post

জাতিবিধ্বংসী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রাম অনিবার্য

রাজিবুর রহমান

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এই ভূখণ্ডের দূর অতীতের দিকে তাকালে আমরা ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার সোনালি ইতিহাস দেখতে পাই। আরব মুসলিম বণিক, সুফি-সাধক এবং ধর্ম প্রচারকগণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ইসলামের প্রচার শুরু হয়েছিল উপমহাদেশে। ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজির মাধ্যমে এই অঞ্চলে মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। তিনি মুসলিম দর্শনের ভিত্তিতে একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা মুসলিম শাসনকালে ৬০০ বছরব্যাপী চালু ছিল। মুসলিম শাসকরা সাম্রাজ্যের সর্বত্র অসংখ্য মক্তব, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এরও পূর্বে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত দেশে যে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেছিল, তা ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলা ও ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই পরিচিতি লাভ করেছিল ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা। ধর্মভিত্তিক মাদরাসা শিক্ষাকেই তখন প্রাধান্য দেওয়া হতো, যাতে সঠিকভাবে ইসলামী আকাইদভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করে খাঁটি মুসলিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।

১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের হাতে পরাধীন হওয়ার পর কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। লর্ড ম্যাকলের ভাষায়, ‘এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা হবে, যার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মানুষগুলো হবে রক্ত-বর্ণে ভারতীয় কিন্তু রুচি, চিন্তা, নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে ইংরেজ।’ ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি হওয়া ১১টি শিক্ষানীতির মাধমে মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষানীতির ধ্বংস সাধন করা হয়। ১৯৪৭ সালে পৃথক ভূখণ্ড নিয়ে মুসলমানরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে। পৃথক আবাসভূমিতে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে গড়ে উঠবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা; এমনটিই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের চরমভাবে হতাশ করেন। পাকিস্তান আমলে ৬টি শিক্ষা কমিশন গঠিত হলেও উক্ত কমিশনসমূহের সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় আন্দোলনের সূচনা হয়। ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের মাধ্যমে আরো শক্তিশালী রূপ লাভ করে এ আন্দোলন। ক্রমে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বমহলে। সেই আন্দোলন আজও চলমান আছে। 

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের নাগরিকগণ আশা করেছিল- আইন, সমাজব্যবস্থা, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতি পাবে একটি আদর্শিক ও স্বতন্ত্র কাঠামো। কিন্তু তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী শিক্ষানীতিতে আধুনিকতার নামে ইসলামবিমুখতার অনুপ্রবেশ ঘটানোর মধ্য দিয়ে বাম ও নাস্তিক্যবাদী চিন্তার প্রসারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭২ সালে গঠন করে ‘ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশন’। এই কমিশন প্রণয়ন করেছিল একটি আদর্শ ও নৈতিকতাহীন, নাস্তিকতার সয়লাবে পরিপূর্ণ জাতীয় আদর্শবিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা। পরবর্তীতে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবনায় ইসলামী ভাবাদর্শের ছোঁয়া থাকলেও ‘ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষানীতি থেকে তা পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারেনি। নাস্তিক্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদী ভিনদেশী কুচক্রীমহলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে শিক্ষাক্রমে ইসলামী আদর্শ মুছে দিয়ে অশ্লীলতা, পৌত্তলিকতাপূর্ণ শিক্ষা সংযুক্তির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে বর্তমান জনসমর্থনহীন সরকার। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়নের মাধ্যমে ’৭২-এর শিক্ষা কমিশনের জাতিগঠনের অসার প্রস্তাবনাকে আবারো জীবিত করার প্রচেষ্টা করা হয়। এটিকে পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে শিক্ষাক্রম-২০২০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

এ শিক্ষাব্যবস্থায় একদিকে মুসলমানদের জন্য ফরজ পর্দার বিধানকে হেয় করা হয়েছে, অন্যদিকে সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারের মতো ঘৃণ্য মস্তিষ্কবিকৃত নিকৃষ্ট কর্মকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সুকৌশলে প্রবেশ করানো হয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ। এ শিক্ষানীতি শুধু ইসলামবিরোধীই নয়, বরং সরাসরি ইতিহাসবিকৃত ও দেশের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শামিল। মুসলমান তো দূরে থাকুক, কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ এ শিক্ষানীতি মেনে নিতে পারে না। কোমলমতি মুসলমান শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজাতীয় সংস্কৃতি, ভিন্নধর্মীয় আচার-আচরণ ও কুসংস্কার-শিক্ষা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মবিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রচনা, গল্প ও কবিতা একতরফাভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

সরকার বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে ধর্মহীন শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করে আগামী প্রজন্মকে অধার্মিক, অনৈতিক ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষ বানানোর নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। ফলে দেশে সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া, জিনা-ব্যভিচার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও পাপাচার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। কোনো অভিভাবকই তাদের সন্তানদের এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ দেখতে প্রস্তুত নন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শুধু ইসলাম বিরোধীই করা হয়নি, বরং রাষ্ট্রীয় মদদে সার্বিকভাবে এটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। অনিয়ম, দুর্নীতি এবং শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণে লাখো শিক্ষার্থী আজ শঙ্কিত। ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে মাদকের বিস্তার, লাগামহীন টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ছাত্রলীগ ও সরকার দলীয় লোকজন কর্তৃক প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রতিটি পরীক্ষায় লাগামহীন ও নজিরবিহীন প্রশ্নফাঁস এবং ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। সদ্য সংঘটিত হওয়া মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সরকার তার অপকর্ম ঢাকতে এমন ঘটনায় জড়িতদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত দেখানোর চেষ্টা করছে।

২০১০ সালে বিতর্কিত ইসলামবিমুখ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার পর থেকেই ধর্মহীন এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে দেশের আলেমসমাজ, বুদ্ধিজীবীবৃন্দ, রাজনৈতিক দলসমূহ, পেশাজীবী ও ইসলামপ্রিয় ছাত্র-জনতা। সরকারের এই আত্মঘাতী জাতিবিনাশী ষড়যন্ত্র রুখে না দিলে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আগামীর প্রজন্ম এ অশুভ থাবা থেকে নিস্তার পাবে না। এ অবস্থায় দেশ, ইসলাম, জাতিসত্তা, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ রক্ষায় ধ্বংসমুখী শিক্ষাক্রম বাতিলে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একজন অভিভাবক, একজন দেশপ্রেমিক, একজন ইসলামপ্রিয় এবং সর্বোপরি বিবেকবান মানুষ হিসেবে কোনোভাবেই আমরা এ দায় এড়াতে পারি না। জাতির যেকোনো সঙ্কটে ছাত্রশিবির সবসময় অগ্রভাগে থেকে সংগ্রাম করেছে। নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষা ও একটি সুন্দর কাক্সিক্ষত আগামী বিনির্মাণে ছাত্রশিবির ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে অপশিক্ষার বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে ইনশাআল্লাহ। জাতির মেরুদণ্ড তথা শিক্ষাব্যবস্থাকে কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছাতে এ আন্দোলনে আপামর ছাত্রজনতার রয়েছে নিরঙ্কুর সমর্থন। শিক্ষার মান নিশ্চিতে তৌহিদি ছাত্রজনতার সম্মিলিত আন্দোলন আদর্শভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ।

২০১০ সালে বিতর্কিত শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু এসব দাবি ও সংশোধনীর প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করে সরকার বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে ইসলামবিমুখ শিক্ষানীতি-শিক্ষাক্রম সংশোধনের জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে শিক্ষাক্রম সংশোধনের জন্য ছাত্রশিবির সুনির্দিষ্ট ১৭ দফা দাবি পেশ করছে : 

১. শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সম্মিলনে শিক্ষা কমিশন গঠন করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ঈমান-আকিদা ও মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা।

২. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা (৭ম অধ্যায়) অনুযায়ী সর্বপর্যায়ে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা ও স্ব-জাতীয় মূল্যবোধের শিক্ষার বাস্তবায়ন করা।

৩. দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের জন্য আলেমদের সমন্বয়ে ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা। পাশাপাশি কওমি মাদরাসার গুণগতমান বজায় রাখার ওপর জোর প্রদান করা।

৪. মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের দক্ষ করা, বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করা, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি সকল বৈষম্য দূর করা। মাদরাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য অভিভাবকদের উৎসাহদান করা। মাদরাসায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা। ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে সরকারীকরণ করা।

৫. শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যেক স্তরে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সর্বস্তরের পাঠ্যক্রমে কুরআন শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে কুরআন শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা।

৬. সাধারণ শিক্ষাধারার মাধ্যমিক স্তরে ঐচ্ছিক বিষয়ের তালিকায় পালি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি উর্দু ও ফারসির সংযোজন করা। উর্দু ও ফারসি ভাষা এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় এগিয়ে থাকার জন্য স্প্যানিশ বা ফ্রেঞ্চ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৭. দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর অশিক্ষিত অথবা স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তি দ্বারা গঠিত নিয়ন্ত্রক পরিষদের কুপ্রভাব শিক্ষাকার্যক্রমের একটি অন্তরায়। তাই উচ্চশিক্ষিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রক পরিষদ গঠন করা প্রয়োজন।

৮. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ২৮তম অধ্যায়ে শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে গৃহীত বিশেষ পদক্ষেপসমূহের মধ্যে ১৫ ও ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত এবং উচ্চশিক্ষা অধ্যায়ের ১১ নম্বর কৌশল অনুযায়ী বাংলাভাষার যথাযথ মান বজায় রাখা ও উন্নয়নে সুপারিশ করা পদক্ষেপসমূহের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এর পাশাপাশি ইংরেজি ও আরবি ব্যবহার অব্যাহত রাখা এবং তা যাতে বাংলার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা।

৯. উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে দিনব্যাপী ক্লাস এবং প্রতিদিন পরীক্ষা নেওয়ার মতো অকার্যকর, অযৌক্তিক পদ্ধতি বাতিল করে কৌশলগত স্বাভাবিক কার্যকর পদ্ধতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কর্মদক্ষ নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে চাহিদার আলোকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ অবকাঠামোগত কৌশল বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

১০. উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতের বাজেটের দিকে নজর দিলে দেখতে পাই এ খাতে বাজেটের হার খুবই কম। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর জন্য গবেষণা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাজেটের একটা বড় অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।

১১. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। সকল প্রকার দলীয় নিয়োগ পরিহার করা, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করা। মেধাবী, যোগ্য, দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা। সরকারের প্রতি আহ্বান, শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটা মনিটরিং করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন।

১২. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা অধ্যায় মোতাবেক দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের কৌশলসমূহ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

১৩. জাতীয় শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনার জন্য রিসার্চ-স্কলারসহ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদদের নিয়োজিত করা।

১৪. দেশ-কাল, ধর্মীয় আদর্শ, চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধের আলোকে বাংলা, ইংরেজি, আরবি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, লেখক ও চিন্তাবিদদের নিয়োজিত করা।

১৫. পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষার্থীদের জন্য এমনভাবে গল্প ও কবিতা রচনা করতে হবে, যেন শিশুদের মাঝে এই শিক্ষা প্রতিবেশী ও বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ বৃদ্ধি করে। বাবা-মা ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সৃষ্টির মহামানব নবীগণের প্রতি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি এবং ধর্মপরায়ণ নারী-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ উজ্জীবিত করবে। মানুষ ও আল্লাহর প্রতি নিজ নিজ কর্তব্যে সচেতন করবে। তাদের সত্য ও ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগের শিক্ষা দেবে। এ সব গল্প প্রধানত নবীর সিরাত ও হাদিস এবং প্রখ্যাত মনীষীদের জীবনী থেকে নিতে হবে।

১৬. স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকগণ এমনভাবে মনোবিজ্ঞান, কলা ও সমাজবিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবেন, যাতে তারা ইসলামী তত্ত্ব প্রত্যয়ের সাথে ব্যাখ্যা করতে পারেন। তাদেরকে মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতার কারণগুলো সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। এভাবে শিক্ষার তত্ত্ব ও কর্মতৎপরতা সম্পর্কিত নির্দেশ প্রদানে তারা বিশেষ গুরুত্বারোপ করবেন। শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে মুখস্থ, ধারাবিবরণী অথবা নোটবই এবং আধুনিক সমতুল্য একক শিক্ষা এবং মূল্যায়ন ইত্যাদির বিষয়াদি জানার জন্য তাদেরকে মূল বইয়ে উৎসাহিত করতে হবে।

১৭. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে ‘Guidance’ বিভাগ থাকতে হবে। এই বিভাগ গভীর আত্মবিশ্বাস ও যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, যারা ছাত্রদের ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত, মনস্তাত্ত্বিক ও অন্যান্য বিষয়ে উপদেশ প্রদান ও পরিচালনায় সহায়তা করতে পারবেন।

লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি

আপনার মন্তব্য লিখুন

Arafat Alam

- 7 months ago

১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের হাতে পরাধীন হওয়ার পর কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। লর্ড ম্যাকলের ভাষায়, "এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা হবে, যার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মানুষগুলো হবে রক্ত-বর্ণে ভারতীয় কিন্তু রুচি, চিন্তা, নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে ইংরেজ" - রাজিবুর রহমান পলাশ কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

মুহাম্মাদ মাসুদ আলম

- 7 months ago

❤️🇧🇩❤️🇸🇦❤️🇧🇩🇸🇦🖐️😭

Md Shajahan Ahmed

- 7 months ago

আমি সমর্থন করিলাম।

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির