ইতিহাসের পাঠক- ভারতের ইতিহাস পাঠ করেন অথচ সুলতান মাহমুদের নাম জানেন না- এমন কথা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য হবে না। তা সুলতান মাহমুদকে লুণ্ঠনকারী ও মন্দির ধ্বংসকারী হিসেবেই হোক অথবা ভারতের মূল ভূমিতে প্রথম মুসলিম বিজেতা এবং অপরাজেয় একজন সৈনিক হিসেবেই হোক। বিশেষত মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাসের এক অপরিহার্য চরিত্র তিনি। ইতিহাসের পাতায় তিনি সুলতান মাহমুদ গজনবি হিসেবে পরিচিত। আর সাধারণভাবে ভারতে ‘সতেরোবার’ অভিযান চালানোর জন্য আলোচিত। একজন দুর্ধর্ষ সেনানায়কের পরিচয়ের পাশাপাশি ভারতের হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ‘অহংকার’ গুজরাটের বিখ্যাত সোমনাথ মন্দির ও অন্য আরও কয়েকেটি মন্দির লুণ্ঠনের দায় হাজার বছর ধরে কাঁধে নিয়ে ইতিহাসের পাতায় অবস্থান করছেন।
৭১১ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় যদিও প্রথম ভারত-অভিযান। কিন্তু সে পর্যন্তই, এর বেশি এগোয়নি। পরবর্তী অভিযাত্রী হিসেবে ইতিহাসে নিজের স্থানকে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন সুলতান মাহমুদ। ইতিহাসের একটি অংশে তাকে কেবলই একজন লুটেরা ও ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। বিশেষত ভারতীয় একশ্রেণির লেখক তাঁকে একতরফা চরিত্রে চিত্রিত করেছেন। তিনি ভারতে কিছু অভিযান পরিচালনা করেছিলেন- আর মধ্য এশিয়ার পারস্য-সংশ্লিষ্ট বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত করেছিলেন তাঁর শাসন ও ক্ষমতা। এর ফলস্বরূপই সম্ভবত একদিকে তিনি পারস্যের শিয়া প্রভাবিত লেখকগণ এবং অপরদিকে ভারতের হিন্দু লেখকদের কূট-বিতর্কের শিকারে পরিণত হন। গতানুগতিক লেখকদের অনেকেই তথ্যাদি বিশ্লেষণ না করেই টানা অভিযোগের তালিকা করে গেছেন। তবে সাম্প্রতিককালের উদারপন্থী গবেষকের কিছু মূল্যায়ন দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সুলতান মাহমুদের পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থগুলোর বেশির ভাগই উর্দু ও ফার্সিতে রচিত। এগুলির ইংরেজি অনুবাদ ও সম্পাদনা করতে গিয়ে এর টীকা-টিপন্নীতে বিতর্কিত মন্তব্য জুড়ে দেওয়ার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। আর সেগুলিকে অনুসরণ করেই পরবর্তীকালের কিছু একতরফা ‘ইতিহাস’ রচিত হয়। এভাবে দেখা যায়, কোনো কোনো ঐতিহাসিক শুধুই টানা অভিযোগ করে গেছেন- প্রকৃত প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয়তা বিচার করেননি। অন্যদিকে, এখন থেকে হাজার বছর আগের রাজনীতি ও রাজনৈতিক কৌশল, সামরিক উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি, শাসননীতি ও তার বাস্তবায়ন, ভূমিব্যবস্থা ও রাজস্ব আয় প্রভৃতি বিষয়গুলিকে এই শতাব্দীর চিন্তাচেতনার আলোকে বিচার করাও একটি পদ্ধতিগত ভুল। আধুনিককালের সার্বভৌম কিংবা সুনির্দিষ্ট সীমানা-নির্ধারিত ভূমিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষবাদ বা জাতীয়তাবাদের চেতনা দিয়েও তা বিচার করা চলবে না।
তখনকার মোটামুটি মডেল ছিল এরকম-
ক. জুলুমের বিপরীতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, অধর্মের বিপরীতে ধর্ম প্রতিষ্ঠা এবং শক্তিমত্তা ব্যবহার করে বা কৌশলের সাহায্যে ভূমি দখলের বিপরীতে একই ভাবে ভূমি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া।
খ. সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত অভিমতের তেমন গুরুত্ব ছিল না, তেমনই তাদের সম্পদেরও সুরক্ষার নিশ্চয়তা পাওয়া স্বাভাবিক ছিল না।
গ. অভিযান-আগ্রাসনের সময় কোনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর কোনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- সেই বিচারও সেভাবে গুরুত্ব পেতো না। যদিও আধুনিককালের দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ, হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক হামলা এবং হালের সমাজতন্ত্র বা পুঁজিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য আগ্রাসন, রাষ্ট্র দখলজনিত যুদ্ধ-সংঘাতের ঘটনাবলি কোনোপ্রকার মানবিক, নৈতিক কিংবা অন্ততপক্ষে যৌক্তিক বিবেচনাবোধ কাজে লাগানো হয়েছে বলে মনে করা যায় না। বরং ইসলামের ইতিহাসের বীর যোদ্ধাদেরকে ইসলাম প্রদত্ত নীতি-নৈতিকতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিতপ্রাণ দেখা গেছে।
এই নিবন্ধে উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে সুলতান মাহমুদের সংশ্লিষ্টতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তার অবস্থান নির্ণয়ের সুযোগ নেই। একজন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের গুণাবলি, যোগ্যতা, চিন্তাধারা, কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণের দিকটিই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। সেটি করতে পারলে তার সম্পর্কে যে নেতিবাচক প্রচারণা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তার ক্ষত কিছুটা অপসারিত হবে বলে আশা করা যায়।
প্রাথমিক পরিচয়
আফগানিস্তানের গজনির শাসকগণ নিজেদের আমীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভারতের ভূখণ্ডেও তখন সে অর্থে কোনো মুসলিম শাসক ছিলেন না। সুলতান মাহমুদ গজনবি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে প্রথম ‘সুলতান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীকালে গজনবি শাসনের অবসান হলেও অন্যরা এই সুলতান উপাধি ব্যবহার অব্যাহত রাখেন।
ক্যালি সেজেপান্সকির মতে, গজনবির মাহমুদ ‘সুলতান’ উপাধি গ্রহণকারী ইতিহাসের প্রথম শাসক- যিনি গজনবি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর উপাধিতে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে মুসলিম খলিফা সাম্রাজ্যের ধর্মীয় নেতা হিসেবে থাকা সত্ত্বেও (বর্তমান) ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে থাকা ভূখণ্ডের তিনি ছিলেন রাজনৈতিক নেতা।১
মাহমুদের জীবনী রচয়িতা মোহাম্মদ নাযিম উল্লেখ করেন, মাহমুদ পূর্বাঞ্চলীয় একজন রাজপুত্রের মতই সিনিইয়ার কা’দি বু আলীর পিতার নিকট থেকে পাণ্ডিত্যপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করেন। তাঁর অধীনে ধর্মীয় শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় সুশিক্ষা লাভ করেন। তিনি হৃদয় দিয়ে পবিত্র কুরআন পাঠ করতেন এবং মুসলিম আইন ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। শিক্ষার রাজনৈতিক দিকটিও অবহেলিত ছিল না। সবুক্তগীন নিজে তাকে সফল সার্বভৌম নীতি সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করেন। এসব নির্দেশনা ‘পান্ড-নামাব’ নামক সংকলনে সংরক্ষণ করেন। মাহমুদ প্রশাসনিক কর্মেও বিপুল দক্ষতা অর্জন করেন।২
মাহমুদের বয়স যখন সবেমাত্র সাত বছর সেসময় সবুক্তগীন বুস্তের যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তখন তিনি মাহমুদকে রেখে গিয়েছিলেন সবুক্তগীনের উজির বু আলী কিরমানির সহকারী হিসেবে। কয়েক বছর পর তাকে জমিন-দাওয়ার প্রদেশের সরকারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া, মাহমুদ তৎকালীন সামরিক কলা-কৌশলসমূহও চর্চা করেন। তিনি একজন চমৎকার তলোয়ার চালক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং একজন মার্কসম্যান এবং ল্যান্স-ফাইটার হিসেবে তার দক্ষতার সমকক্ষ কেউ হতে পারেনি। তিনি তার পিতার সঙ্গে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। বালক অবস্থাতেই পৃথকভাবেই তিনি ঘোরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমনমূলক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। মাত্র পনের বছর বয়সে তিনি লামাঘানের কাছে তার পিতা এবং জয়পালের মধ্যে একটি যুদ্ধে (৯৮৬-৮৭) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।৩
আবদুল করিম উল্লেখ করেন, সুলতান মাহমুদ অমিততেজা যোদ্ধা ছিলেন; তাঁর পিতার জীবদ্দশায় তিনি পিতার সকল সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পিতার বর্তমানে হিন্দুশাহী রাজা জয়পালের বিরুদ্ধে মাহমুদ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন। সবুক্তগীন তাঁর সুযোগ্য পুত্র মাহমুদের পরামর্শের মূল্য দিতেন। ফলে রাজপুত্র থাকাকালেই মাহমুদ ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে পরিচিত হন এবং হিন্দুশাহী বংশের তথা ভারতের সামরিক বাহিনীর গুণাগুণ এবং ত্রুটি-বিচ্যুতিও ধরতে সমর্থ হন। বারংবার ভারত অভিযান সুলতান মাহমুদের কর্মময় জীবনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন; মনে হয় সিংহাসন আরোহণের পূর্বেই তিনি তাঁর পরবর্তী জীবনের কর্মসূচি সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন।৪
মনযুর আহমাদ লিখেছেন, শিক্ষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সুলতান মাহমুদ ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। তিনি অশিক্ষিত ছিলেন না, স্বশিক্ষিত ছিলেন। তিনি শিল্প ও সাহিত্যের সমাদর করতেন। তিনি কবি ও খ্যাতিমান পণ্ডিত ছিলেন। কথিত আছে, সুলতান মাহমুদ ‘তাফরিদুল ফুরু’ নামক একখানা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেটি ফিকাহশাস্ত্রের প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে বিবেচিত হতো।৫
বাংলা বিশ্বকোষ উল্লেখ করে, “বিধর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া প্রথম যাঁহারা গাযী উপাধি পাইয়াছিলেন, মাহমুদ তাহাদেরও একজন। তিনি শিল্পকলা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নিজে কুরআনের হাফিজ ও হাদিসে ব্যুৎপন্ন ছিলেন। ফিকহ শাস্ত্রের একখানি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে।”
ভারত অভিযানের বিবরণ
সুলতান মাহমুদের জীবনজুড়ে বহুসংখ্যক লড়াই-সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এর একটি বৃহদাংশজুড়েই ছিল একদিকে (বর্তমান) ইরান ও ইরাকসংলগ্ন এবং আরেকদিকে তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তানসংলগ্ন অঞ্চল। আর ছিল গজনিসহ আফগানিস্তানের উল্লেখযোগ্য অঞ্চলসমূহ। তবে আলোচনার পাদপ্রদীপের অংশ হয় কেবল ভারত অভিযানের বিষয়টি। বলা বাহুল্য, বর্তমান যে চিহ্নিত ভারতভূমি তার অল্পাংশই মাহমুদের অভিযানের আওতায় পড়েছিল। থানেশ্বর, মথুরা, কনৌজ, সোমনাথ প্রভৃতি স্থান বর্তমান ভারতভুক্ত অঞ্চল। অন্যদিকে, মুলতান, পেশোয়ার, লাহোর, কাশ্মির, পাঞ্জাব প্রভৃতি বর্তমানে পাকিস্তানভুক্ত। ভারত-অভিযানের অংশ হয়ে থাকা স্থানগুলিতে কয়েকবার করে অভিযান পরিচালিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের গবেষক আমিনুল ইসলাম এই অভিযানগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। এটি নিম্নরূপ:
১. তৎকালীন ভারতে সুলতান মাহমুদের প্রথম সামরিক অভিযান পরিচালিত হয় ১০০০ খ্রিস্টাব্দে। এই অভিযানে তিনি লামঘান (জালালাবাদ) ও পেশোয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চল খাইবার গিরিপথে অবস্থিত ভারতের কিছু সীমান্তবর্তী দুর্গ ও শহর অধিকার করে নিজ সীমান্ত সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করেন।
২. মাহমুদ দশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ১০০১ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের শাসক জয়পালের বিরুদ্ধে পেশোয়ারে অভিযান চালান। জয়পাল বার হাজার অশ্বারোহী, তিরিশ হাজার পদাতিক ও তিনশত হস্তী বাহিনী নিয়েও এই অভিযানে পরাস্ত হয়ে বন্দী হন। পরে জয়পাল মাহমুদকে আড়াই লক্ষ দিনার, ১৫০টি হাতি ও কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে এক চুক্তির মাধ্যমে পুত্র পরিবার পরিজনসহ মুক্তি পান। ফলে সিন্ধুনদের পশ্চিম তীরবর্তী শহর উন্দ সুলতান মাহমুদের অধিকারে আসে। এই পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে জয়পাল আত্মহত্যা করলে পুত্র আনন্দপাল পাঞ্জাবের সিংহাসনে বসেন।
৩. ১০০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ ঝিলাম নদীর তীরবর্তী ভীরা রাজ্যের (ভাটিয়া) রাজা বিজয় রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার অপরাধে তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করেন। মাহমুদের বাহিনীর সঙ্গে বিজয় রায়ের সৈন্যদলের তিন দিন ধরে তুমুল যুদ্ধ চলে। চতুর্থ দিনে যুদ্ধের ময়দান থেকে বিজয় রায় পলায়ন করেন। মাহমুদের বাহিনী তার পশ্চাধাবন করলে উপয়ান্তর না দেখে বিজয় রায় ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন। এই যুদ্ধে ভীরার দুর্গ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে ভীরা ও এর পাশের অঞ্চল সুলতান মাহমুদের পদানত হয়।
৪. চতুর্থ অভিযান মুলতানের মুসলিম শাসনকর্তা আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে ১০০৬ খ্রিস্টাব্দে পরিচালিত হয়। এই আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য দাউদ আনন্দপালের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। এই খবর মাহমুদকে ক্ষুব্ধ করে। তিনি দাউদকে সমুচিত শাস্তি প্রদানের জন্য সসৈন্যে মুলতানের দিকে অগ্রসর হন। পথিমধ্যে আনন্দপাল মাহমুদকে বাধা দেন। আনন্দপাল মাহমুদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কাশ্মিরের দিকে পলায়ন করেন। এরপর মাহমুদ পাঞ্জাবের মধ্য দিয়ে মুলতান অবরোধ করেন। সাত দিন অবরুদ্ধ থাকার পর দাউদ বার্ষিক কুড়ি হাজার দিরহাম কর প্রদানে প্রতিশ্রুত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করেন। মাহমুদ তার অনুগত নও-মুসলিম নওয়াজ শাহের (পূর্ব নাম সুখপাল) হাতে মুলতানের শাসনভার অর্পণ করে স্বদেশে ফিরে যান। এই সুখপাল ছিলেন আনন্দপালেরই পুত্র। তিনি রাজনৈতিক কারণে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
৫. সুখপাল বিপদমুক্ত ভেবে পরে ইসলাম পরিত্যাগ করে মুলতানে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ধৃষ্টতার জবাব দিতে সুলতান মাহমুদ সুখপাল বা নওয়াজ শাহের বিরুদ্ধে ১০০৭ খ্রিস্টাব্দে তার পঞ্চম অভিযান পরিচালনা করেন। সুখপাল পরাজিত হন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ লক্ষ দিরহাম প্রদানে তাকে বাধ্য করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
৬. মাহমুদের ষষ্ঠ অভিযান পরিচালিত হয় ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে আনন্দপালের বিরুদ্ধে। মাহমুদের বিরুদ্ধে আনন্দপাল উজ্জয়িনী, গোয়ালিয়র, কালিঞ্জর, কনৌজ, দিল্লি এবং আজমিরের রাজাদের একত্রিত করে একটি জোট গঠন করেন। এই জোটে যোগদান করে কাশ্মিরের খোক্কার উপজাতি গোষ্ঠীর তিরিশ হাজার দুর্ধর্ষ সাহসী বাহিনীও। দূরবর্তী প্রদেশ হতে মহিলারা তাদের স্বর্ণ বিক্রয় করে অর্থ দান করেন। এককথায় আনন্দপাল একটি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে ও জনসাধারণের সহানুভূতি আদায় করতে সক্ষম হন। উভয়পক্ষে উন্দ নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হয়। খোক্কার বাহিনী প্রবল বিক্রমে মাহমুদের বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলে। চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে জয়পালের হাতি ভীত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করতে থাকে। এহেন অবস্থায় আনন্দপালের সৈন্যগণ বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। এই সুযোগে সুলতান মাহমুদ মরিয়া হয়ে লড়াই চালিয়ে যান। আনন্দপালের সম্মিলিত বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
৭. সপ্তম হলো নগরকোট অভিযান। ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ ভারতের কাংড়া পাহাড়ের নগরকোট দুর্গ আক্রমণ ও অধিকার করেন। সেখানকার মন্দিরে ভূগর্ভস্থ সিন্দুক-ঘরে রক্ষিত ধনরত্নসব যুদ্ধে লুণ্ঠিত সম্পদ হিসেবে মাহমুদের হস্তগত হয়। ঐতিহাসিক ফিরিস্তার মতে, সাত লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা (দিনার), সাত শত মণ স্বর্ণ-রূপা নির্মিত তৈজসপত্র, দুই শত মণ খাঁটি সোনা, দুই হাজার মণ অপরিশোধিত রূপা ও কুড়ি মণ বিভিন্ন ধরনের মণিমুক্তা মাহমুদ করায়ত্ত করেন। নগরকোট বিজয়ের ফলে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে অভিযানের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। পাঞ্জাবের রাজাদের নৈতিক দুর্বলতা প্রকটিত হয় এই যুদ্ধে।
৮. দুর্ধর্ষ ঘোর উপজাতিদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করে বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দিতে সুলতান মাহমুদ পুনরায় মুলতানের শাসক আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে ১০১০ খ্রিস্টাব্দে অভিযান শুরু করেন। এটি তার অষ্টম অভিযান। এই অভিযানে আবুল ফতেহ মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হন।
৯. আনন্দপালের পুত্র ত্রিলোচনপালের বিরুদ্ধে মাহমুদের নবম অভিযান পরিচালিত হয় ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে। পিতা আনন্দপালের মৃত্যুর পর ত্রিলোচনপাল নন্দনায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। এখানে তিনি সুসংবদ্ধ করে তোলেন তার সৈন্যবাহিনীকে। শেষ পর্যন্ত মাহমুদের অতর্কিত আক্রমণে ত্রিলোচনপাল পরাজিত হন এবং কাশ্মিরে পালিয়ে যান। মাহমুদের অধিকারে আসে শাহী বংশের শেষ সুরক্ষিত দুর্গ নন্দনা। এরপর ত্রিলোচনপাল শিবলি পাহাড়ে নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেন। বুন্দেলখণ্ডের চান্দেলরাজের সাথে তার একটি চুক্তি হয়। মাহমুদ তাদের দু’জনের জোট ভেঙে দেওয়ার জন্য রামগঙ্গার নিকটে ত্রিলোচন পালকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে পাঞ্জাবকে নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন এবং এ প্রদেশের শাসনভার একজন আমীরের হাতে ন্যস্ত করেন। পরে ১০২১ খ্রিস্টাব্দে ত্রিলোচন পাল জনৈক গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন। তার পুত্র ভীম পাল সিংহাসনে বসেন। ভীম পাল ১০২৬ খ্রিস্টাব্দে মারা গেলে হিন্দু শাহী বংশের পরিসমাপ্তি ঘটে।
১০. সুলতান মাহমুদের দশম অভিযানে থানেশ্বর বিজয় হয় ১০১৪ খ্রিস্টাব্দে। এই যুদ্ধে স্থানীয় হিন্দু রাজা বশ্যতা স্বীকার করেন এবং অসংখ্য ধন-সম্পদসহ থানেশ্বর দুর্গ সুলতান মাহমুদের হস্তগত হয়।
১১. একাদশ অভিযান কাশ্মির অভিযান। তিনি ১০১৫-১০১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দু’বার কাশ্মির বিজয়ের প্রচেষ্টা করেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লৌহকোট দুর্গের দুর্ভেদ্যতার জন্য দু’বারই অভিযান ব্যর্থ হয়।
১২. লক্ষাধিক সৈন্য নিয়ে ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে ক্ষত্রিয় আধিপত্যের প্রাণকেন্দ্র কনৌজের বিরুদ্ধে সুলতান মাহমুদের গুরুত্বপূর্ণ দ্বাদশ অভিযান পরিচালিত হয়। তিনি ২ ডিসেম্বর ঝিলাম নদী পার হলে বুলন্দ শহরের নৃপতি হরদত্ত বশ্যতা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর মাহমুদ মেহওয়ানের হিন্দু শাসনকর্তাকে পরাজিত করে মথুরার দিকে অগ্রসর হন। সমৃদ্ধিশালী এবং হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র মথুরা অধিকারে আসে। সুলতান ১০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কনৌজের ফটকের সম্মুখে উপস্থিত হন। হর্ষবর্ধনের রাজধানী কনৌজ সুসমৃদ্ধ ছিল এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাতটি দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল। সুলতানের আবির্ভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত প্রতিহার রাজা রাজ্যপাল বিনা শর্তে বশ্যতা স্বীকার করেন।
১৩. প্রতিহার রাজা রাজ্যপাল মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করায় ভারতের রাজপুত রাজাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কালিঞ্জরের চান্দেলরাজ গোন্ড ক্ষুব্ধ হন। গোয়ালিয়রের রাজার সঙ্গে গোন্ডার এক চুক্তির পর তাদের মিলিত বাহিনী রাজ্যপালকে আক্রমণ করলে রাজ্যপাল নিহত হন। নৈতিক দিক থেকে বিচার করে মাহমুদ তার মিত্র হিন্দু রাজার মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য চান্দেলরাজকে ১০১৯-এ আক্রমণ করতে বাধ্য হন। গোন্ডা পালিয়ে গেলে মাহমুদ চান্দেলরাজের রাজধানীতে প্রবেশ করেন।
১৪. রাজ্যপালের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাহমুদ চান্দেলরাজের মিত্র গোয়ালিয়র রাজের বিরুদ্ধে ১০২১-২২ খ্রিস্টাব্দে তার চতুর্দশ অভিযান পরিচালনা করেন। মুহম্মদ হাবিবের মতে, সুলতান মাহমুদ এই অভিযানে অসংখ্য ছুতার, রাজমিস্ত্রি ও কামার সঙ্গে নিয়ে যান; কারণ, তার উদ্দেশ্য ছিল পাঞ্জাবে একটি সুপরিকল্পিত প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপন করা। প্রথমে সীমান্ত অঞ্চলের সোয়ত বাজাউর এবং কাফিরিস্তানের বিদ্রোহী উপজাতিদের দমন করে তিনি গোয়ালিয়রের দিকে অগ্রসর হলে হিন্দু রাজা সুলতানের আনুগত্য স্বীকার করে।
১৫. গোয়ালিয়রের রাজা সুলতান মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করার পর তিনি ১০২৩ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় হিন্দু রাজা নন্দার বিরুদ্ধে সৈন্যসামন্ত নিয়ে কালিঞ্জর আক্রমণ করেন। এই অভিযানকালে তিনি গোন্ডার বিখ্যাত দুর্গ অবরাধে করেন। কালিঞ্জরের রাজা তখন বার্ষিক কর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
১৬. ভারতবর্ষের অভিযান সমূহের মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত সৌরাষ্ট্রের সোমনাথ অভিযান। গুজরাটের কাথিওয়াড়ের সমুদ্র উপকূলে সোমনাথ মন্দির অবস্থিত। মন্দিরটি সমুদ্রের পানির উপর ভাসমান মনে হতো। হিন্দুরা এখানে তীর্থ করতে আসতেন। মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী ছিল অশ্লীল চিত্র দ্বারা শোভিত। মন্দিরের পরিচর্যার জন্য কয়েক হাজার ব্রাহ্মণ পুরোহিত নিয়োজিত ছিলেন। ৫০০ দেবদাসী ও ২০০ গায়িকা দেবতার তুষ্টির জন্য সর্বদা নৃত্যগীত করতো। ভারতবর্ষের নৃপতিগণ অনেকেই তাদের কুমারী কন্যাদের এ মন্দিরে সেবিকার জন্য উৎসর্গ করতেন। সোমনাথ মন্দিরকে ঘিরে ভারতীয় হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগ জড়িত ছিল।
১০২৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ বিশাল বাহিনীসহ সোমনাথের উদ্দেশ্যে গজনি ত্যাগ করেন। মুলতান ও রাজপুতনার দুর্গম মরুপথ (জয়সলমীর ও অনহিলওয়াড়া) অতিক্রম করেছিল তার যাত্রাপথ। কঠিন সে পথে কোনও সাহায্য বা আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। অনহিলওয়াড়ার কাছে মুন্ধীর নামক স্থানে প্রথম বাধা এলো হিন্দুদের কাছ থেকে। সে বাধা ছিল বেশ প্রবল এবং তাতে অংশ নিয়েছিল প্রায় কুড়ি হাজার সেনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পর্যুদস্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। রাজপুত নৃপতিগণ সংঘবদ্ধ হয়ে মাহমুদের গতিরোধ করেন; কিন্তু মাহমুদ সোলাঙ্কিরাজ ভীমদেবকে পরাজিত করেন।
সোমনাথ বিগ্রহের খ্যাতি ছিল সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী এবং কর্মরত ব্রাহ্মণগণ মনে করতেন যে, বিগ্রহসমূহের অলৌকিক ক্ষমতা মাহমুদের আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম। হিন্দুদের বিশ্বাস যে ভ্রান্তিমূলক ছিল, তা প্রমাণ করার জন্যই সুলতান মাহমুদ সোমনাথ জয় করতে মনস্থ করেছিলেন। ইবনে খালদুন, ফিরিস্তা এবং ডব্লিউ হেগ প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ এই মত সমর্থন করেন।
১৭. সোমনাথ বিজয়ের পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথে সুলতান মাহমুদের বাহিনী ভারতের জাঠদের দ্বারা উৎপীড়িত হন। তিনি গজনিতে ফিরে এসে জাঠদের শাস্তি বিধানের জন্য ১০২৭ খ্রিস্টাব্দে আবার ভারত অভিযান করেন। বিদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক জাঠগণ সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয় এই অভিযানে। এটি সুলতান মাহমুদের সপ্তদশ ও সর্বশেষ অভিযান।৭
মন্দির ধ্বংসবিষয়ক কথকতা
সমকালীন সমাজে কথিত এই মন্দির ধ্বংসের বিষয়টি কোনো ছাপ ফেলেনি- পরবর্তীকালে মাহমুদকে যতই মন্দির ধ্বংসকারী ও নিপীড়ক বলে তুলে ধরা হোক না কেন। যদিও তুর্কি-ফারসি-আরবি বিবরণে সুলতান মাহমুদের সোমনাথ অভিযানকে বিশেষ কৃতিত্বের কাজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে ভারতীয় উপাদানে একে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সে সময়ের হিন্দু সূত্রগুলিতেও মাহমুদের সোমনাথ মন্দির আক্রমণের কোনো উল্লেখ ছিল না। আর গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সুলতান মাহমুদ ও তার মূর্তি ভাঙার গোটা কাহিনীই সাজানো।
বলা হয়ে থাকে, এই সমস্ত অভিযানের মধ্য দিয়ে সুলতান মাহমুদ ভারতের বহু শহর ও মন্দির লুণ্ঠন করে অফুরান মূল্যবান সম্পদ নিজ রাজ্য গজনিতে নিয়ে যান। যদি সম্পদের লোভই হয়ে থাকে তাহলে মাহমুদ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ইরানের অনেক শহরও কয়েকবার লুণ্ঠন করেন। অবশ্য ভারত হতে তিনি অনেক বেশি সম্পদ অর্জন করেছিলেন। আমিনুল ইসলাম বলেন, তবে মনে রাখতে হবে যে, বিপুল ধন-সম্পদ আহরণের সুলভ সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে মুসলমান-হিন্দু শাসকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র তফাত নেই। মাহমুদের পূর্বে মন্দিরের ধন-সম্পদ অনেক হিন্দু রাজাকেও মন্দির লুণ্ঠন ও ধ্বংসে প্ররোচনা দান করেছে। ১৫০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে লিখিত পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্য’ এবং ৪০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে লিখিত পাণিনির ব্যাকরণ থেকে জানা যায় যে, মৌর্যরা তাদের অর্থভাণ্ডার পূরণের জন্য মূল্যবান ধাতব দেবদেবীর মূর্তি গলিয়ে ফেলে। কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’ (৭ম তরঙ্গ দেখুন) থেকে জানা যায়, একাদশ শতকে কাশ্মিরের হিন্দুরাজা হর্ষ (১০৮৯-১১০১) সম্পদের লোভে বহু হিন্দু মন্দির ও দেবায়তন ধ্বংস করে বিখ্যাত হয়ে আছেন। হর্ষ তার রাজভাণ্ডার পূর্ণ করার জন্য নিজের সাম্রাজ্যের চারটি মন্দির বাদে সব মন্দির লুণ্ঠন করেন। ভীম কেশবের মন্দির বিধ্বস্ত করা দিয়ে এই প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল। যখন এতেও রাজকোষ পূর্ণ হলো না, হর্ষের আদেশে দেব-প্রতিমাও লুণ্ঠিত হতে লাগলো। কি ভয়ঙ্করভাবে সেসব লুণ্ঠন বা ধ্বংস করা হয়েছিল তার বর্ণনা পড়লে আমাদের চমকে উঠতে হয়।
দ্বাদশ শতকে পারমার রাজারা গুজরাটে সম্পদের লোভে বহু জৈন মন্দির লুণ্ঠন করেন। রমিলা থাপার মনে করেন যে, প্রতিটি মন্দির ধ্বংস বা বিলুপ্ত হলে জনপ্রিয়ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, মুসলিম ধ্বংসকারীদের জন্য তা হয়েছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, রাজানুগত্যে বঞ্চিত হয়ে বহু মন্দির অবলুপ্ত হয়েছে। ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশে যে কোনো স্থাপত্য নির্মাণকার্যের স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার রক্ষণাবেক্ষণের উপর। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শুধু বহু মন্দির নয়, বহু মসজিদও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।৮
তিনি দেখিয়েছেন, উনিশ শতকে বিশাখাপত্তনমের সিংহচলন মন্দিরটি ধ্বংস হয় রাজানুগত্য বঞ্চিত হয়ে ও প্রাকৃতিক কারণে। অথচ এই মন্দির ধ্বংসের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হয়।৯
রাজশক্তির বা শাসকদের ধর্মবিশ্বাস যা-ই থাক না কেন, শত্রুর জাগতিক ও ভাবাদর্শগত স্নায়ুকেন্দ্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় চিন্তার পরিবর্তে বাস্তব পরিস্থিতির পর্যালোচনাই তাদের প্রণোদিত করতো। সুতরাং যে সমস্ত ঐতিহাসিকেরা মাহমুদের কাজের মধ্যে পরধর্ম বিদ্বেষই আবিষ্কার করেন তাদের ভাবনা উদ্দেশ্যমূলক।
মাহমুদের সেনাবাহিনী গঠিত ছিল বেতনভোগী যুদ্ধবিদ্যায় শিক্ষিত সৈন্যদের নিয়ে যারা হিন্দু-মুসলমানদের সঙ্গে সমানভাবে যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত ছিল।১০
সুলতান মাহমুদের সেনাবাহিনীতে অমুসলমান খোক্কার উপজাতি লোক ও হিন্দুদের যোগদান প্রমাণ করে যে, সুলতান কট্টরপন্থী ছিলেন না। মাহমুদের সতেরো বার যুদ্ধাভিযানের মধ্যে কয়েকবার মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ পরিচালিত হয়। যেমন, তাঁর চতুর্থ অভিযান ১১০৬ সালে মুলতানের মুসলিম শাসক আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে এবং ১০১০ সালের অষ্টম অভিযানও আবুল ফতেহ দাউদের বিরুদ্ধে। মাহমুদ ভারতে কোনো স্থায়ী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি কেবল পাঞ্জাবকে তার সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে এমন কোনো নজির নেই সুলতান মাহমুদের আমলে। মাহমুদের শাসনামলে অমুসলিমদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল। বিজিত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে কোনো প্রকার বাধা ছিল না। তার ধর্মনীতি যে সহিষ্ণুতার উপর গড়ে উঠেছিল সে সম্পর্কে হেগ, এলফিনস্টোন প্রমুখ ঐতিহাসিক দ্বিমত পোষণ করেন না। বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য ছিল না। কয়েকজন হিন্দু রাজা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন সম্ভবত রাজনৈতিক কারণে।১১
কিছু লেখক মন্দির ধ্বংসের জন্য সুলতান মাহমুদকে অভিযুক্ত করে থাকেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, একমাত্র অভিযান বা যুদ্ধের সময়ই কিছু মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল। শান্তির সময় তিনি কখনও কোনো মন্দির ধ্বংস করেননি বা কোনো মন্দির তাঁর হস্তে অপবিত্র হয়নি।১২
মন্দিরগুলোতে ধর্মের নামে পুরোহিতদের দ্বারা সঞ্চিত স্বর্ণ-রৌপ্য ও অন্যান্য বহু মূল্যবান সম্পদ ছিল। আশ্বাসের ছলনায় ভুলিয়ে অসংখ্য সরল বিশ্বাসী জনসাধারণের কাছ থেকে মন্দিরের পুরোহিতেরা প্রচুর অর্থ রোজগার করছিল।১৩
তদানীন্তন সময়ে জলদস্যুরাও তাদের লুণ্ঠিত অর্থ সোমনাথ মন্দিরে গচ্ছিত রাখতো। ফলে সমুদ্র তীরবর্তী ওই মন্দিরগুলোই মূলত আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতো। এছাড়া হিন্দুদের এই ধর্মীয় স্থানগুলোতে প্রবেশ করা বড় দুঃসাধ্য ছিল বলে অনেক সময় স্থানীয় রাজাগণও নিরাপত্তার জন্য এই মন্দিরগুলোর মধ্যে প্রচুর ধনরত্ন সঞ্চয় করে রাখতেন। এভাবে সোমনাথ যখন মন্দিররূপী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তখন তা আর আক্রমণে কোনো বাধা থাকে না। এ বিষয়ে ড. ঈশ্বরী টোপা বলেন, “মাহমুদ ভারতের যে মন্দিরগুলো আক্রমণ করেছিলেন, তাতে বিপুল ও বর্ণনাতীত ধনরতেœ পরিপূর্ণ ছিল এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি ছিল রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল।”১৪
সুতরাং দেবমূর্তি ভেঙে ইসলাম প্রচার ও মন্দির অপবিত্র করার জন্য সুলতান মাহমুদ বারবার পাক-ভারত অভিযান করেছিলেন বলে সমালোচকগণ যে মত প্রকাশ করেছেন, ইতিহাসের বিচারে তা অসত্য।
মাহমুদের যে সেনাবাহিনী সোমনাথ মন্দির ধ্বংস করেছিল তাঁর ৫০ শতাংশ ছিল হিন্দু। ১২ জন সেনাধ্যক্ষ ছিল হিন্দু, এর মধ্যে ২ জন ব্রাহ্মণ।১৫
এদের মধ্যে তিলক রায় নামে একজন সেনাপতির নাম পাওয়া যায়। এরা সকলে সোমনাথ মন্দির আক্রমণে নিয়োজিত ছিল। এরা যেমন মুলতান আক্রমণ করে মসজিদ ধ্বংসে হাজির ছিল, তেমনি সোমনাথ মন্দির ধ্বংসেও অংশ নিয়েছিল। মাহমুদের এই বিশাল হিন্দুবাহিনী মধ্য এশিয়ায় অন্যান্য বহু যুদ্ধক্ষেত্রেও লড়াই করেছে।১৬
রাজনৈতিক লক্ষ্য
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল। হিন্দু রাজন্যবর্গ কর্তৃক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন, সুলতানের আনুগত্য প্রত্যাহার, শত্রুকে সাহায্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিশ্বাসঘাতকতা, ভারতীয় মিত্রদের উপর শক্ত প্রতিবেশীর হামলা এবং আশ্রিত ভারতীয় রাজাদের বিদ্রোহ ঘোষণার জন্যই সুলতান মাহমুদ বার বার পাক-ভারত অভিযান পরিচালনা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
সুরজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ধর্মস্থান ধ্বংস করা আর পরধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচারে বৈদিক আর্যরা খুবই তৎপর ছিল এবং ভারতবর্ষের প্রাচীনতর সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধ্বংসে তারা যতখানি সাফল্য লাভ করে তা পরবর্তী কোনো অভিযাত্রী বাহিনী করেনি। পরবর্তীকালেও বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস ও লুট করেছে হিন্দুরা। বৌদ্ধ ও জৈনদের উপর ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বীদের যে অত্যাচারের কাহিনি পাওয়া যাচ্ছে তার পরিমাণও নগণ্য নয়; পরবর্তীকালে অবশ্য হিন্দুরা অত্যাচারের ধারা পালটায়- শূলে হত্যা ও দৈহিক নির্যাতন না করে বহুতর পদ্ধতিতে অপমান ও মানসিক পীড়নের ধারা নেয় এবং নিষ্ঠুরতার দিক থেকে সেগুলোও অতুলনীয়। আর হিন্দুরাই হিন্দুদের ধর্মস্থান ধ্বংস বা লুট করছে এরকম দৃষ্টান্ত কাশ্মিরের হিন্দু রাজাদের কীর্তিকলাপেও প্রচুর।১৭
সুরজিৎ দাশগুপ্ত আরও বলেন, ভারতীয় বিদ্যাভবন প্রকাশিত ও রমেশচন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পাই যে মাহমুদ তথা গজনি প্রথমে জয়পাল বা পাঞ্জাব আক্রমণ করেননি, পাঞ্জাবের জয়পালই প্রথম আক্রমণ করেছিলেন, পরাজিত হয়ে সন্ধি করে স্বদেশে ফিরে আবার অন্য রাজাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে গজনি আক্রমণ করেন, আবার পরাস্ত হন, আবার সন্ধি করেন এবং আবার সন্ধিভঙ্গ করে গজনি অভিযান করেন। ইতিহাসের এই ঘটনাবলি সত্য না অসত্য তা ঐতিহাসিকরা আপন আপন মানসিকতা দিয়ে বিচার করেছেন।১৮
সাফল্যের রহস্য
সুলতান মাহমুদ ১০০০-১০২৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বার ভারত অভিযান পরিচালনা করেন ও প্রত্যেক বারেই বিজয়ী হন। এই সাফল্যের রহস্য কী? তালিকা করলে তা নিম্নরূপ দাঁড়ায়:
১. মাহমুদের অভিযানকালে উত্তর ভারত বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্যবোধ ছিল না। অপরদিকে মাহমুদের বাহিনী ছিল ঐক্যবদ্ধ। তাই অল্পসংখ্যায় হয়েও তারা অধিক সংখ্যক হিন্দু সেনার উপর বিজয় লাভ করে।
২. মাহমুদের বাহিনীতে আফগান-তুর্কি-পারসিক-ভারতীয় প্রভৃতি গোষ্ঠীর সেনা থাকলেও তাদের মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলাবোধ ছিল এবং মাহমুদের সুযোগ্য নেতৃত্ব তাদেরকে অপরাজেয় করে তুলেছিল।
৩. মাহমুদের অতুলনীয় সামরিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা, সেনাপতিত্ব তার বাহিনীর বিজয় লাভের সহায়ক হয়েছিল।
৪. মাহমুদের প্রশিক্ষিত দ্রুতগামী অশ্বারোহী বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণ ভারতীয়দের নিকট যথেষ্ট ভীতির সৃষ্টি করেছিল।
৫. মাহমুদের যুদ্ধরীতি ছিল সেযুগের তুলনায় অতি আধুনিক, আর হিন্দুগণ আধুনিক যুদ্ধ পদ্ধতি জানতো না। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ জয় করার অভিজ্ঞতা মুসলিম বাহিনীর ছিল। কিন্তু হিন্দুদের সে রকম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না।
৬. প্রত্যেকটি সামরিক অভিযানে মাহমুদ প্রচুর ধনসম্পদ লাভ করেছেন। এ সম্পদ দিয়ে তিনি সৈন্যদের সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন ও নতুন সৈন্য সংগ্রহের নিয়ামক হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
৭. নিজ দেশের অনুকূল পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় ভারতীয় হিন্দু সেনাগণ শত্রুপক্ষকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি। বলা যায় তাদের স্বদেশ প্রেমের যথেষ্ট অভাব ছিল।
৮. মাহমুদ তাঁর সাহসী, দুর্ধর্ষ ও উদ্যমী সেনাবাহিনীকে জেহাদী আদর্শে যুদ্ধমুখী করতে চেয়েছেন। ফলে সৈন্যগণ মরিয়া হয়ে উঠেছিল জয়ের জন্য। তাদের আগ্রাসনের কাছে ভারতীয় সৈন্যরা দাঁড়াতে পারেনি। সর্বোপরি মাহমুদের দুর্দমনীয় বাহিনী দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল সম্পূর্ণভাবে বাস্তববাদী। তারা ছিল ভীষণ উচ্চাকাক্সক্ষী।
৯. মাহমুদ নিজে বা তাঁর বাহিনীর কোনো সেনাপতি বা কমান্ডার লুটপাট করে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তোলার কোনো তথ্য ইতিহাস ঘেঁটে পাওয়া যায়নি। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার পর তা নিয়ম মোতাবেক সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিতরণ, জনগণের মধ্যে বণ্টন ও রাষ্ট্রীয় কল্যাণে ব্যবহৃত হতো।
১০. মন্দিরকে মসজিদে পরিণত করার যে অভিযোগ তাতে দেখা যায়, সোমনাথ, মথুরা, কনৌজ প্রভৃতি মন্দির কখনোই মসজিদে পরিণত হয়নি। যেগুলি হয়েছিল সেগুলি ছিল পরিত্যক্ত, জনমানবশূন্য এলাকায় অবস্থিত। ফলে সেগুলিকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের কিছু নমুনা পাওয়া যায়।
১১. সেনাবাহিনীর সদস্যদের রীতিমত উচ্চমানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। পুরো অভিযান-এলাকায় বিস্তৃত ছিল সুবিশাল গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক। এদের ছিল উচ্চমানের প্রশিক্ষণ ও পারস্পরিক সংযোগ ছিল খুবই মজবুত। অন্য প্রতিপক্ষের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক থাকলেও সেগুলি ছিল সীমিত ও দুর্বল।
১২. সেসময় মন্দিরগুলি ছিল কথায় কথায় নরবলি দেওয়ার আখড়া। কুমারী ও মুসলিম বালকদের ধরে হত্যা করে মূর্তির বেদিতে রক্ত মাখিয়ে দেওয়া হতো। এতে নাকি দেবতা প্রসন্ন হয়ে হিন্দু রাজার যুদ্ধবিজয়ে আশীর্বাদ করতো। ক্ষমতাবান পুরোহিতরা একে একটি সাধারণ রীতিতে পরিণত করে।
১৩. যুদ্ধে সৈনিক সংখ্যা ও যুদ্ধ-উপকরণের চেয়ে কৌশলকে গুরুত্ব প্রদান করা হতো। এ ছাড়াও সৈনিকদের নৈতিক ও আত্মিক মনোবল সতেজ রাখার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হতো।
তথ্যসূত্র
1 Kallie Szczepanski: Biography of Mahmud of Ghazni, First Sultan in History, July 03, 2019, www.thoughtco.com/mahmud-of-ghazni-195105.
2 Muhammad Nazim: The Life and Times of Sultan Mahmud of Ghazna, Cambridge University Press, London, 1931 AD.
৩ প্রাগুক্ত।
৪ আবদুল করিম: ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫, পৃ. ১৭।
৫ মনযুর আহমাদ: সিন্ধু থেকে বঙ্গ (ভারতীয় উপমহাদেশ: হাজার বছর মুসলিম শাসনের স্বর্ণালি ইতিহাস-প্রথম খণ্ড), চেতনা প্রকাশনী, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০২১, পৃ. ২৫৫।
৬ বাংলা বিশ^কোষ (চতুর্থ খণ্ড), প্রধান সম্পাদক খান বাহাদুর আবদুল হাকিম, মুক্তধারা, ঢাকা, দ্বিতীয় প্রকাশ, এপ্রিল, ১৯৮৯।
৭ আমিনুল ইসলাম: সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব),
https://nobojagaran.com/sultan-mahmuder-bharat-obhijan-1/
৮ প্রাগুক্ত।
৯ রমিলা থাপার, কমিউনালিজম অ্যান্ড হিস্টরিক্যাল লিগ্যাসি: সাম ফ্যাক্টস; সোস্যাল সায়েন্টিস্ট, জুন-জুলাই, ১৯৯০, পৃ. ১৩।
১০ মুহম্মদ হাবিব, সুলতান মাহমুদ অব গজনি, দিল্লি, ১৯৬৭, পৃ. ৮১।
১১ আমিনুল ইসলাম: প্রাগুক্ত।
১২ মুহাম্মদ ইমান-উল-হক, ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস, জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৪, পৃ. ৪০।
১৩ মানবেন্দ্রনাথ রায়,দ্য হিস্টরিক্যাল রোল অফ ইসলাম, বাংলা অনুবাদ-অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল হাই, রেনেসাঁস, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৬২।
১৪ ঈশ্বরী টোপা, পলিটিক্স ইন প্রি-মুঘল টাইমস, ১৯৭৬, পুনর্মুদ্রণ: এ কে এম আলিম, পৃ. ২৬।
১৫ আসগর আলি ইঞ্জিনিয়ার, পড়তে না দেওয়া ইতিহাস, বিপ্লবী জনমত, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সংখ্যা, ২০০২, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর।
১৬ ঐতিহাসিক ডি ডি কোশাম্বী আলবেরুনীর ভারত বিবরণী হতে লিখেছেন, কন্নড়-এর হিন্দু ভাড়াটে সৈন্যরা ভারতের বাইরে গজনির মাহমুদের সেনাবাহিনীতে তাদের স্বধর্মী সেনাপতিদের অধীনে কাজ করেছে। (ডি ডি কোশাম্বী, পৃ. ৩০৯-১০। উদ্ধৃত: অসিতকুমার সেন, তুর্কি ও আফগান যুগে ভারত, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ২য় মুদ্রণ, ২০১১, পৃ. ১৬)।
১৭ সুরজিৎ দাশগুপ্ত: ভারত বর্ষ ও ইসলাম, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৯, পৃ. ২৫৭।
১৮ প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৪০।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গ্রন্থপ্রণেতা
আপনার মন্তব্য লিখুন