা কমই রাখেন। কিন্তু বিকল্প কোনো সূত্র না থাকায় অন্য অনেক পরিসংখ্যানের মতো এই তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয় সবাইকে ।

গত নভেম্বর নাগাদ দেশে ১২ মাসের আবুর্তক গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছে। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য চারটি কারণ দেখিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, সরবরাহব্যবস্থায় বিঘœ ও কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ।

অর্থনীতির সংকট কাটাতে গত দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি থেকে বাঁচতে আগ্রাসীভাবে সুদহার বাড়িয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রা সরবরাহ কমানো। বাংলাদেশ একই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে দেড় বছর পর। কিন্তু আমদানি নিয়ন্ত্রণ আর বিনিময় হার বাড়ানোর কারণে এসব উদ্যোগে কোনো ফল আসেনি। আন্তর্জাতিক বাজারের কোনো পণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও স্থানীয় বাজারে টাকার অংকে তা বেড়ে যায় । এর প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে।

অন্য দিকে এক বছর ধরেই মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। আর ১০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের গড় প্রকৃত আয় কমেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে কাটছাঁট করতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষদের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও বাংলাদেশ পারছে না।

এর বাইরে আরেকটি উদ্বেগের কারণ হলো সিন্ডিকেট। হঠাৎ করে একেক সময় একেকটি খবর বা গুজবের পর আকস্মিকভাবে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম দেড়শ ভাগ বেড়ে ২৩০ টাকায় উন্নীত হয়। একই অবস্থা চিনিসহ অন্য বেশ কিছু পণ্যে দেখা যায়। এসব ভোগ্যপণ্যের দাম দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিযোগি দেশগুলোর সাথে একেবারেই মিলে না। সরকারের আনুকুল্যপ্রাপ্ত অলিগার্ক যারা ব্যাংক ও অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরকেই এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হিসাবে পাওয়া যায়।

উদ্বেগের কারণ খেলাপি ঋণ

ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে মোট বকেয়ার ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় গ্রস ও নিট দুই খেলাপি ঋণই বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো খেলাপি ঋণের যে হিসাব দেখানো হয় বাস্তব চিত্রে তার কোনো প্রতিফলন থাকে না। অনেক ঋণ অনিয়মিত বা খেলাপি হবার পরও ব্যাংকগুলো প্রভাবশালীদের চাপে সেই ঋণকে নিয়মিত দেখায়। আবার ব্যাংক মালিকরা বাড়তি মুনাফা দেখিয়ে ডিভিডেন্ট পাবার জন্যও অনেক সময় খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য নির্বাহীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে করে ব্যাংকের পরিসম্পদ পরিস্থিতির কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়। ব্যাংকের হিসাবে যে তারল্য দেখানো হয় বাস্তবে সেটি পাওয়া যায় না। কোনো এক সরকার এসে কঠোরভাবে নিরীক্ষা করলে দেখা যাবে গ্রাহকদের খেলাপি ঋণে তহবিল আটকে যাবার কারণে ব্যাংক আর আমানত ফেরত দিতে পারছে না।

বলা হয়ে থাকে, কোনো কোনো ব্যাংকে যাদের নামে ঋণ মঞ্জুর করা হয় তাদের অতিরিক্ত জামানত তো ঠিকমতো থাকেই না বরং তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সংরক্ষণ করা হয় না। ব্যাংক মালিকরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সাধারণ স্টাফদের নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তাদের নামে শত কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করিয়ে নেয় অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাদের নামে ঋণ নেওয়া হয় তারা এসব কিছু জানতেই পারেন না। সাধারণভাবে দেখা যায়, ব্যাংকের মালিকরা যেভাবে বলে সেভাবেই ব্যাংকারদের কাজ করতে হয়। আবার এসব মালিকদের সাথে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সম্পর্ক থাকার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণরও তাদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন। এসব বিষয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ সোচ্চার হয়েও কোনো প্রতিকার করতে পারেননি। তারা খেলাপি ঋণ আদায় দ্রুততর করার ওপর গুরুত্ব দেন। তারা মনে করেন, খেলাপি ঋণ আদায় ছাড়া ঋণ বিতরণের পরিধি বাড়ানো সম্ভব নয়। সরকারের আনুকূল্যে থাকা অলিগার্কের হাতে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ থাকায় তাদের অনিয়মের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারে না।

এখনকার প্রদর্শিত খেলাপি ঋণের হার অবশ্য ব্যাংকের প্রকৃত অকার্যকর ঋণ নয়। সঠিকভাবে হিসাব করা হলে কম করে হলেও খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এর মানে হলো যে খেলাপি ঋণ দেখানো হয় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ তার তিনগুণ। আইএমএফও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে খেলাপি ঋণ প্রদর্শন করে সে পরিসংখ্যানের সাথে একমত নয়।

অর্থ পাচারের ভয়াবহ রূপ

অর্থ পাচার বাংলাদেশের একটি বড়ো সমস্যা। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই কমবেশি অর্থ পাচার হয়, কিন্তু এশিয়া মহাদেশে বাংলাদেশের চেয়ে এত বেশি অর্থ পাচার অন্য কোনো দেশ থেকে হয় না বলে উল্লেখ করা হয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। জিএফআইয়ের দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই অর্থ পাচার বাড়ছে। অর্থ পাচারের ২০০৯ সালে যে অংক ছিল ৫১০ কোটি ডলার তা ২০১৫ সালে উন্নীত হয় ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলারে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে বা আমদানি-রফতানির ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মোট পাচারের ৮০ শতাংশ ঘটনা সংঘটিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার অত্যধিক বেড়ে গেছে। প্রবাসী আয়ের মাত্র ৫০ শতাংশ আসে বৈধ পথে, বাকি প্রায় ৫০ শতাংশই বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

হুন্ডি ব্যবসায়ীরা দেশে নগদে প্রবাসীর নিকটজনকে টাকা পরিশোধ করছে আর বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না এনে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার বহু ব্যবসায়ী তাদের রফতানি আয়ের একটা বিরাট অংশ বিদেশে রেখে দিচ্ছে। বাংলাদেশের পাচারকারীরা বৈদেশিক মুদ্রা প্রধানত আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মালয়েশিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশের এই হুন্ডি মার্কেটও সরকারের আনুকূল্যপ্রাপ্ত অলিগার্করা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের হাতে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকায় এই অবৈধ বাণিজ্য সহজেই পরিচালনা করা সম্ভব হয়।

দেশে দুর্নীতি, ঋণখেলাপি ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারি নিষ্ক্রিয়তা অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে বিদেশে অর্থ পাচারের কারণে রেমিট্যান্স কম আসছে, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছে। 

মানুষ কাজ পাচ্ছে না

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে দৃশ্যমান বড়ো সমস্যা হলো কর্মসংস্থানের অভাব। শিক্ষিত-অশিক্ষিত কর্মক্ষম ব্যক্তিদের বড়ো একটি সংখ্যা এখন কাজ পাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বেকারত্বের হার আগের ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে। সংখ্যা হিসাবে ২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে যেখানে ২৬ লাখ ১০ হাজার বেকার ছিল, সেটি এ বছরের একই সময়ে নেমে এসেছে ২৪ লাখ ৩০ হাজারে। তবে বেকার জনগোষ্ঠীর হিসাবে অদ্ভুত এক মানদণ্ড অনুসরণ করে বিবিএস। এ মানদণ্ড অনুসারে যারা মাসব্যাপী কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু ৭ দিনে  কমপক্ষে এক ঘণ্টার কাজও পাননি, তারাই বেকার হিসাবে গণ্য হন। এ হিসাবে সপ্তাহের ৬ দিনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টা কাজ করতে পারলে তিনি বেকার হবেন না। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলে সেদিনের আয় দিয়ে ঐদিনে তার খাবার জোগাড় করাও কঠিন।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. এ কে এস মুরশিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মাসে একদিন কয়েক ঘণ্টা কাজ পেলেই তাকে আর বেকার না বলার এ পদ্ধতিতে বেকার হিসাব করলে বেকারের সংখ্যা তো কম হবেই। বিবিএস যেভাবে জরিপ করে, তাতে তো দেশে এখন বেকার নেই বললেই চলে। শতকরা তিন-চার ভাগ। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।’

সরকারি পরিসংখ্যান আর বেসরকারি গবেষণা রিপোর্টের হিসাবের মধ্যেও বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার থাকছেন। আর ২০১৯ সালে বিআইডিএসের এক গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক চাকরিতে, ১৮ দশমিক ১ শতাংশ খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত।

গত বছরের আগস্টে টিআইবি জানায়, দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শকতরা ৪৭ ভাগ বেকার। ওই বছর একই সময়ে আইএলও জানায়, বাংলাদেশি তরুণদের বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ, যদিও জাতীয় পর্যায়ের বেকারত্বের হার তখন দেখানো হচ্ছিল  মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশের নীচে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুসারে, বাংলাদেশে এখন মোট প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে ১৫ ও তদুর্ধ্ব কর্মক্ষম জনসংখ্যা  হলো ১২ কোটি ১০ লাখ যার মধ্যে ৫ কোটি ৯৭ লাখ পুরুষ ও ৬ কোটি ১৩ লাখ মহিলা।

২০২৪ অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ে দুরাবস্থা 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের চার মাসের হিসাব প্রকাশ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সম্পদ জোগানের চাপ ও আইএমএফ এর শর্ত সামলে এনবিআর কিছুতেই শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। এনবিআরের সাময়িক হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এক লাখ ৩ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। চলতি মূল্যে যা আগের অর্থবছরের চেয়ে সোয়া ১৪ শতাংশ বেশি। অথচ এনবিআরের জন্য চলতি সালের বাজেটে যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩৭ শতাংশের বেশি রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।  

সরকার এনবিআরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে। চার মাসে যেখানে ১৪ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়েছে সেখানে নির্বাচনের বছর ও স্থবির অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাকি সময়ে রাজস্ব আদায় আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে। এটি কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ফলে অর্থবছর শেষে সংশোধিত বাজেটে আরো একবার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে সে লক্ষ্যমাত্রার ১৫ শতাংশের বেশি অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।

একই অবস্থা হবে সার্বিকভাবে ২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নেও। ২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তাতে নতুন অর্থবছরের মূল বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যয় বাড়াতে হবে ৩৫ শতাংশের বেশি। ২০২৩ অর্থবছরে যেখানে ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বাজেট ব্যয় করা হয়েছে, সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘোষিত ব্যয়ের লক্ষমাত্রা হলো ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরে মূল বাজেটের বিপরীতে ব্যয় করা গেছে ১৭ শতাংশের মতো কম। এবারের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৫ লক্ষ কোটি টাকা মোট রাজস্ব আদায়ের টার্গেট রাখা হয়েছে। এটি বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ রাজস্ব বাড়াতে হবে, যা কার্যত অসম্ভব। আর আয় না হলে বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করার মতো অবস্থা এখন রাষ্ট্রের নেই।

অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই অর্থনীতির সূচকগুলো অস্থির হয়েছে। দেখা দেয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি আর কমে যায় টাকার মান। সে সাথে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও প্রতি মাসে কমতে থাকে আশঙ্কাজনকভাবে। কিন্তু তখনো নীতিনির্ধারকেরা প্রতিনিয়ত বলে চলেন যে, বহির্বিশ্বের নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে অর্থনীতির ওপর এই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এই সংকট আমদানিকৃত, দেশের অভ্যন্তরীণ কারণে ঘটছে না। একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। 

কিন্তু এখন সেই বাংলাদেশ ব্যাংকই বলছে, দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে কেবল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নয়। বরং এর জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ছয় কারণও দায়ী। এই ছয় কারণ হচ্ছে অতিমাত্রায় তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, অপ্রত্যাশিত বন্যার মতো আবহাওয়াজনিত প্রতিবন্ধকতা; সিন্ডিকেট, মজুতদারি, মূল্য কারসাজি, কৃত্রিমভাবে ঘাটতি দেখানো ইত্যাদির মতো অনৈতিক কার্যক্রম; দুর্বল করপোরেট পরিচালনা; ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সংস্কৃতি; জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি ও অর্থ পাচার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের এসব কারণেই দেশের অর্থনীতিতে বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং উচ্চ খেলাপি ঋণ এর মতো তিনটি বড়ো চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি আগের অবস্থায় ফেরার আগে ২০২৪ অর্থ বছরে কমে ৫.৬ শতাংশে দাঁড়াবে এবং স্বল্প মেয়াদে মুদ্রাস্ফীতি উর্ধ্বমুখী থাকবে। 

মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। তবে সুদের হার নির্ধারিত করে দেওয়ার কারণে সেটি খুব একটা কাজ করেনি। এখন এটি সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে, বাণিজ্যে অর্থায়নের চাহিদা কমেছে এবং অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের উচ্চহারে ঋণ নেওয়ার কারণে সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি ও আমানত কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট প্রকট হয়েছে। সুদের হার কম থাকা এবং ভোক্তাদের আস্থাহীনতার কারণে আমানত কমেছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা আরো গভীর হয়েছে। স্বল্প মেয়াদে জ্বালানির অতিরিক্ত দাম ও অন্যান্য খাতে এর প্রভাব, টাকার একটানা অবমূল্যায়ন, আমদানির ওপর চলমান কঠোরতা, ব্যাংকগুলোতে মার্কিন ডলারের ঘাটতিসহ নানা কারণে ২০২৪ অর্থবছরেও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তি থাকবে। ২০২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার সরকারি পদক্ষেপ এ খাতে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে। 

২০২৪ অর্থবছরের এই চিত্র দেখা যাবে সবকিছু যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে। আর রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি বেড়ে যায় এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মতো কোনো কিছু এসে পড়লে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেউলিয়াত্বে চলে যেতে পারে। আইএমএফ হয়তো এমন পরিস্থিতি চাইবে না যাতে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়ে না পড়ে। এতে শর্ত পরিপালন না হলেও আইএমএফ-এর পরের কিস্তির ঋণ অবমুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক একনায়কত্ব ও কর্তৃত্ববাদী শাসন আর সে সাথে অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও সম্পদ পাচার দেশের অর্থনীতিকে যেখানে নিয়ে গেছে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়া অনেক বড়ো চ্যালেঞ্জে পরিণত হতে পারে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির