post

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্কটে পাকিস্তান

এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান

১৪ মে ২০২৩

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্কটে ভুগছে। শুরু থেকেই সেখানে যে রাজনৈতিক সঙ্কট বা ব্যর্থতা ছিল, তা এখনো বিদ্যমান। বলা যায়, পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নতুন কিছু নয়। দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থিরতা, সহিংসতা তথা নানাবিধ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা পাকিস্তানের ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। আসলে রাজনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা খুবই দোদুল্যমান। একদিকে সামনে নির্বাচন, যে নির্বাচনটি মুসলিম লীগ করতে চাচ্ছে না, কারণ পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন এ নির্বাচন হোক পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পন্ন করার পর। অন্য দিকে পার্লামেন্টের মেয়াদ অনুযায়ী পাকিস্তানের নির্বাচন অক্টোবরে হওয়ার কথা। ইমরান খান আর তার দল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি চাচ্ছে নির্বাচনটি পার্লামেন্টের মেয়াদ অনুযায়ী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে মতবিরোধ, মতপার্থক্য ও সহিংসতা। রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানের সামনে বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। প্রথমত, কবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? দ্বিতীয়ত, ইমরান খানকে কত দিন রাজনীতির বাইরে রাখা যাবে? এমনকি পিটিআইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 

এ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায়, দেশটিতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নেই। দেশটিকে উদ্ধার করার জন্য চীন ও পশ্চিমা দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করছে; বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও কাজ করছে। এ অবস্থার মাঝে পাকিস্তানের রাজনীতি এমন এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা দেশটিকে খুবই বিপজ্জনক ও অত্যন্ত সঙ্কটময় অবস্থায় নিয়ে গেছে। বিশেষ করে গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানকে আধা-সামরিক বাহিনী পাক রেঞ্জার্স যখন গ্রেফতার করে তখন পাকিস্তানের ইতিহাসে বলা যায়, এই প্রথম কোনো সামরিক স্থাপনার ওপর আঘাত হানা হয় এবং বড় ধরনের সহিংসতা তৈরি হয়। পরে ইমরান খানকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানের বিভিন্ন পক্ষ এখন মুখোমুখি। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিচার বিভাগ ইমরান খানের পক্ষে দাঁড়ানোর পর দেশটির রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে একটি নতুন প্রেক্ষিত। তাকে যেভাবে মোকাবিলা করছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বা ক্ষমতাসীন শক্তি, তাদের নেওয়া সেই ব্যবস্থাগুলোকে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে না বিচার বিভাগ। ইমরান খানকে গ্রেফতার করার পর বিচার বিভাগের আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়, যে রায় দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি। যে মামলাগুলো তার বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা এবং মামলার যে প্রক্রিয়া, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এ রায়। বলা যায়, আপাতদৃষ্টিতে ইমরান খানের জন্য এটি ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিকভাবে তার যে অবদান, তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ভূমিকা রাখছে। তবে লক্ষ করা যাচ্ছে, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইমরান খানের দল যেমন একটি শক্ত অবস্থানে রয়েছে, একইভাবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীও রয়েছে শক্ত অবস্থানে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং শাসক দল হিসেবে যারা বলা যায় পরস্পরের বড় ধরনের বৈরীপক্ষ ছিল, তারা এখন একসঙ্গে একটি সরকার পরিচালনা করছে। এ ধরনের একটি জটিল হিসাব-নিকাশের মধ্যে পাকিস্তানের রাজনীতি এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। 

ইমরান খান, যিনি ক্রিকেটার থেকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবং পাকিস্তানে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার জন্য অনেক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করেছেন; তিনি যখন ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার রাজনৈতিক ধারাকেও সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখা হয়েছিল। বিশেষ করে পাকিস্তানের মুসলিম লীগ ও পিপলস পার্টি তার উত্থানকে সামরিক শাসকদের প্রভাব বৃদ্ধিরই অংশ হিসেবে দেখা শুরু করে। বলা হয়, ইমরান খান ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে একসময় যে সখ্য ছিল, এখন তা এসে ঠেকেছে তলানিতে, শুধুই তলানিতেই নয়, বরং তারা এখন দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি অবস্থানে।

পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে সম্পর্ক, তা দেশটির রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বাহিনী বরাবরই দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সুদীর্ঘ সময় দেশটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে সামরিক শাসকদের দ্বারা।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু হয় ১৯৫৮ সালে। তবে এর আগে ১৯৫১ সাল থেকেই অসংখ্য অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল পাকিস্তানে। বস্তুত ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে পাকিস্তান কয়েক দশক সামরিক শাসনের অধীনে কাটিয়েছে (১৯৫৮-১৯৭১, ১৯৭৭-১৯৮৮, ১৯৯৯-২০০৮)। বাস্তবে ১৯৪৭ সাল থেকে তার প্রায় ৭৫ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রার অর্ধেকের বেশি সময়জুড়ে সামরিক বাহিনী দেশের ক্ষমতায় ছিল। পাকিস্তান তিনটি পৃথক সামরিক অভ্যুত্থানের অধীনে চারজন ভিন্ন ভিন্ন সামরিক শাসক দ্বারা শাসিত হয়েছে। এর মধ্যে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউল হক ৪ জুলাই, ১৯৭৭-এর মধ্যরাতে ‘অপারেশন ফেয়ার প্লে’ মঞ্চস্থ করেছিলেন, যা ছিল মূলত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান। জেনারেল জিয়াউল হক ১৯৮৮ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের আগ পর্যন্ত যুগপৎ সেনাপ্রধান ও সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর গোলাম ইসহাক খান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইসহাক খানের হাতে অপরিসীম ও অনিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ছিল এবং তিনি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি সেনা সমর্থন নিয়ে ১৯৯০ সালে বেনজির ভুট্টো এবং ১৯৯৩ সালে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেছিলেন, যদিও পরবর্তীতে তিনি নিজেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯৯ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এক সফরে শ্রীলঙ্কায় যান। এ সময় শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ফিরে আসার আগেই জেনারেল মোশাররফকে বরখাস্ত করার এবং তাঁর বিমানটিকে পাকিস্তানে অবতরণ করতে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। এ তথ্য ফাঁস হওয়ায় জেনারেল মোশাররফ ও তার অনুগত সিনিয়র অফিসাররা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়া নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর মন্ত্রীদের গ্রেফতার করেন। আরও পরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শওকত আজিজের প্রস্থান, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মুহম্মদ চৌধুরীকে ৯ মার্চ, ২০০৭ তারিখে ‘অকার্যকর প্রধান বিচারপতি’ বানানো এবং এ বিষয়ে পাকিস্তানের সংবিধানের দু’টি প্রধান ধারা সংশোধন জেনারেল মোশাররফের অবস্থান দুর্বল করে ফেলে। এ সময় আইনজীবীদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী গণবিক্ষোভ ও ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়, যা আইনজীবী আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। অবশেষে লং মার্চের মাধ্যমে এ আন্দোলন শেষ হয়। ২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে জেনারেল মোশাররফ দীর্ঘদিনের একনায়কত্ব ছেড়ে পদত্যাগ করেন এবং স্ব-আরোপিত নির্বাসনে লন্ডনে চলে যান।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে পাকিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে সামরিক বাহিনী একটি প্রভাবশালী সংস্থা যা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের মূলনীতি লঙ্ঘন করে এবং সর্বদা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টাকে ঐতিহ্যগতভাবে লালন করে। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী দুর্নীতি দমন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে বেসামরিক সরকারকে বারবার উৎখাত করেছে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাই সশস্ত্র বাহিনীর কাজ; সাধারণভাবে গণতান্ত্রিক সব রাষ্ট্রেই তা-ই হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানই বোধ হয় একমাত্র রাষ্ট্র, যেখানে রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান নির্বাচনী ব্যবস্থা থাকার পরও দশকের পর দশক ধরে রাষ্ট্র পরিচালনায় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ চলছে। সম্প্রতি রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাসদর দপ্তরের মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের হামলা। পাকিস্তানের বিক্ষোভ-সংগ্রামের ইতিহাসে এমনটি এর আগে ঘটেনি। এ কারণে বিক্ষোভটিকে নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকেরা। পাকিস্তানে মানুষের মধ্যে ‘সেনাবিরোধী’ যে মনোভাব দেখা যাচ্ছে, তা তৈরিতে ইমরান খানের কোনো ভূমিকা আছে কি? বিশ্লেষকেরা বলছেন, আছে। গত বছর আস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান সেনাবিরোধী বক্তব্য দিতে শুরু করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিকে যে তিনি সেনাবাহিনীর প্রভাবমুক্ত করতে চান তাঁর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হতে থাকে। এমনকি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের কথাও তোলেন তিনি। তিনি জোরালো স্বরেই বলতে থাকেন, পশ্চিমের প্রভুরা পাকিস্তানের রাজনীতি ও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করবে, তা পাকিস্তানের মানুষের মেনে নেওয়া উচিত নয়। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলেছিলেন, ‘আমি সেনাপ্রধানকে (তৎকালীন সেনাপ্রধান বাজওয়া) বিশ্বাস করতাম। কিন্তু পরে দেখলাম, তিনি জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করেন না। তিনি দুর্নীতিকে খারাপ মনে করেন না। এমনকি আইনের শাসনেও বিশ্বাস করেন না। এমন সেনাবাহিনী নিয়ে আমরা কী করব?’

খান সাহেবের এসব বক্তব্য পিটিআই সমর্থকদের তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে উসকে দিয়েছে। তাদের মন ও মগজে সেনাবিরোধিতা প্রকটভাবে ঢুকে গেছে। ফলে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা বিপুল তরঙ্গের মতো ফুঁসে উঠেছে। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে চলমান বিক্ষোভে। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে সে দেশের সেনাবাহিনীরযে হাত ছিল, তা এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে মতপার্থক্যের ফলে ইমরানের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব বেড়েছে। ফলে ইমরান খান ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। 

ইমরান খানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর বিরোধের মাঝেই অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরেও দ্বিধা বা বিভক্তি থাকতে পারে- যার একটি অংশ মনে করে, সামরিক বাহিনী ইমরান খানের দলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। অপর পক্ষ মনে করে, চলমান অবস্থা আরও রাজনৈতিক অস্থিরতা বয়ে আনতে পারে। তাই দেখা যাচ্ছে, ইমরান খানকে মোকাবিলার বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও সামরিক বাহিনীর জন্য। সাম্প্রতিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মুসলিম লীগ ও পিপলস পার্টির সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কখনোই সুসম্পর্ক ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় আসেন। এর ফলে সৃষ্ট দূরত্ব পরবর্তীকালে আরও বাড়ে। সেই দলটিই এখন ক্ষমতায় আছে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরিণতির কারণে পিপিপিও অসন্তুষ্ট সামরিক বাহিনীর র্কমকাণ্ডে। তাই যে প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে তা হলো, সামরিক বাহিনী কার পক্ষে কাজ করবে ইমরান খান, বিলাওয়াল ভুট্টো, নাকি শাহবাজ শরিফের পক্ষে? বলাই বাহুল্য, সামরিক বাহিনীর হাতেও খুব বেশি বিকল্প নেই। পাকিস্তানের বিচার বিভাগ নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে হবে। কারণ, এ রকম একটি রাষ্ট্র, যেখানে একদিকে অর্থনীতি চরমভাবে পর্যুদস্ত, রাজনীতি চরম সঙ্কটাপন্ন, সামাজিকও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিও ভয়াবহ, ক্রমাগত জঙ্গি হামলা চলছে, বিভিন্ন রাজ্যে বা জাতিগোষ্ঠীর মাঝে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, যেমন বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত বেলুচরা; অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশটি এক সঙ্কটময় অবস্থার সম্মুখীন একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ, অপরদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট। সব মিলে পাকিস্তানের জন্য এক অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে।

এ অবস্থায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট কোনদিকে যাচ্ছে, তা এক বড় প্রশ্ন। ইমরান খানের দল ব্যাপক নিপীড়ন ও চাপের মুখে আছে। ইমরান খান ও তার স্ত্রীর বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পিটিআই-এর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সাধারণ কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। পিটিআইকে ভাঙনের চেষ্টাও চলছে। ফলে সহিংসতা, সংঘাত ও শক্তি প্রয়োগের নীতিই প্রাধান্য পাচ্ছে সেখানে। বস্তুত সমগ্র পাকিস্তানকে গ্রাস করেছে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। অন্যদিকে পাকিস্তানের জনগণ ইমরান খানকেই হয়তো তাদের আশার জায়গা হিসেবে বেছে নেবে। সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগ দেশটির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হিসেবে কিভাবে ইমরান খানকে দেখতে চায়, তার ওপর নির্ভর করছে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথপরিক্রমা।

লেখক : প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির