post

দ্বীন কায়েমের পথে দৃপ্ত শপথ

মঞ্জুরুল ইসলাম

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভাবুন তো এমন এক সমাজের কথা যেখানে মানুষের চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা, মন ও মস্তিষ্ক নারী আর মাদকে নিমজ্জিত। যেখানে তুচ্ছ কারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করে; গোত্রে গোত্রে লেগে যায় যুদ্ধ। যেখানে জান-মালের নেই কোনো নিরাপত্তা। যে সমাজে নেই কোনো আইনের শাসন; ফলে একে অপরের ওপর চলে যাচ্ছেতাই অন্যায় ও জবরদস্তি। যেখানে নারীর সম্মান নেই। মূল্য নেই নারীর কোনো ইচ্ছা-অনিচ্চা বা আত্মমর্যাদার। যেখানে কার্যকর কোনো বিবাহব্যবস্থা নেই; ফলে নারীকে যখন ইচ্ছা গ্রহণ করা হচ্ছে আর জৈবিক চাহিদা মিটলেই ছুড়ে ফেলা হচ্ছে ব্যবহৃত টিস্যুর মতো। যেখানে আপন সন্তানকে অস্বীকার এবং জীবন্ত কবর দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কাজকেও মানুষ অপরাধ মনে করে না। সমাজের অধিকাংশ নারী যেখানে দাসী হয়ে বা পতিতাবৃত্তি করে বেঁচে আছে। যেখানে মানুষের ওপর অন্যায় হলে কোনো বিচার ব্যবস্থা নেই, সেখানে ঠকানো, হঠকারিতা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, জুয়া, মিথ্যাবাদিতা, কুৎসা রটনা ও মানহানি কেমন মহামারি আকার ধারণ করতে পারে তা তো বলাই বাহুল্য। যেখানে মানুষের কোনো মানবিক মর্যাদা নেই। কতিপয় সমাজপতির স্বেচ্ছাচারিতার কাছে যেখানে মানুষের বিবেক বন্দী, সেখানে নিষ্ঠুরতা কেমন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে? এমন সমাজ কি মানবজাতির বসবাসের জন্য উপযোগী? কিন্তু এ সমাজ কি একেবারেই অপরিচিত মনে হচ্ছে? আইয়ামে জাহেলিয়াতের সমাজ ব্যবস্থা কি এমনই জঘন্য আর বর্বর ছিল না?

এবার আসুন আরেকটা সমাজের কথা ভাবি। এ এমন সমাজ যেখানে গভীর রাতে একজন নারী এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে একা সফর করেন; তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। এ এমন এক সমাজ যেখানে কুড়িয়ে পাওয়া সম্পদ প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তি নিজের জীবিকার চিন্তা না করে হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে বেড়ান। এ সমাজে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে মানুষ নামাজে যায়; চুরির ভয় করে না। এ সমাজে মানুষ রাতে দরজা খোলা রেখে ঘুমাতেও ভয় করে না। এ সমাজের আইন পালন করতে শাসক নিজের সন্তানকে মৃত্যুদ- দেন। এ সমাজের শাসক জনগণের টাকায় কেনা একটা কুপিও আল্লাহর ভয়ে নিজের কাজে ব্যবহার করেন না। এ সমাজে মৃত মানুষেরও রয়েছে মানবিক মর্যাদা। এ সমাজটা কি রূপকথার গল্পের মতো লাগে? গল্পের মতো মনে হলেও এ সমাজের অস্তিত্ব দিনের মতোই সত্য। মানবতার মুক্তির দূত আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সমগ্র জীবনের মধ্যদিয়ে তো এমনই এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।

ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যথিত কিশোর মনে ভাবনা জাগে কীভাবে এই বর্বর জাতিকে সভ্যতার পথ দেখানো যায়! কিশোর মনটাই এমন। সদ্য নিষ্পাপ শৈশব পেরিয়ে যখন অন্যায়ের পৃথিবীর সাথে নতুন পরিচয় হয় তখন সকল অন্যায় পিষে ফেলার এক অদম্য বাসনা তৈরি হয়। কিন্তু বয়সের ভার সমাজের ভারটা নেওয়ার জন্য ঠিক প্রস্তুত হয়ে ওঠে না। তাই এ বয়সে দেখা যায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে। কিশোর মুহাম্মদ (সা.) হিলফুল ফুজুলের ন্যায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কার্যকর শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সফল করতে পারেনি যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওপর দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব অর্পণ করলেন।

মহানবী (সা.) যখন জাগতিক সকল উপায় ব্যবহার করে ক্লান্ত হয়ে হেরা গুহায় ধ্যান মগ্ন থাকতে শুরু করলেন, তখনই আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.)-কে তাঁর নিকট পাঠালেন দ্বীন কায়েমের পথ সহকারে। এ সেই পথ যা আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে সকল নবীর নিকট পাঠিয়েছেন। এ সেই পথ যা যুগে যুগে পথভোলা মানুষের দিশা হয়ে মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রেখে বিকাশ ঘটিয়েছে। এটা সেই সিরাতুল মুস্তাকিম যা যুগে যুগে মানবতাকে মুক্তির মঞ্জিলে পৌঁছে নিয়ে গিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালার বিধান থেকে সরে গিয়ে আজও পৃথিবীর অনেক জনপদে মানবতার হাহাকার। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও আজ জাহেলিয়াতের অনেক উপাদান বর্তমান। আরও নতুন জাহিলিয়াত ছড়িয়ে পড়ার হুমকি প্রতিনিয়ত। মানুষের জান, মাল, ইজ্জত হয়ে পড়েছে অনিরাপদ। মানুষ আল্লাহর দাসত্বের বদলে জিম্মি হয়ে আছে কতিপয় অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সুর হাতে। এ অবস্থা থেকেও মুক্তির পথ একটাই। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (স.) প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের পথ। তাই এখনই সময় দ্বীন কায়েমের দৃপ্ত শপথ গ্রহণের।

দ্বীন কায়েম কী?

দ্বীন শব্দের আভিধানিক বাংলা অর্থ ধর্ম হলেও সাধারণভাবে ধর্ম বলে যা বুঝানো হয় দ্বীন তার থেকে অনেক বৃহত্তর। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰهِ الۡاِسۡلَامُ

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) একমাত্র দ্বীন হলো ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান: ১৯)

আর ইসলাম তো এমন ব্যবস্থার নাম যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। অর্থাৎ, দ্বীন হলো মানুষের সার্বিক জীবনব্যবস্থা। আর সার্বিক জীবনব্যবস্থায় আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.)-এর প্রদর্শিত বিধান কার্যকর করার নাম ইকামাতে দ্বীন বা দ্বীন কায়েম। দ্বীন কায়েমের পথে প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলমান তথা তাঁর অনুগত বান্দার জন্য ফরয করেছেন। সকল নবী-রাসূল ও তাদের উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحًا وَٱلَّذِىٓ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِۦٓ إِبْرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنْ أَقِيمُوا۟ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا۟ فِيهِۚ كَبُرَ عَلَى ٱلْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِۚ ٱللَّهُ يَجْتَبِىٓ إِلَيْهِ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِىٓ إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ 

তিনি তোমাদের জন্য সেই দ্বীনই বিধিবদ্ধ করেছেন যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি তোমার কাছে নাযিল করেছি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকেও; এই বলে যে, “তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি করো না।” তুমি মুশরিকদেরকে যা করতে বল তা তাদের কাছে বড় (কঠিন) মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এই দ্বীনের জন্য মনোনীত করেন এবং যে (তাঁর দিকে) ফিরে আসে তাকেই তাঁর পথ প্রদর্শন করেন। (সূরা আশ শূরা: ১৩)


মানুষ সৃষ্টির প্রাক্কালেই আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের নিকট এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেন,

اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً

আমি দুনিয়াতে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করব। (সূরা বাক্বারা: ৩০)

অর্থাৎ, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিই করেছেন দুনিয়াতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

দ্বীন কায়েমের পরিধি

যেহেতু আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন ইসলাম। সুতরাং ইসলামের পরিধি যা দ্বীনের পরিধিও ঠিক ততখানি। আর ইসলামের ব্যপ্তি তো মানুষের সামগ্রিক জীবন। এ সামগ্রিক জীবনের সকল কিছুই দ্বীনের আওতাধীন; হোক তা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কিংবা বৈশ্বিক। রাসূল (সা.) তাঁর ২৩ বছরের নবুওয়তের জীবনে এই সকল ক্ষেত্রেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে উম্মতের জন্য পথ সুনির্দিষ্ট করে গিয়েছেন। আর তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে ইসলামী রাষ্ট্র বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে। সে স্বীকৃতি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন নিম্নোক্ত আয়াতে-

اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। (সূরা মায়িদা : ৩)

অর্থাৎ, ইসলামের বিধানের আলোকে মানুষের সার্বিক জীবনের পূনর্বিন্যাস সাধন করে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সামগ্রিক জীবন ইসলামের আলোয় আলোকিত করার নামই হলো ইক্বামাতে দ্বীন বা দ্বীন প্রতিষ্ঠা। এমন রাষ্ট্র কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ নয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে সমগ্র পৃথিবীতে বিজয়ী করার জন্য পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, 

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ 

তিনি সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন সব দ্বীনের ওপর এই দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। (সূরা আস-সফ: ৯)


দ্বীন কায়েমের পথ :

রাসূলুল্লাহ (স.) এর ২৩ বছরের নবুয়াতী জীবনই হলো দ্বীন কায়েমের পথ। এই ২৩ বছরে আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করেছেন যা কিয়ামত পর্যন্ত উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য অনুসরণীয়। দ্বীন কায়েমের জন্য রাসূল (স.) গৃহীত পদক্ষেপসমূহকে কয়েকটি শিরোনামে বিভক্ত করা যেতে পারে:


১. দাওয়াত

দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রসূল (স.) সর্বপ্রথম যে দায়িত্বটি পালন করেছেন তা হলো আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া। ওহী পাওয়ার পর রসূল (স.) যখন ভয়ে বস্ত্রাবৃত হয়েছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তখন তাকে নির্দেশ দিলেন:

یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ ۙقُمۡ فَاَنۡذِرۡ ۪وَ رَبَّکَ فَکَبِّرۡ ۪

হে বস্ত্রাবৃত! উঠ, সতর্ক বাণী প্রচার কর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। (সূরা মুদ্দাসসির: ১-৩)

রসূল (স) উঠলেন; আল্লাহর বাণী প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। কেউ কেউ দাওয়াত গ্রহণ করলো; কিন্তু অধিকাংশই প্রত্যাখ্যান করলো। অথচ আরবের লোকেরা জানতো মুহাম্মদ (স) এর মত সত্যনিষ্ঠ মানুষ গোটা আরবে আর একজনও নেই। তবুও তাঁর দাওয়াত অধিকাংশ মানুষ গ্রহণ করছে না। কারণ সমাজপতিরা কর্তৃত্ব হারানোর ভয় করছে আর তারা সাধারণ মানুষের মনে ভয় ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দিয়েছে। বাপ দাদার ধর্ম ত্যাগ করে মুহাম্মদ (স.) এর দ্বীন গ্রহনে তাদের শঙ্কার সীমা নেই।


আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবীকে দাওয়াত দানের প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিলেন:

اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُۗ

জ্ঞান-বুদ্ধি আর উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তুমি (মানুষকে) তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান জানাও আর লোকদের সাথে বিতর্ক কর এমন পন্থায় যা অতি উত্তম। (সূরা নাহল: ১২৫)

আল্লাহর নির্দেশ মত নবী (স.) দ্বীনের প্রচার চালিয়ে গেলেন। আজও যারাই আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতী কাজে আত্মনিয়োগ করে তাগুতী শক্তি তাদের ব্যাপারে অপপ্রচার চালায়; তাদেরকে ভয় দেখায়; যারা তাদের কথা শুনে তাদেরকেও ভয় দেখায়।

یُرِیۡدُوۡنَ لِیُطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰهِ بِاَفۡوَاهِهِمۡ وَ اللّٰهُ مُتِمُّ نُوۡرِهٖ وَ لَوۡ کَرِهَ الۡکٰفِرُوۡنَ

তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা (তা) অপছন্দ করে। (সূরা আস-সফ: ৮)

আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য আমানত। কেননা রাসূল (স) বলেন,

بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً

আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত জানলেও পৌঁছে দাও। (বুখারী: ৩৪৬১)

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ

তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানবজাতির (সর্বাত্মক কল্যাণের) জন্য তোমাদের আবির্ভুত করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর ও আল্লাহর প্রতি ঈমান রক্ষা করে চল। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে রাসূল (স.) প্রাথমিকভাবে দাওয়াত দিয়েছেন নিকটাত্মীয়, অধিক জ্ঞানী ও সমাজে প্রভাবশালীদের। আমাদেরও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা বাঞ্চনীয়। রসূল (স.) আমাদের জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আমাদের মধ্যে দাওয়াতি চরিত্র বজায় রাখতে হবে।


২. জামায়াত বা সংগঠন

কুরাইশদের মধ্যে যারা আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত গ্রহণ করল তাদের সাথে মুশরিকরা শুরু করল পৈশাচিক নিপীড়ন। মুমিনদের সাথে মুশরিকরা কেনাবেচা, লেনদেন, কথাবার্তা এমনকি আত্মীয়তার সম্পর্ক পর্যন্ত ছিন্ন করল। কোনোভাবেই যখন মুসলমানদেরকে তাদের সত্য দ্বীন থেকে বিচ্যুত করা যাচ্ছিল না তখন তাদেরকে শিয়াবে আবু তালিবে একঘরে করে রাখল। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিলেন:

وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا 

আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান: ১০৩)

জামায়াতবিহীন মুমিন পালবিহীন বকরীর মতো। তাই যারা ঈমান এনেছে, রাসূল (সা.) তাদের নির্দেশ দিলেন মুসলমানদের জামায়াতে শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে। তিনি বললেন, 

وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْجِهَادُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجَمَاعَةُ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَّا أَنْ يَرْجِعَ وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَقَالَ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ فَادْعُوا بِدَعْوَى اللَّهِ الَّذِي سَمَّاكُمْ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللَّهِ

আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ দিচ্ছি। আল্লাহ্‌ আমাকে সেগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন : (১) নেতার আদেশ শোনা (২) তার আদেশ পালন করা (৩) জিহাদ করা (৪) হিজরত করা এবং (৫) জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকা। কেননা যে লোক মুসলমানদের জামাআত থেকে এক বিঘত দূরে চলে যাবে, তার কাঁধ থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে যাবে- যতক্ষণ সে তওবা করে তাতে ফিরে না আসে। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে আহবান করবে, সে জাহান্নামের অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে? তিনি বললেন- যদিও সে নামায পড়ে, রোযা রাখে। তোমরা আল্লাহর কথা বলে আহবান করবে। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান, মুমিন- আল্লাহর বান্দা। (তিরমিযী: ২৮৬)

দ্বীন কায়েমের দলের কার্যধারা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। (সহীহ মুসলিম: ৪৮০০) আমাদের জন্য জরুরি হলো- এমন জামায়াতে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে পারা। 


৩. প্রশিক্ষণ

রসূলুল্লাহ (সা.) এর সমগ্র জীবনই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। নবুওয়তের শুরুতেই তার প্রতি নির্দেশ এসেছে-

اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ

পড় তোমার প্রভুর নামে, ‍যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব: ১)

রাসূল (সা.)-ও সাহাবীদেরকে আল্লাহর কিতাব শিক্ষা দিলেন এবং বলে দিলেন, 

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ

তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শেখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী: ৫০২৭)

আরব সমাজের জাহেলিয়াতের কথা তো পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে। এ জাহেলিয়াত থেকে মানুষের বের হয়ে আসা তো মোটেও সহজসাধ্য বিষয় ছিল না। সেজন্য আল্লাহ এক এক করে বিধান নাযিল করলেন আর রাসূল (সা.) একটু একটু করে মানুষের জীবনের পূনর্বিন্যাস সাধন করলেন। নামায ও রোযার মতো প্রশিক্ষণমূলক ইবাদতের মাধ্যমে মানুষের অন্তর আল্লাহর নিকটবর্তী হলো। একে একে কুরআনের বিধান নাযিলের মধ্যদিয়ে মানুষ গর্হিত, অনৈতিক ও সমাজবিধ্বংসী কাজ থেকে সরে এলো। এভাবে প্রতিজন সাহাবী জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একেকজন অটল সৈনিক হয়ে গড়ে ‍উঠলেন।

আজ আমরা যারা দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি আমাদেরকে সবার আগে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে হবে। তবেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীন কায়েমের সৈনিক হিসেবে কবুল করবেন। কুরআনের সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক থাকা অপরিহার্য। কেননা কুরআনই আমাদের পথ চলার আলোকবর্তিকা। তাই বুঝে বুঝে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে। যথাসম্ভব মুখস্থ ও আত্মস্থ করতে হবে। নামায-রোযা ফরয ইবাদতগুলো যথাসময়ে যথাযথভাবে আদায়ের পাশাপাশি আত্মার পরশুদ্ধির জন্য নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করতে হবে। মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ে সর্বপর্যায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অন্যতম হাতিয়ার তাহাজ্জুদ। পর্দার ব্যাপারে মুমিনরা না নিজেকে নিজে কোনোরূপ ছাড় দেবে, না তার কোনো ভাইকে। সংগঠনের সকল পর্যায়ে আনুগত্য, এহতেসাব ও আত্মসমালোচনার চর্চা অপরিহার্য। নিয়মমাফিক শরীরচর্চা ও খেলাধুলার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে শরীর ও মনকে সদা প্রস্তুত রাখতে হবে। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহেলিয়াত জ্ঞানগত জাহেলিয়াত। বিভিন্ন মতবাদ আর প্রোপাগান্ডা দিয়ে মুসলিমদেরকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবহারের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দাস বানিয়ে রাখা হচ্ছে। অনেক অনেক পড়াশোনা দ্বারা আমাদের নিজেদের সমৃদ্ধ করতে হবে। বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজতত্ত্বের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে।


৪. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ

মক্কায় কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সাহাবীরা যখন আল্লাহর ফয়সালার অপেক্ষা করছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো হিজরতের। রাসূল (সা.) সাহাবীদের নিয়ে হিজরত করলেন মদীনায়। তারপরও মুশরিকদের চক্রান্ত থামল না। মুসলমানদের নিঃশেষ করার জন্য তারা উঠে পড়ে লাগল। মুসলমানদের জান-মাল রক্ষার জন্য আপাতদৃষ্টিতে অপমান মনে হলেও রাসূল (সা.) মুশরিকদের প্রায় সব শর্ত মেনে সন্ধিচুক্তি করলেন। সে চুক্তিও ক্রমাগত ভাঙতে থাকল মুশরিকরা। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো মুশরিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের। আল্লাহ বললেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا هَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُجَاهِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ 

হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝ। (সূরা আস-সফ: ১০-১১)

আল্লাহর পথে জিহাদের গুরুত্ব এত বেশি যে আল্লাহ তায়ালা মুজাহিদের জীবনের বিনিময় হিসেবে ঘোষণা দিলেন পরকালের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি জান্নাত; যা অর্জনই মূলত প্রত্যেক মুমিনের জীবনের চিরপ্রত্যাশা। আল্লাহ বলেন, 

اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সঙ্গে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা : ১১১)

এমনকি আল্লাহ তায়ালা জিহাদের ভিত্তিতে মুমিন ও কাফির নির্ণয়ের মাপকাঠিও ঠিক করে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ۚ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ الطَّاغُوۡتِ فَقَاتِلُوۡۤا اَوۡلِیَآءَ الشَّیۡطٰنِ ۚ اِنَّ کَیۡدَ الشَّیۡطٰنِ کَانَ ضَعِیۡفًا

যারা ঈমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, আর যারা কুফরি করেছে তারা লড়াই করে তাগূতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। (সূরা নিসা: ৭৬)


আল্লাহর কাছে তার পথে শহীদের মর্যাদা কত উচ্চে তা বোঝাতে তিনি বলেন,

وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ

যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাক্বারা: ১৫৪)

মুমিনের জন্য রবের ভালোবাসা কতই না পরম প্রাপ্তি। সেই ভালোবাসা পাওয়া যায় আল্লাহর পথে জিহাদের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন,

اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ صَفًّا کَاَنَّهُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ

নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর। (সূরা আস-সফ: ৪)

আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক রাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করে তুললেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহর নিকট কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, “যথাসময়ে নামায আদায় করা।” আমি নিবেদন করলাম, ‘তারপর কোন্‌টি?’ তিনি বললেন, “মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি আবার নিবেদন করলাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” (বুখারী ৫২৭, মুসলিম ৮৫, তিরমিযী ১৩৭, নাসায়ী ৬১০)

সাহ্‌ল ইবনে সা'দ সাঈদী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরারত থাকা, পৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের স্থান দুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। আর তোমাদের কোনো ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।” (বুখারী ২৭৯৪, মুসলিম ১৮৮১, ইবনু মাজাহ ৪৩৩০)

ফাযালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রতিটি মৃত্যুগামী ব্যক্তির পরলোকগমনের পর তার কর্মধারা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত ব্যক্তির নয়। কেননা, তার আমল কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করা হবে এবং সে কবরের পরীক্ষা থেকে নিষ্কৃতি পাবে।” (আবূ দাউদ ২৫০০)


এভাবে রসূলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষাকৃত কম সৈন্যশক্তি নিয়েই আল্লাহর পথে জিহাদে অবতীর্ণ হলেন; আর আল্লাহ তায়ালাও তাঁর ওয়াদা মোতাবেক বিজয় দান করলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বদর যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন আর কাফেরদের ছিল ১০০০ পদাতিক, ১০০ উট ও ৭০০ ঘোড়ার সৈন্যশক্তি। ওহুদ যুদ্ধে কাফিরদের ৩০০০ সৈন্যের বিপরীত মুজাহিদ ছিলেন মাত্র ৭০০ জন। মুমিনদের বিজয় দানের আল্লাহর ওয়াদা আজও বিদ্যমান। আমাদের শুধু দরকার দ্বীন কায়েমের দৃপ্ত শপথ গ্রহণ।


৫. দ্বীন কায়েমের দৃপ্ত শপথ বা বাইয়াত :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) ও সাহাবীদের কার্যপ্রণালী তথা হাদী, সুন্নত, সিরাতে নজর দিলে শপথের বিষয় খুবই স্পষ্ট হয়। পবিত্র কুরআন আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে বাইয়াতে রিদওয়ানের ঘটনার মাধ্যমে। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবো না বা হযরত উসমান (রা.) হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে ময়দান থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবোনা এই মর্মে রাসূল (সা.)-এর হাতে হাত রেখে যে শপথ নিয়েছিলেন সাহাবীরা সেটাই বাইয়াতে রিদওয়ান। কুরআনের বর্ননায় এসেছে এভাবে-

اِنَّ الَّذِيۡنَ يُبَايِعُوۡنَكَ اِنَّمَا يُبَايِعُوۡنَ اللّٰهَ ؕ يَدُ اللّٰهِ فَوۡقَ اَيۡدِيۡهِمۡ‌ ۚ فَمَنۡ نَّكَثَ فَاِنَّمَا يَنۡكُثُ عَلَىٰ نَفۡسِهٖ‌ۚ وَمَنۡ اَوۡفٰى بِمَا عٰهَدَ عَلَيۡهُ اللّٰهَ فَسَيُؤۡتِيۡهِ اَجۡرًا عَظِيۡمًا‏

হে নবী, যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিল প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিল। তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত। যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে। আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন। (সূরা আল ফাতহ-১০)। রাসূল (সা.)-এর হাতে যে শপথ নেওয়া হয়েছিলো সেটা ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর হাত হলেও মূলত তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রতিনিধি। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হাত ছিল রাসূল (সা.) ছিলেন যার মাধ্যম।

বাইয়াত গ্রহণকারীদের ওপর যে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়েছেন তাও তিনি জানিয়ে ‍দিলেন অপর এক আয়াতে-

لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰهُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ عَلَیۡهِمۡ وَ اَثَابَهُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا

অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল; অতঃপর তিনি তাদের অন্তরে কী ছিল তা জেনে নিয়েছেন, ফলে তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করলেন নিকটবর্তী বিজয় দিয়ে। (সূরা আল ফাতহ : ১৮)

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ লক্ষনীয়। জিহাদে বাইয়াত, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধানের নিকট বাইয়াত বা শপথ, জামায়াতবদ্ধ জীবনের জন্য আমীরের নিকট বাইয়াত অবশ্যকীয়। জামায়াতবদ্ধ জীবনের বিমুখতা থেকে সৃষ্ট ফিতনা বাইয়াত থেকে দূরে রাখে। জামায়াত থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ ইসলাম দেয়নি।

‎  أَخْبَرَنَا بِشْرُ بْنُ هِلَالٍ الصَّوَّافُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ قَالَ: حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ غَيْلَانَ بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ زِيَادِ بْنِ رِيَاحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ، وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً، وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي يَضْرِبُ بَرَّهَا، وَفَاجِرَهَا لَا يَتَحَاشَى مِنْ مُؤْمِنِهَا، وَلَا يَفِي لِذِي عَهْدِهَا فَلَيْسَ مِنِّي، وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ، يَدْعُو إِلَى عَصَبِيَّةٍ، أَوْ يَغْضَبُ لِعَصَبِيَّةٍ فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ 

আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য হতে বের হয়ে যায় এবং মুসলমানদের দল ত্যাগ করে, আর এই অবস্থায় মারা যায়, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়ে ভাল-মন্দ নির্বিচারে হত্যা করে এবং মুসলমানকেও ছাড়ে না; আর যার সাথে যে অঙ্গীকারাবদ্ধ, তার অঙ্গীকার রক্ষা করে না, তার সাথে আমার কোনো সম্বন্ধ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতা এবং অজ্ঞতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে, আর লোকদেরকে জাত্যাভিমানের দিকে আহবান করে এবং তার ক্রোধ জাত্যাভিমানের জন্যই হয়, পরে সে নিহত হয়; তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে। (সুনানে আন-নাসায়ী: ৪১১৪)

যারা জিহাদের বাইয়াত নেয় তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন-

فَلْيُقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱلَّذِينَ يَشْرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا بِٱلْءَاخِرَةِۚ وَمَن يُقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا 

তাই যারা আখেরাতের জন্য পার্থিব জীবনকে বিক্রি (ত্যাগ) করতে চায়, তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। আর কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত কিংবা বিজয়ী হলে অচিরেই আমি তাকে এক মহান পুরস্কার দেব। (সূরা আন নিসা: ৭৪)

আবার বাইয়াত এতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, বাইয়াতভঙ্গকারীদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। আল্লাহ বলেন,

إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ ٱللَّهِ وَأَيْمَٰنِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُو۟لَٰٓئِكَ لَا خَلَٰقَ لَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ 

যারা আল্লাহর (সাথে করা) ওয়াদা ও নিজেদের শপথকে সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দেয় তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না। তিনি তাদেরকে শোধনও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আলে ইমরান: ৭৭)

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য বাইয়াত একটি অপরিহার্য বিষয়। আর বাইয়াতের মুখ্য বিষয় হলো আনুগত্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ

হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে দায়িত্বশীলদের।

সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে,

‎  حَدَّثَنَا سُرَيْجُ بْنُ يُونُسَ، وَيَعْقُوبُ الدَّوْرَقِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، عَنْ سَيَّارٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ جَرِيرٍ، قَالَ بَايَعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فَلَقَّنَنِي ‏ "‏ فِيمَا اسْتَطَعْتَ ‏"‏ ‏.‏ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ ‏.‏ قَالَ يَعْقُوبُ فِي رِوَايَتِهِ قَالَ حَدَّثَنَا سَيَّارٌ ‏.  

জারীর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-এর কাছে শ্রবণ ও আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ করলে তিনি আমাকে শিখিয়ে দিলেন, (বল) যতদূর আমার সাধ্যে কুলায় (কেননা সাধ্যের অতিরিক্ত করতে বান্দা অপারগ)। আর প্রত্যেক মুসলিমের উপদেশ দেয়ার ব্যাপারেও (বাইয়াত করেছি)। (সহীহ মুসলিম: ১০৫)

সাহাবীদের বাইয়াত ছিল পূর্ণ আনুগত্যের বাইয়াত। আজকে অনেকে পরিবেশ পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে দ্বীন কায়েমের পথ থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখছেন। কিন্তু আনুগত্যের বাইয়াত তো হতে হবে সুখে, দুঃখে, আরামে ও কষ্টে তথা সর্ববস্থায়।

‎  عَنْ أَبِي الوَلِيدِ عُبَادَةَ بنِ الصَّامِتِ رضي الله عنه قَالَ: بَايَعْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَلَى السَّمْعِ والطَّاعَةِ في العُسْرِ واليُسْرِ، والمَنْشَطِ وَالمَكْرَهِ، وَعَلَى أثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَعَلَى أنْ لاَ نُنازِعَ الأمْرَ أهْلَهُ إلاَّ أنْ تَرَوْا كُفْراً بَوَاحاً عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ تَعَالَى فِيهِ بُرْهَانٌ، وَعَلَى أنْ نَقُولَ بِالحَقِّ أيْنَمَا كُنَّا لاَ نَخَافُ في اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ  

আবূ অলীদ উবাদাহ ইবনু সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এই মর্মে  বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ

আমি জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত: ৫৬)

আর ইবাদতের সারমর্ম হলো আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য এবং আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ। কেননা, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তাঁর খিলাফত কায়েমের জন্য। তাই মুমিন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম। সে কারণেই দ্বীন কায়েমে আমাদের দৃপ্ত শপথ:

إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ

“আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্য।” (সূরা আনআম: ১৬২)।

লেখক : কেন্দ্রীয় সভাপতি 

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির